জুলাই অভ্যুত্থান নিসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষত যারা তরুণ তাদের মধ্যে এক ধরণের নতুন রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপন করেছে। এই অভ্যুথানে অসংখ্য লোকের আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকা, শত শত মৃত্যু যার চিহ্ন সমাজে এখনও রয়ে গেছে তার কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। এই অভ্যুত্থান মূলত বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য দূরকরণের জন্য হয়েছিল। তাই আজ যখন দেশের মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত, শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছে, লুটপাটের ফলে ব্যাংক গুলোতে টাকার সংকট, মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে তখন দেশে বার বার জুলাই অভ্যুত্থানের স্মরণে কনসার্ট হওয়া হতাশাজনক। এমনিতেই এসব কনসার্টে টিকিটের যে দাম তা আমার মতো ছা পোষা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। মূলত বড়োলোক শ্রেণির সাথে এসব আয়োজন বেশি মানায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর নামকরা সংগীত শিল্লী আতিফ আসলাম, জাল ব্যান্ড এবং রাহাত ফতেহ আলী খানকে এনে কনসার্ট করিয়ে জুলাই আহতদের জন্য ফান্ড কালেকশনের আইডিয়া খুব একটা কাজে দিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ আগস্ট/সেপ্টেম্বর মাসে ধারবাহিক ভাবে কনসার্টের পরও জুলাই আহতদের সুচিকিৎসার অভাবে রাস্তায় ধর্মঘট করার কথা ছিলো না। চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় ভার সরকারকে নিতে হবে। গোষ্ঠীগত ভাবে কিছু ফান্ড কখনোই দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে না।
ডিসেম্বর মাসে পরপর দুইটি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হলো। একটি হচ্ছে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এবং অন্যটি হলো জুলাই স্পিরিট কে জাগ্রত রাখার উপলক্ষ্যে ২১ শে ডিসেম্বর ! ১৬ই ডিসেম্বরে প্রতিবছর অনেক আয়োজন হয়, কনসার্ট হয়, বইমেলা হয়। কিন্তু পুনরায় জুলাই স্পিরিট উপলক্ষ্যে কনসার্ট কেন আয়োজন করা হলো তা কিছুতেই বোধগম্য নয়। বিজয় দিবসের স্পিরিট এবং জুলাইয়ের স্পিরিট কি আলাদা কিছু নাকি ? দুইটা কনসার্ট মার্জ করেই করা যাইতো এবং ফান্ড কালেক্ট করা যাইতো।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো পাকিস্তানের বিখ্যাত সংগীত শিল্লী রাহাত ফতেহ আলী খান বিনা পয়সায় গান গেয়েছেন। টিকিটের মূল্য দশ হাজার টাকা প্রায় যা আমার মাসিক বেতনের তিন ভাগের এক ভাগ ! যাক রাহাত ফতেহ আলী খান অনেক বড়ো দিলের মানুষ বলে মনে হয়েছে। ফান্ড কালেকশন যথাযথ ভাবে হয়েছে বলে আশা রাখি। সে টাকা ব্যয়ে জুলাই আহতদের সুচিকিৎসা হউক সেই কামনা করি।
রাহাত ফতেহ আলী খানের বিনা পয়সায় গান গাওয়ার নিউজ পড়ে আমার মুক্তিযুদ্ধের সময় চ্যারিটি কনসার্টে গান গাওয়া সংগীত শিল্লী জর্জ হ্যারিসনের কথা মনে পড়ে যায়। রাহাত ফতেহ আলী খান কে এই যুগের জর্জ হ্যারিসন মনে করে কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে আসবে এমন সময়ে অন্য একটি নিউজ পড়ে আমার চোখের আগত অশ্রু ভ্যানিশ হয়ে যায়। আসন্ন বিপিএলে রাহাত কাগু সুরে সুরে মঞ্চ মাতাবেন। বিনিময়ে উহাকে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হাদিয়া দিতে হইবে। পেমেন্ট কিন্তু টাকায় হবে না, পেমেন্ট হবে ডলারে। রাহাত কাগু দেশের এই ডলার ক্রাইসিসের সময়ে কত্তগুলো ডলার নিয়ে যাইবেন শোনার পর উহার প্রতি আর শ্রদ্ধা আসিতেছে না মন হইতে !
আওয়ামী লীগের চোরতন্ত্রের শাসনেও দেখতাম সেইম কাহিনী। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কিন্তু সরকার ডলার খরচ করে বিদেশি সংগীত শিল্পী আনতো আর তারা ডলার দেশ থেকে বিদেশ নিয়ে যাইতো। বিদেশ পড়তে যাওয়া পড়ুয়ারা এদিকে পেমেন্টের জন্য ডলার পাইতো না। সিন্ডিকেট থেকে অতিরিক্ত খরচে ডলার কিনতে হতো। এখন ও যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে তবে জুলাই স্পিরিট শত কনসার্ট করেও টিকিয়ে রাখা যাইবে না। ভিন্ন কিছু যাহা দেশের সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর এমন কিছু করিতে পারিলে জাতি জুলাই অভ্যুত্থানকে আজীবন মনে রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০