বঙ্গবন্ধু শোষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন অতি সাধারণ মানুষ।
একদম মাটির মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিলো না। একটা উদাহরণ দেই। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তার বাড়িতে থাকা ডিউটিরত পুলিশ কনস্টেবল কে টেনে ঘরে নিয়ে যেতেন। একসঙ্গে দুপুরের খানা খেতেন। কেউ গ্রাম থেকে শেখ মুজিবকে দেখতে এসেছেন। সাথে করে নিয়ে এসেছে কৈ মাছ। সেই কৈ মাছ শেখ মুজিব একা খেতেন না। তার সিকিউরিটি গার্ডকে হাত ধরে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে দিতেন। বলতেন, কুমিল্লার রফিক দেশি কৈ মাছ দিয়ে গেছে। আয় সবাই মিলে খাই। শেখ মুজিব কোনোদিন নিজের কথা ভাবেন নাই। তিনি দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। তিনি আমাদের নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি আমাদের চে গুয়েভারা। তিনি আমাদের মসীহ।
শেখ মুজিবের বাড়ির দরজা সব সময় খোলা থাকতো।
যে কেউ চাইলেই শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে পারতো। তিনি সবাইকে সময় দিতেন। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও তার সাথে দেখা করতে পারতো না। তখন তারা শেখ মুজিবের কাছে চিঠি লিখতো। খামে ঠিকানা লিখত মুজিব ভাই। ধানমন্ডি। সেই চিঠি চলে আসতো শেখ মুজিবের হাতে। তিনি চিঠি পড়তেন এবং চিঠির উত্তর দিতেন। রবীন্দ্রনাথ আর শেখ মুজিব আমাদের বড় পাওয়া। ভাগ্যিস তারা এই বাংলায় জন্মেছিলেন। এই জাতির ভাগ্য ভালো যে শেখ মুজিব জন্মেছিলেন। তার জন্যই একটি স্বাধীন দেশে পেয়েছি আমরা। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছে একটা সেলুন ছিলো।
সেলুনে একটা সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকতো। ''মুজিবের বাড়ি যেইদিকে, আমার সেলুন সেইদিকে"। শেখ মুজিব সবাইকে বিশ্বাস করতেন। ভারতের গোয়েন্দারা সব সময় শেখ মুজিবকে সাবধান করতো। মুজিব বলতেন, এরা আমার ভাই। এরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না। এদের জন্যই আমি বেচে আছি। এরা আমার দেশের মানুষ। এদের আনন্দে আমি আনন্দ পাই, এদের দু:খে দু:খ পাই। সত্য কথা বলতে শেখ মুজিব কখনো ভয় পাননি। এই বাংলার কৃষকদের বড় ভালোবাসতেন তিনি। ছাত্র বয়স থেকেই শেখ মুজিব দেশের জন্য জেলে গিয়েছেন। ইদের দিন পর্যন্ত তিনি পরিবারের সাথে থাকতে পারেন নাই। তাকে কারাগারে ইদের দিন থাকতে হয়েছে। সব দিকে নজর ছিলো শেখ মুজিবের। যুদ্ধের পর কলকাতা থেকে কবি নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের হত্যার মধ্যে দিয়ে পুরো বাংগালী জাতির কপাল পুড়লো।
শেখ মুজিব দারুণ বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন। একটা ইন্সুইরেন্স কোম্পানীতে বেশ কিছু দিন চাকরি করেছিলেন তিনি। শেখ মুজিব একজন গ্রেট নেতা। মানবিক এবং হৃদয়বান। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে আমৃত্যু ভালোবেসে গেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে তিনি অল্প সময়ে গুছিয়েছেন। বিশ্বের বড় বড় নেতাদের সাথে দেখা করে সাহায্য সহযোগিতা এনেছেন। তার কাছের মানুষদের কাছ থেকে তিনি সঠিক সহযোগিতা পাননি। শেখ মুজিবের ডান হাত ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি হঠাৎ দূরে সরে গেলেন। এদিকে খন্দকার মোশতাক আগে থেকে তৈরি করে রাখা নীল নকশা বাস্তবায়নে সচেস্ট। ভারতের সাথে মুজিবের সম্পর্ক দারুণ ছিলো। ইন্দিরা গান্ধী আমাদের জন্য অনেক করেছেন।
দেশের জন্য তাকে অসংখ্য বার জেলে যেতে হয়েছে।
শেখ মুজিবের ব্যাক্তিত্ব ছিলো দশে দশ। তার পাইপ (সিগারেট) খাওয়ার স্টাইলটাও মুগ্ধ হয়ে দেখার মতোন। শেখ মুজিব যে তামাক খেতেন সেটার নাম ছিলো এরিন মোর। শেখ মুজিবের হাটা, সিগারেট খাওয়া, বক্তৃতা দেওয়া, পোশাক আশাক অতি সাধারণ ছিলো। একটা লুঙ্গি পরে খালি গায় শেখ মুজিব বসে থাকতেন ব্যলকনিতে। তার একটা ছবি আছে গেঞ্জি গায়ে দেওয়া, লুঙ্গি পরা। একটা চেয়ারে বসে আছেন। অতি সাধারণ একটা ছবি। কিন্তু তার বসার মধ্যে একটা আর্ট আছে। সৌন্দর্য আছে। রাজাকার ছাড়া প্রতিটা বাংগালী তাকে ভালোবাসে। তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। শেখ হাসিনার অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু শেখ মুজিবের কোনো ভুল নেই। হ্যা তার একটা ভুল আছে, এই দেশ আর দেশের মানুষকে অনেক ভালোবেসেছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০২