somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস.........

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস.........

অনেক বছর আগে 'ইন্ডিপিনডেন্স ডে' নামে একটি ইংরেজি সিনেমা দেখেছিলাম। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সমগ্র পৃথিবীকে বাঁচানোর লড়াই ছিল সেই সিনেমার বিষয়বস্তু। তারপরে সেই লড়াইতে সাফল্যের দিনটি উদযাপিত হয়েছিল সারা পৃথিবীর স্বাধীনতা দিবস হিসেবে। বাস্তবে এমন কোন‌ও দিন নেই। পৃথিবী স্বাধীন হয়নি আজ‌ও।

ইন্ডিপিনডেন্স, ভিক্টোরি ও লিবার্টি শব্দত্রয়ের বাংলা শব্দার্থ হল স্বাধীনতা, মুক্তি ও স্বাতন্ত্রচেতনা। এই তিনটি একত্র হলেই হয়ত পরিপূর্ণ স্বাধীনতা হয়। কিঞ্চিৎ রাজনৈতিক স্বাধীনতা আদৌ স্বাধীনতা নয়, আবার পরাধীনতাও নয়। বনের পাখি স্বাধীন। খাঁচার পাখি স্বাধীন নয়। মানুষ প্রায়শ‌ই খাঁচার পাখি। দেশ নামের খাঁচাটি খানিক বড়ো- এই যা! ইচ্ছে হলেই সে এদেশ থেকে ওদেশ যেতে পারে না। ইচ্ছে হলেই নিজেদের নিয়মতন্ত্রের ভিতরেই সে অন্যায়ের প্রতিকার পায় না। মানুষের প্রতিটি নিষ্পাপ ইচ্ছার পায়ে পায়ে বেড়ি।

স্বাধীনতার যুদ্ধ চলতেই থাকে, বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন। খাঁচার পাখির বনের পাখি হয়ে ওঠার লড়াই হল স্বাধীনতার লড়াই। আমিত্ব ও অহং এই লড়াইকে সীমাবদ্ধ করে। আমরা দেশপ্রেমে আটকে থাকি। দেশবিস্তৃত খাঁচা আমাদের। দলপ্রেম বা ব্যক্তিপ্রেমের খাঁচা আর‌ও সংকীর্ণ, আর‌ও ক্ষুদ্র। সমস্ত খাঁচা ভেঙে আমরা বিশ্বপ্রেমে লুটিয়ে পড়ি না। 'বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমার‌ও' - এই সত্য এক গভীর উপলব্ধহীনতার মধ্যে অনাবিস্কৃত‌ই থেকে যায়।

গভীর পরিতাপের বিষয়, বিজয় এবং স্বাধীনতা তো দূর অস্ত, আমরা প্রতিদিন আর‌ও বেশি পরাধীন হয়ে পড়ছি। আর‌ও ঘর, আর‌ও বেড়া- জাতি, জনজাতি, আদিবাসী, ব্রাহ্মণ, শূদ্র, মহিলা, পুরুষ, এলজিবিটি, হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, প্রিভিলেজড, ডিপ্রাইভড, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চিন কত কী! কেবল মানুষ ও মনুষ্যত্বের পরিচয় কোথাও নেই। অভেদসুন্দরের লালন নেই। প্রেম নেই। পৃথিবী নিজসৃষ্টির মধ্যে কোথাও কোন‌ও বেড়া রাখেনি। আমারাই নিজসৃষ্ট বেড়ায় রক্তাক্ত হয়েছি অসংখ্যবার। ইতিহাস বা ভূগোলের শিক্ষা আমাদের অধরাই থেকে গেছে অদ্যাবধি।

দ্বিজেন্দ্রলাল লিখেছেন, "সকল দেশের রাণী সে যে, আমার জন্মভূমি"।

আল্লামা ইকবাল লিখেছেন, "সারে জাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা"।

রবীন্দ্রনাথ বললেন, "সকলেই বিশ্বমানব। সকলের এক‌ই পৃথিবীর সন্তান।"

