প্রথমেই বলি ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে। কারণ উভয় দেশের অধিকাংশ জনগণ শান্তি প্রিয়। উভয় দেশের কিছু মানুষ এবং মিডিয়া এই সম্ভবনার কথা রটিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের অনেকে টাকা কামানোর জন্য অনেকে রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য আবার অনেকে উগ্র ধর্মীয় চিন্তা বা উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণে এই ধরণের অপপ্রচার করছে। আমি পোস্টের শিরোনামে যুদ্ধের কথা বললেও পোস্ট দেয়ার উদ্দেশ্য যুদ্ধ না বরং বাংলাদেশের মানুষেরা কে দেশপ্রেমী আর কে মীরজাফর সেটা নির্ণয়ের চেষ্টা করাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
কয়েকদিন আগে ইউটিউবে কেউ একজন দেশপ্রেম নির্ণয়ের জন্য সুন্দর একটা মাপকাঠির কথা বলেছিলেন। তার নামটা আমার এখন মনে নেই। সেই মাপকাঠির আলোকে জানতে চাচ্ছি যে যদি ভারত এবং বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তখন বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল এবং তাদের অনুসারীরা কোন পক্ষ নেবে। বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ধারণা করা যায় যে সক্রিয় আওয়ামীলীগ কর্মীরা ১০০% ভারতের পক্ষ নিবে। আওয়ামীলীগ সমর্থকরা হয়তো দুই ভাগে বিভক্ত হবে। এক ভাগ ভারতকে সমর্থন করবে আর আরেক ভাগ বাংলাদেশকে সমর্থন করবে। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী পার্টি এবং মুসলিমলীগ এই ধরণের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বদলে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। পরে দেশদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল।
বিএনপি কর্মী, নেতা এবং সমর্থকরা আশা করা যায় বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। এদের কিছু সমর্থক বা কর্মী ভারতের পক্ষে যাবে কি না এটা বলা মুশকিল। তবে সম্ভবনা নাই বললেই চলে।
জামায়াতে ইসলামী সহ সকল ইসলামী দলগুলি ১০০% বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। বাম দলগুলি বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। ভারতের সমর্থক বাম দল আছে কি না আমার জানা নাই। ব্লগার কামাল এই বিষয়ে ভালো জানবেন।
উপরের বক্তব্য অনুযায়ী এই কথা বলা যায় যে ভারতের সাথে যুদ্ধ লাগলে একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া বাকি দল এবং তাদের সমর্থকরা বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। সামান্য কিছু আওয়ামীলীগ সমর্থকও হয়তো বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তারমানে হল দেশপ্রেমের বিচারে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশদ্রোহী হল আওয়ামীলীগ এবং তাদের কতিপয় গোরা সমর্থক। সারা দেশের বাকি মানুষ এবং দলগুলি তখন দেশপ্রেমিক হিসাবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগ এবং তাদের দোসররাই হবে দেশদ্রোহী যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের সাহায্য নিতেও দ্বিধা করবে না। দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের পক্ষে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধ না হলেও বোঝা যায় যে এটাই হল বর্তমান আওয়ামীলীগ এবং তাদের দোসরদের অবস্থান।
১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী এবং মুসলিমলীগকে বলা হয় বা হতো যে তারা দেশদ্রোহী। এক কথায় বলা হতো রাজাকার (স্বেচ্ছাসেবী)। আজকের প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগ হল নব্য রাজাকার। কারণ ভারতের সাথে যুদ্ধ লাগলে তারা এখন ভারতের পক্ষ নিবে।
গত ৫৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমার কাছে মনে হয় জামায়াতে ইসলামী হল একটি দল যাদের আদর্শ আছে, নীতি আছে এবং সততা আছে। চুরি, চামারি, গুণ্ডামি, মাস্তানি, লুটপাট এরা করে না। কিছু ক্ষেত্রে এদের বিচ্যুতি ঘটলেও বিএনপি বা আওয়ামীলীগের তুলনায় অনেক কম। দলের মধ্যে গণতন্ত্র একমাত্র জামায়াতের মধ্যেই আছে। ১৯৭১ সালে তারা ভুল করলেও বর্তমান সময়ে তাদের নেতা এবং কর্মীরা অন্যদের তুলনায় অনেক সৎ। আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির শাসন আমরা দেখেছি। কিছু ভালো দিক থাকলেও এদের অপকর্ম, নির্যাতন, সহিংসতা, দুর্নীতি, লুটপাট, গুণ্ডামি, ভণ্ডামি দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। বিএনপির তুলনায় আওয়ামীলীগের অপকর্ম এবং জুলুম অন্তত ৫ গুণ বেশী হবে।
জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলির মধ্যে কয়েকটি দল ১৯৭১ সালে ভুল বা অন্যায় করেছে। তার শাস্তি তারা পেয়েছে। তাদের নেতাদের ফাঁসি হয়েছে। বর্তমানে যারা রাজনীতি করছে তারা ১৯৭১ সালে ছিল না। তাই জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলিকে এইবার ক্ষমতায় আনতে হবে। আমার ধারণা বিএনপি, আওয়ামীলীগ বা জাতীয় পার্টির চেয়ে এরা কম খারাপ হবে। মন্দের ভালো হিসাবে আমাদের উচিত হবে জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনা।
এই পোস্ট পড়ার পরে অনেকেই আমাকে জামায়াত শিবির ট্যাগ করতে পারে। কিন্তু আমি কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। আমি ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগকে ভোট দেই। তারা সেবার ক্ষমতা আসে। ২০০১ সালে বিএনপিকে ভোট দেই তারা তখন ক্ষমতায় আসে। ২০০৮ সালে পুনরায় আওয়ামীলীগকে ভোট দেই এবং তারা ক্ষমতায় আসে। পরে সম্ভবত ২০১৮ সালে ভোট দিয়েছিলাম একজন স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে। এইবার আমার ইচ্ছা আমি হয়তো জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোন ইসলামী দলকে ভোট দিতে পারি। সকল শাসন ব্যবস্থার চেয়ে ইসলামী শাসন শ্রেষ্ঠ। কারণ এই শাসন হল আল্লাহ প্রদত্ত। মানুষের শাসন ত্রুটিপূর্ণ। জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলি মন্দের ভালো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৬