গতরে বিষ হইছে। এ বেলা রিক্সা চালাইতে মন লই না।গত রাইতে বৃষ্টিতে ভিইজ্যা এই দশা। কাশেম আবারও হাক দেয় -
: কই গেলা।
মাগীর কোন খবর নাই। মেলা বাড় বাড়ছে। বিয়ার প্রত্তম প্রত্তম সাত চড়ে রা করত না। অহন কিছু কইলেই ঠাঠা রোদ্দুরেই বাজ বাইজ্জা ওঠে। কখা মাটিতে পড়নের আগেই জিহ্বায় আবানি মুখের কুবানি কথা। বর্ষার এই সময়টা পাড় করন খুব কষ্টের। একটুতেই হাটু সমান পানি। যদিও ইনকাম খারাপ না। ১০ চাকার ভাড়া অনায়াসে ২০ টাকা পাওন যায়। ভদ্দর নোকদের জিম্মি কইরা কাশেম এক ধরনের স্বগীর্য় আনন্দ লাভ করে। শ'য়ে শ'য়ে লোক হাটু সমান পানিতে ভিইজ্যা বাড়ী ফিরতেছে এই দৃশ্য শুরু হইলেই কাশেমের মনে কেন জানি একটা প্রশান্তি বয়ে যায়। চির বন্চিত যারা কইরা রাখছে বিধাতার কৃপায় তাদের সাময়িক শাস্তি দেইখ্যা নিজেকে স্বান্তনা। এক খান বিড়ি মুখে দিয়া সিটের উপর পা তুইল্যা বসে থাকে মর্জি মত প্যাসেনজ্যারের আশায়। কত জন কত কাকুতি লইয়া আশে। "পাচঁ টাকা বাড়ায় দিমু।" "ভাই একটু চলেন না"। কত কিছিমির যে রং ঢং এর কথা। কাশেম যেন কোন কথায় শুনতে পাইনি এই ভঙ্গিতে বইস্যা থাকে রিকশায়। মাঝে মাঝে যে ফল ভাল হইনা তাতো না। এই গত রাইতের কথা। লালটু চেহারার এক পোলা জিগাইলো-
: এই রিকশা যাইবা
: না যামু না
: যাইবি না তা এইখ্যানে বইস্যা আছিস ক্যান।
: সরকারী রাস্তায় বইছি। জিগান লাগবনি কাউরে
ভদ্দরনোকগো দু'চার খান পুলাপান খুব ত্যান্দার। কথা নাই বার্তা নাই গায়ে হাত তুইল্যা দেয়। হাটুর বয়সী পুলাপান ইচ্ছা করে এক চড়ে সব দাত ফালাই দিতে। গ্রাম হইলে ফেলাইতো। আহা গ্রাম। মনে পইড়া যায়।বর্ষার জলে মাছ ধরনের লাই দল বেধেঁ বেড়িয়ে পড়া। সপসপ বাতাসের শব্দ ছাপিয়ে-গ্যাঁ গ্যাঁ ব্যাঙের স্বর।অনেকক্ষন হইছে কলির মা'র কোন খবর নাই।কাশেমের মেজাজ তিরিক্ষি। এইবার মেয়েকে ডাকে-
:কলি, এ কলি, ওই কলি, কলি কলি
: বাজান চিললাও ক্যা।
মাইয়্যাটাও মায়ের লগে থাইক্যা থাইক্যা টস টস কথা শিখছে। রাগ সামাল দেয় কাশেম।
: এই ওই মাতারি কই মরছে রে।
: মা'য়ে ঝগড়াত বইছে। অহন আইবো না।
: ক্যা কি হইছে? কোন বান্দির পো কি কইছে তোর মা'রে
: হালিমের মা'য়ের লগে বাধঁছে। হেতে মা'রে চোর কইছে।
: চোর কইব ক্যা। কাম করে দেইখ্যা কিইন্যা ফেলাইছে নাকি।
: তুমি যাইয়া জিগাও। আমার টাইম নাই। মালা লইয়া গেলাম আমি।
মেয়ে বেড়িয়ে যাই। কাশেম রে বিছনা ছেড়ে উঠতেই হয়। চাইছিল কলির মা'রে দিয়া গতর খান একটু টিপাইবো তা আর হয়ে ওঠে না।শার্ট খান গা'য়ে দিয়া কল পাড়ের দিকে যায়। বেলা ৮টা বাজে। অহনও লাইন। মেজাজ খারাপের সীমা থাকে। সেই সীমা পার হয়ে যাওয়ায় গেদুঁর বাপের সাথে আড্ডায় বসে পড়ে -
: আমাগো হারুন মিঞা তো জব্বর খেইল দেখ্যাইলো।
: হ ঠিকই কইছ। এই বয়সে.....
: বিয়ার আবার বয়স কিগো কাশেম
: না একটা বিবেচনা আছে না
: তুমিতো এক কলির মা'রে লইয়্যায় পইড়া আছো। তুমি কি বুঝবা
: বেশী বুঝনোর কাম নাই। যে রাম আছি ভালাই আছি।
: রাগ হইলা নি
: তোমার উপর আবার রাগ কি?
