'কুম্ভিলক' শব্দটি আমরা ব্যবহার করি কম। কিন্তু এর সমার্থক শব্দগুলো প্রায়শঃই ব্যবহার করি। কুম্ভিলক অর্থ চোর, তস্কর ইত্যাদি, যে অপরের রচনা হতে চুরি করে নিজের নামে চালায়। ইদানিংকালে, ফেসবুকীয় বা সোশ্যাল মিডিয়ার কাব্য-সাহিত্যজগতে এই শব্দটি ব্যাপক চাউর হয়েছে। কবিতা সৃষ্টিতে কুম্ভিলকবৃত্তি। অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, ফেসবুকে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কবিতা চুরি করে নিয়ে, কেউ কেউ নিজেকে কবি পরিচয় দিচ্ছে। তাদেরকে সহজ ভাষায় বলা হয়- কবিতা চোর। হয়তোবা কেউ কেউ এহেন চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে কবি-তকমা লাভ করেছেন বটে; এবং বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন থেকে কবির কুলচিহ্ন (Crest) বগলদাবা করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করছেন।
সেই সকল কবিগণ তাদের কৃতকর্মকে জায়েজ করার নিমিত্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে টেনে আনেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নাকি গানের সুর ও কবিতার ভাবনা চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জনপূর্বক আমাদেরকে দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ বলেন, চিলির কবি পাবলো নেরুদার কবিতা In My Sky at Twilight কবিতার স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা- "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা" গীতি কবিতায়। "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"-এর সুর ডাক বিভাগের কর্মচারী গগন চন্দ্র দাস তথা গগন হরকরা নামের লোকসংগীত শিল্পীর সাথে জড়িত।
অর্থাৎ কুম্ভিলকবৃত্তির চর্চা যশঃবানগণও করেছেন। এরকম প্রশ্ন হয়তোবা কবি রবীন্দ্রনাথের কাছেও উঁকিঝুঁকি মেরেছিল। তাই, কবি নিজেই এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'অনুকরণ হইলো চুরি; স্বীকরণ চুরি নয়। মানুষের সমস্ত বড় বড় সভ্যতা এই স্বীকরণ শক্তির প্রতিভাতেই মাহাত্ম্য লাভ করিয়াছে'। তাঁর মতে, 'যেটুকু লইলে বাকিটুকুর সহিত বেখাপ হয় না; তাহাকে বলে, গ্রহণ করা; যেটুকু লইলে বাকিটুকু সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাকে বলে অনুকরণ করা'।
মোদ্দাকথা, কোন কবি অন্যের লেখার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বীয় সৃষ্টিকর্মে প্রতিভাত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে, কুম্ভিলকবৃত্তির মাধ্যমে কিছুদিন কবি হিসেবে নিজের পরিচিতি ধরে রাখা যায়; কিন্তু দীর্ঘদিন নয়।
২৩/০৫/২০২৪
মিরপুর, ঢাকা।
ছবি - নেট
১. ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৬ ০