আধুনিক পৃথিবীর রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিভাজনের প্রায় স্বতঃসিদ্ধ ধারণাকে প্রথম চ্যালেঞ্জ জানানো মানুষটি গ্যারি ডেভিস। ১৯৪৮ সনে প্যারিসে গিয়ে নিজেকে 'পৃথিবীর নাগরিক' হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি আইফেল টাওয়ারের চুড়ায় উঠে বলেছিলেন, 'আমি শ্রেষ্ঠ' নয়, বরং 'সকলেই সমান'। এ কথাই, এ বোধ‌ই আধুনিকতার প্রথম শর্ত।

আজ থেকে বহু বহু বছর পরে যদি সত্যি সত্যি‌ই আমরা কখন‌ও আধুনিক হয়ে উঠি, কোনদিন সত্যি সত্যিই যদি পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিকারের আধুনিক যুগের সূচনা হয়, যদি কোনদিন ভিসা, পাসপোর্ট, বর্ডার, ডিফেন্স, সিকিউরিটি, ভেটো, অস্ত্র, জঙ্গী, লুটেরা, লম্পট- এসব সত্য অতীতের কৃষ্ণগহ্বরে চলে যায়, যদি সত্যিই কোনদিন 'গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ' হয়- সেই দিন, সেই দিনই, আমরা পৃথিবীর বিজয় দিবস, সকল মানুষের বিজয় দিবস মেনে নেব। এবং সেই দিন‌ই হবে নিখিল বিশ্বের যথার্থ স্বাধীনতা দিবস। প্রকৃত বিজয় দিবস।

সমস্যা হল, দেশপ্রেমে যেভাবে উদ্দীপিত হয়ে ওঠে, বিশ্বপ্রেমে সেটি হয় না। সে বড়ো দূরারোহ স্বপ্ন। অনন্তের অপেক্ষা। স্বপ্নের‌ও তো খাঁচা থাকে। বেড়া থাকে, বেড়ি থাকে। সে‌ও তো স্বাধীন নয়।

আমি আমার স্বাধীনতা চাই, আমি আমার বিজয় চাই। আমিই আমার স্বাধীনতার ঘোষক, আমিই আমার বিজয়ের সেনাপতি। আমি মানুষের স্বাধীনতা চাই, সব মানুষের বিজয় দেখতে চাই। আমি পৃথিবীর নাগরিক। পৃথিবী আমার বাড়ি, পৃথিবী আমার দেশ। আপনি আমি, আমরা সবাই পৃথিবীর মালিক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ -

লিখেছেন জহিরুল ইসলাম সেতু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫


জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন অরাজনৈতিক সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল -
১. সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, মহল্লায় কঠোর নজরদারী করে সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু কি শোষক ছিলেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০২



বঙ্গবন্ধু শোষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন অতি সাধারণ মানুষ।
একদম মাটির মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিলো না। একটা উদাহরণ দেই। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তার বাড়িতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ লাগলে কোন দল কোন পক্ষ নেবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৬

প্রথমেই বলি ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে। কারণ উভয় দেশের অধিকাংশ জনগণ শান্তি প্রিয়। উভয় দেশের কিছু মানুষ এবং মিডিয়া এই সম্ভবনার কথা রটিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে একাধিকবার কনসার্ট আয়োজন এবং হালকা কিছু বকবক....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৯


জুলাই অভ্যুত্থান নিসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষত যারা তরুণ তাদের মধ্যে এক ধরণের নতুন রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপন করেছে। এই অভ্যুথানে অসংখ্য লোকের আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাসুম: সাতকাহনিয়া গ্রামের গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৫




মাসুম: সাতকাহনিয়া গ্রামের গল্প

সাতকাহনিয়া গ্রামের এক নম্র ও ভদ্র ছেলে মাসুম। ২০০৮ সালে, যখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো, তখন থেকেই তার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট-সক্ষম মোবাইলের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×