এ সময় কলি'র মা ছুটে ফুটে আসে।
: তুমি এইখানে
: ক্যা কি হইছে
: কি হইনায় এইডা কও
: বান্দি মাগি আমারে কই আমি নাকি হের টাকা চুরি করছি
: কি হইছে খৃইল্যা কইবা তো
: কি কমু। কামা করি গতর বেচঁছি তাই বইল্যা যা ইচ্ছা তাই কইবো। ফকিরনির ঘরের ফকিরনি। মুখ জুতাই দিয়ে আসতি পালি পরান জুড়াত।
: আচ্ছা হইছে। চল এহন যায়
: কি করম মরদ বেটা গো
: ক্যা
: তোমার বউরে মানুষ যাচ্চে তাই কলো আর তুমি হুইনাও চুপ আছ
: তা আমি কি কমু।
: হ। পার শুধু ঘরে মরদগিরি দেখাতি। একখ্যান ভোদাই জুটছে আমার কপালে।
: আহা ঘরে চল দিনি। মাইনষে শুনতেছে।
: হুনুক। মাইনষের কি? আমাগো ভাত দেয় না কাপড় দেই। ......... বাচ্চা আমারে কই চোর। ওর ........আমার নাম খাদোজা না।
: রাস্তার মধ্যে এগুলান কি শুরু করছ। থামবা
কাশেম বুঝাই শুনায় বউ ঘরে নিয়ে আসে। বেয়াড়া মেঘেরা কোইথাইকা যেন ঠিক তখনি জোড়ো হয়। মূহর্তেই কালা মেঘ এ ছাইয়া যায় আকাশ।আজ আর কিছুতেই বেরতে ইচ্ছা করছে না। খোদেজা'কে নিয়ে বহুদিন পড়ে দিনের বেলাতেই আদি অকৃত্রিম ভালবাসায় মেতে ওঠে কাশেম ।
....................................................................................................................
কলি'র দিনটা খারাপ। আকাশে মেঘ জমেছে। একটাও ফুলের মালা বেচা হয় নি। বৃষ্টি হলে কেউ মালা কিনে না। জানলার গ্লাস না নামাইলে মালা কিনব কেমনে। বাসায় ফিরার রাস্তা ধরে। পথে হারুনের সাথে দেখা। হারুনের লগে আরও দুই জন আছে। ভদ্রলোকের পোলাদের মত লাগে। হারুনরে কলির ভালই লাগে। হেই ছোট বেলা থেইক্যা আদর করে কলি'রে। প্রথ্থম প্রত্থম ভয় লাগত। হারুনের মা যদি দেইখ্যা ফেলায়। এহন আর লাগে না। তাছাড়া হের বাড়ীতে কেউ থাকে না। তই ঘটনা কেউ জানে না। হারুন সবজী বাজারে মস্তানি করে । ইনকাম খারাপ না। কলিরে বিয়া করব বইল্যা কথা দিছে। তই আইজক্যা হারুনের মতিগতি ঠিক সুবিধার ঠেকে না কলি'র।
: চল।
: কই?
: কথা কস কেন। যাইতে কইছি যাইবি?
: তা কইবা না।
: না
: তোমার লগে হেরা কারা
: তা তোর দরকার কি?
কলি অনিচ্ছা সত্তেও হারুনের সাথে এগিয়ে চলে। কোন এক অজানা আশঙ্কায় বুক কেপেঁ ওঠে। আশঙ্কা যখন সত্যি হয় বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ছোট্ট শরিরে তিন জনের ধকল সইতে পারে না। দম বেরিয়ে যায়। টাকার অংকটা একটু বেশীই দাবী করে হারুন। অবস্থা বেগতিক দেখে দু বন্ধু আর কথা বাড়াই না। হারুন যত সাহসীই হোক কিছুটা ভয় পেয়েছে। কলিটা মইরা যাবো এইটা ভাবে নাই। মেয়েটার প্রতি কোথায় যেন একটু প্রেম প্রেম ভাব ছিল। খারাপ লাগাকে প্রশয় দেয়া যাবে না।অনেক কাজ। জীবনে টাকার গুরত্বটা এই উনিষেই ভালই রপ্ত করেছে সে।
....................................................................................................................
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না কাশেম। তার আদরের কলি। নিথর দেহ। কোথায় না খোজঁ করেনি এ তক্ষন। রিক্সা চালাইতে চালাইতে পা ফুইল্যা গেছে। অহন পুলিশে খবর দিছে। লাশ দেখে কাশেমের চোখে পানি আসে না। চোখ ঠিকরে মনি বেরিয়ে আসতে চাই শুধু। কেন জানি এক অনার্থক ভাবনা বারেবার- " এ লাশ তার মেয়ের না" । হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর পাতা থেকে আরেকটি দিন।