গেল রোজার ঈদের আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম দুই বন্ধুর সাথে ঈদের ছুটিতে কুমিল্লার ময়নামতিতে ঘুড়তে যাব। কিন্তু বৃষ্টির জন্য কোথাও ঘুরতেই যেতে পারলামনা প্রথম দুই দিন। তৃতীয় দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি সেদিনও ঝমঝম বৃষ্টি। ঠিক করলাম এই বৃষ্টিতেই রওনা দিব।
সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে আসতে বললাম বন্ধু নাজির ও সুমনকে। উল্লেখ্য, আমি আগে কখনো কুমিল্লা যাইনি। একজন অফিস কলিগের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম সায়দাবাদ থেকে ময়নামতিতে যাওয়ার জন্য ভাল বাস - তিস্তা বা এশিয়ালাইন, ভাড়া ১১০। প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে দেখলাম একটা এশিয়ালাইন বাস ছাড়ছে। তাড়াতাড়ি উঠলাম। সাথেসাথেই বাস ছাড়ল। বৃষ্টির জন্য জানালা খুলতেই পারছিলাম না।
যাই হোক, এভাবেই শীতলক্ষা, মেঘনা সেতু পার হয়ে গৌরীপুর পৌছাতেই দেখি ঝকঝকে রোদ, দেখে একটুও বোঝার উপায় নেই যে ঢাকায় কি পরিমান বৃষ্টি হচ্ছে।
জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে .... বাসের হেলপার ডাক দিল নামার জন্য। নেমে দেখি, ময়নামতির যাত্রী ছাউনী। সেখান থেকে একটু হেটে ১০ টাকা দিয়ে রিক্সা নিলাম, ওয়্যার সিমেট্রিতে যাওয়ার জন্য। ওয়্যার সিমেট্রিতে গিয়ে দেখলাম সবুজে ঘেরা সমাধিস্থল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল এটা।
ওখান থেকে বের হয়ে বাসে আসলাম ক্যান্টনমেন্টের সামনে। ক্যান্টনমেন্টে ঢুকে বাম দিকে দেখতে পেলাম অনেকগুলো কাচের ফ্রেমে ছবির প্রদর্শনী, যেখানে রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বেশকিছু দূর্লভ ছবি। ওখান থেকে বের হয়ে টিকেট কেটে লাইনে দাড়ালাম টেম্পুতে উঠার জন্য। ভাড়া ১০ টাকা প্রতিজন। এই টেম্পুতে যাওয়া যাবে ক্যান্টনমেন্টের অপরপ্রান্তে অর্থাৎ কোটবাড়িতে। সেখানে নেমে সিএনজি নিলাম যেটা নিয়ে আমাদের ময়নামতি যাদুঘরে, ভাড়া ১০ টাকা প্রতিজন, ড্রাইভারের পাশে আরো দুইজন উঠল আমরা তিনজনসহ। যাদুঘরে যাওয়ার পথে পড়ল কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ।
অবশেষে পৌছালাম ময়নামতি যাদুঘরের গেটে। কিন্তু সেসময় লাঞ্চের বিরতি চলছে। কি আর করা, পাশের পিকনিক স্পট ঘুরে লালমাই পাহাড়ে কিছুদুর উঠলাম। তারপর ফিরে এসে ময়নামতি যাদুঘরে ঢুকলাম। টিকেট ১০ টাকা। ময়নামতি ও শালবন বিহারের মাটি খুড়ে প্রাপ্ত মূর্তি, মুদ্রা, ব্যবহার্য জিনিসপত্রই মূলত যাদুঘরে সাজানো।
সেখান থেকে বের হয়েই পাশে শালবন বিহারের গেট। এখানেও টিকেট ১০ টাকা। পূর্বে এটা শালবন রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। খ্রীস্টিয় ৭ম হতে ৮ম শতাব্দীর মধ্যভাগের শাসক রাজা ভবদেবই এ বিহারের নিমার্তা। যাই হোক, চারপাশটা ঘুরে দেখতে লাগলাম, খুবই ভালো লাগল। ঈদের সময় বলে প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল।
সেখান থেকে বের হয়ে ফিরে আসলাম কোটবাড়ি, এদিকে ক্ষুধায় অবস্থা কাহিল, ঢুকলাম এক মিনি চাইনিজে (না ঢুকেও উপায় ছিলনা, কারন ওটা ছাড়া সব খাবার দোকানই ছিল বন্ধ), গিয়ে শুনলাম মুরগী আর সাদা পোলাও ছাড়া কিছু নাই, তাই তাড়াতাড়ি আনতে বললাম, আনল প্রায় ২৫ মিনিট পরে, এত রাগ লাগল, কিন্তু খেতে গিয়ে দারুন মজা লাগল তাই রাগের কথা ভুলেই গেলাম।
খাওয়ার পর বের হয়ে দেখি প্রায় সন্ধ্যা। ইচ্ছা ছিল শহরে যাব, আসল রসমালাই কিনব, কিন্তু তা আর হলনা!! রাস্তার পাশের একটা দোকান থেকে তিনজনের জন্য তিন কেজি কুমিল্লার "আসল + খাটি" রসমালাই ( দোকানদার ভাইজানের কথা !!! ) কিনে বাসে উঠলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।