জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন অরাজনৈতিক সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল -
১. সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, মহল্লায় কঠোর নজরদারী করে সরকারকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। জনগণেরও স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন থাকতো।
২. দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিচারের আওতায় আসবে। সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে সকল ক্ষেত্রে আংশিক নয় সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতি বন্ধ হবে। একই সাথে চিহ্নিত দূর্নীতবাজ কর্মকর্তাদের বিদায় দিয়ে বড়সংখ্যক শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের নিয়োগ দিয়ে কাজের গতি দ্রুততর করণ।
৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ দিনে রাতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে।
৪. পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের ফলে সেখানে ভাড়া কমে আসবে। আগের চেয়ে অর্ধেক ভাড়ায় পণ্য ও মানুষের চলাচল সম্ভব হবে।
৫. দ্রব্যমূল্য যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস পাবে। মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা করতে পারবে।
৬. কৃষিখাতে প্রণোদনা বাড়বে, কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। তাঁদের জীবনব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
৭. দেশের সকল নাগরিক ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। সংখ্যা লঘু বা সংখ্যা গুরুর নামে কোনো প্রকার বৈষম্য থাকবে না।
৮. শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার অগ্রাধিকার দিবেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও দেশোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ফলে অশিক্ষা-কুশিক্ষা দূর হবে। নতুন প্রজন্ম আধুনিক (বিজ্ঞানমনষ্ক ও কারিগরী) শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। শিক্ষায় ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
৯. ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পকারখানায় সকল প্রকার সিন্ডিকেট ভেঙে স্বচ্ছতা আনয়ন করবেন। মূদ্রা পাচার রোধে কঠোর নজরদারী আরোপ করবেন।
১০. মেধাভিত্তিক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বল্পঋণের উদ্যোক্তা তৈরি তথা স্বকর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিবেন।
১১. অচল ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প কারখানা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিবেন, তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য অতি দ্রুত উদ্যোগ নিবেন।
১২. বিগত সরকারসমূহের দূর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত এবং পাচারকৃত অর্থে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
১৩. জুলাই আন্দোলনে নির্যাতকদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসন, নিহতদের পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন।
১৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন অ বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।
১৫. বিচারবিভাগ পৃথকীকরণ তথা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, পৃথক সাচিবিক কার্যালয় স্থাপণের উদ্যোগ গ্রহণ, মামলার জট কমানোর জন্য বিচার বিভাগকে প্রয়োজনীয় সয়াহতা প্রদান করবেন।
১৬. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং যৌক্তিক সময়ে সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করণ।
১৭. ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সংবিধানের সময়োপযোগী সংস্করণের উদ্যোগ গ্রহণ করে তা পাশের জন্য গণভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
১৮. প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রমিক তৈরী, দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানে সহযোগিতা প্রদান তথা বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের উৎস বৃদ্ধিকরণ। প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে সকল দেশে দূতাবাসগুলোকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান।
জনগণের প্রত্যাশিত এমন আরো বিষয়ে অতি দ্রুততার সাথে কাজকর্ম সম্পাদন ---- উত্তরণের ব্যাপারে নেকে বলেন ভঙ্গুর অর্থনীতি ও অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে সরকারকে আরো সময় দিতে হবে। যেটুকু করার ছিল গত সাড়ে চার মাসে তা করা এবং বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা কঠিন ছিলা না।
অন্তর্বর্তীকালীন এই অরাজনৈতিক সরকার যদি অনভিজ্ঞ কতিপয় ছাত্রনেতাদের সন্তুষ্টির পেছনে না ছুটে দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করতেন, দেশের মানুষ এই সরকারকেই আরো অন্তত দশ বছর চাইতেন। এক মাসের মধ্যে উদ্যোগ নিয়ে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই সরকার এসব বাস্তবায়ন করতে পারতেন এবং তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে বিদায় নিতে পারতেন। পরবর্তি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার জনপ্রিয়তা রক্ষা বা চাপে পড়ে হলেও এই কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন। এই সরকারের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকতো।
অথচ তারা কী করছেন! প্রাপ্তিটা কী!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:০৫