somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(গল্প) কলমী সিটি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্ব প্ন বি লা স
কলমী সিটি


― ক'টা বাজে? কবির গলায় টাই ঝোলাতে ঝোলাতে মৌরিকে জিজ্ঞেস করে।
― সাড়ে আটটা।
― আমি বের হচ্ছি, খাবার সময় নেই।
― না না, না খেয়ে তুমি বের হবে আর তুমি না খেয়ে আছ ভাবতে ভাবতে আমি ছাত্রীদের ক্লাসই ঠিকমত নিতে পারবোনা।

মৌরি আহমেদ। কলমী ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের লেকচারার। মৌরির স্বামী কবির আহমেদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ইউনিভার্সিটির চাকরীটা পেয়েই দক্ষিন সুলিজ আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটা প্লট কিনেছিল মৌরি। সেখানে অত্যাধুনিক তিনতলার বাড়ী করা হয়েছে। দেখার মত বাড়ী। আশপাশের সব বিল্ডিং গুলোই ছয়তলা কিংবা দশতলার। বাসা থেকে বের হয়ে মার্সেডিসে করেই প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যায় মৌরি। কবির সব সময় মার্সেডিসের কথা ভাবেনা। শহরে আধুনিকতম এক্সপ্রেস সার্ভিস সিএনজি এসি বাস আছে। কবির এসি বাসে করেই প্রতিদিন অফিসে যাতায়ত করে। আজও তাই করলো। বাস মাত্র দুই মিনিটে বাবুরহাট এসে পৌছে। শহর কত উন্নত হয়েছে। রাস্তা কত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, কাউকে এক টুকরো কাগজ পর্যন্ত রাস্তায় ফেলতে দেয়া হয়না। কলমী সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর এই শহরটা বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহরে পরিণত হয়েছে। শহরে মানুষের কোন অভাব অনটন নাই। কেউ বসে বসে খায়না, সবাই কলমীর উন্নয়নে ঝাপিয়ে পড়েছে।
বাবুর হাট থেকে কিছু দূর আসতেই বাসটা বন্ধ হয়ে গেল, ড্রাইভার করুন মুখে যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে বলল, গ্যাস ফুরাইয়া গেছে। বুঝলেন, মানুষের যেমন খাবার দরকার গাড়ীরও তেমন খাবার দরকার, তয় গাড়ীর খাবার হইলগিয়া গ্যাস। সাথে সাথে সিটি কর্পোরেশনের সিএনজি রিফিউলিং গাড়ী এসে গ্যাস ভরে দিল। গাড়ী মুহুর্তে আনজুর হাট এসে পৌছল।
কবির গাড়ী থেকে নেমে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নটা বাজতে দশ মিনিট বাকী। অফিসে সবাইকে পৌনে নটায় পৌছতে হয়, কবির আহমেদের পাঁচ মিনিট লেট হয়ে গেল। এখানে কেউই অফিসে সামান্য তম গাফলতী করেনা। অবৈধ বলতে কোন কিছুই কলমী শহরে নেই। অফিসে সবাই ঠিক ঠিক ডিউটি করে। সময় মত বিনা উপরিতেই ফাইল এ টেবিল ও টেবিল যায়। নেই কোন অপরাদ। কবির অফিসে গিয়ে পৌছল।

.২.
কলমী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর আনজুর হাট থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে উত্তর মঙ্গল উপজেলায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে একশো বিমান ওঠানামা করে। জনাব মাহতাব উদ্দিন সাহেব কলমী এয়ার লাইন্সের ‘কে এ ফিফটি টু’ বিমান থেকে নেমে আসলেন। বিমান বন্দর থেকে বেড়িয়েই ভাবলেন একটা সামান্য ঝামেলায় তিন মাসের বয়স্ক ভাতা তুলতে পারেননি। এ শহরে পঞ্চান্ন বছর পূর্ন হলেই অবসর গ্রহন করতে হয়। তখন থেকে পেনশনের সাথে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। তার বয়স্ক ভাতার ফাইলটা ইউএনও কবির সাহেবের অফিসে। মাহতাব সাহেব কলমী জেলার কোতয়ালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে হাজীর হলেন। কবির আহমেদ অতি উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, আরে মাহতাব সাহেব, আপনি নাকি সিংগাপুর গিয়েছেন? আপনার বয়স্ক ভাতাতো সেই কবেই ব্যাংকে পৌছে গেছে। মাহতাব সাহেব বললেন, আর বলবেন না। হার্টে একটু সমস্যা মনে হলো। মায়াপাতা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হস্পিটালে দেখানোর পর প্রায় ভালোই হয়ে গিয়েছিলাম। তবুও ভাবলাম একটু বিদেশ থেকে দেখিয়ে আসি তাই গেলাম। বড় দুঃখের কথা তারা আমায় চিকিৎসা দিতে রাজী হলেন না। বলল, বিশ্বে মায়াপাতা হাসপাতালই সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। তারাও জটিল রোগী মায়াপাতা হাসপাতালেই পাঠায়। তবে একটি কাজ করে আসছি। আমার ফার্ম থেকে কিছু কৃষি পণ্য সিংগাপুর এক্সপোর্ট করার চুক্তি করে আসছি। সপ্তাহে সপ্তাহে শুধু বকশী বন্দর থেকে সিংগাপুরের জাহাজে তুলে দিলেই হবে।
এসময় কবিরের মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। মৌরী রিং করছে। কবির রিসিভ করার জন্য ওকে বাটনে টিপ দিল। না মোবাইল রিসিভ হচ্ছে না। রিং বেজেই চলছে। কবির ওকে বাটন টিপতে টিপতে ঘামিয়ে গেল।

.৩.
মোবাইলের ঢিং ঢং শব্দে কবিরের ঘুম ভাঙ্গে। এতক্ষন স্বপ্নই দেখছিল কবির। ঢাকাতে তার ফুফার বাসায় আজ পনেরদিন হলো এসেছে। একটা চাকরী দরকার কবিরের। বি সি এস পরীক্ষা দিতে দিতে বয়স প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলো কবিরের ফুফাতো ভাই কার সাথে যেন মোবাইলে কথা বলছে। ঢিং ঢং শব্দ ওর মোবাইলই বাজতেছিল।


===== সমাপ্ত =======

মিজান রহমান শ্রেষ্ঠ রচিত গল্পটি কলমীকণ্ঠ ২০০৪ সালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×