...
রিক্সা আবার সিপাহীপাড়া চৌরাস্তায় গিয়ে অন্য পথ ধরে চলতে লাগল বজ্রযোগিনীর দিকে। চলতে লাগলাম সবুজের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে।
পথের মাঝে পড়ল বেশ পুরোনো একটি বাড়ি। আশেপাশে একটু হেটে দেখলাম, কাউকে পেলাম না। তাই আবার ব্যাক টু দ্যা রিক্সা।
কিছুদুর গিয়ে আরেকটি বাড়ির ধ্বংসস্তুপ দেখতে পেলাম। একজনের কাছে জানতে চাইলে বলল একসময় এটা পোস্ট অফিস হিসেবে ব্যবহার হত।
রাস্তার দু'পাশে শাকক্ষেত, পুকুর .....।
এবার এলাম বজ্রযোগিনীর পন্ডিতের ভিটায়। প্রধান সড়ক থেকে ছোট একটি রাস্তা ঢুকে পড়েছে গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে, সেটা দিয়ে কিছুদুর যেতেই দেখা গেল অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান। চীনের বাড়িঘরের মত আকৃতি দেয়া একটি মনোরম জায়গা। জায়গাটিকে চায়না সরকারের সহায়তায় অনেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও এলাকার লোকজনের অবহেলায় থেকে যে অবস্থা হয়েছে, কয়েক বছর পর সেই সৌন্দর্য আর থাকবেনা। ভিতরে সর্বদাই গরু চড়ে, লম্বা সিমেন্টের বাধানো পথে শুকানো হচ্ছে ভুষি, কৃত্তিমভাবে পাথর বাঁধানো কুয়ার বিভিন্নস্থান থেকে পাথর সরিয়ে ফেলা হয়েছে, দেয়ালের রং উঠিয়ে ফেলা হয়েছে - সোজা কথায় নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ওখান থেকে বের হয়ে রিক্সায় ফিরে এলাম সিপাহীপাড়া চৌরাস্তায়। খাওয়ার জন্য হোটেল খুজলাম, কিন্তু কোন ভাল হোটেল পেলাম না। আমাদের প্লান ছিল ওখান থেকে লৌহজং উপজেলায় পদ্মা রিসোর্টে যাব। দু'তিনজনকে জিজ্ঞেস করতে জানালো যে, দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। সেই বাসে যেতে হবে বালিগাঁও (টঙ্গীবাড়ি উপজেলা), সেখান থেকে আরেক বাসে লৌহজং-এ। কিন্তু সময় লাগবে প্রায় দুই-আড়াই ঘন্টা। এদিকে বাজে সাড়ে তিনটা। তাই সিএনজি ভাড়া করলাম লৌহজং পর্যন্ত। ভাড়া নিল অনেক, ২৫০ টাকা।
লৌহজং পৌছালাম পৌনে পাচটায়। ওখানে ভালো খাবার হোটেল বলতে একটাই পেলাম, নাম কাশফুল। সেখানে খেয়ে পদ্মা নদীর তীরে দাড়াতেই দেখলাম ওপার থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসছে। আসার পর শুনলাম পদ্মা রিসোর্টে যাওয়া-আসা, সাথে ওখানে ঘোরা সব মিলিয়ে নৌকাতে ৫০ টাকা (একজনের জন্য) দিতে হবে। টাকা দিয়ে নৌকায় উঠলাম। কিছুক্ষন পরেই নামিয়ে দিল নদীর ওপারে, পদ্মা রিসোর্টে। ভালোই করেছে জায়গাটা অবকাশ যাপনের জন্য, তবে অবশ্যই উচ্চবিত্তদের জন্য। অনেকগুলো কাঠের দোতলা কটেজ, নাম রাখা হয়েছে বাংলা মাসের ও ঋতুর নামানুসারে। কটেজের ভাড়া ২৪ ঘন্টার জন্য ৩০০০ টাকা। এখানে খাবারের দামও অনেক। কেউ আগে থেকেও ফোন করে কটেজ বুক করতে পারেন, ফোনঃ ০১৭১৩০৩৩০৪৯, ০১৭১২১৭০৩৩০। চারপাশটা খোলামেলা সুন্দর।
ওখান থেকে সেই নৌকায় এপারে ফিরে আসলাম। পিপাসা পেয়েছিল, ডাবের পানি পেতেই .... ঢকঢক।
সূর্য ডুবছিল।
সাথের রাস্তাতেই দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম গাংচিল পরিবহনের জন্য। বাসটা বালিগাঁও থেকে ডাইরেক্ট ঢাকায় যায়। কিন্তু অনেক্ষন দাড়িয়ে না পাওয়াতে বেবীটেক্সীতে উঠলাম, মাওয়া পর্যন্ত নিয়ে যাবে, ভাড়া প্রতিজন ২০ টাকা। মাওয়া পৌছতেই দেখি একটি বিআরটিসি দাড়িয়ে আছে, গুলিস্থান যাবে, দৌড় দিয়ে এসে টিকেট কেটে বাসে উঠলাম ...... সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম ....
বাস চলতে শুরু করল ঢাকার উদ্দেশ্যে।
শেষ