somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

একুশের বিউগল বাজছে-রাজা আসছেন!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একুশের বিউগল বাজছে-রাজা আসছেন!

সেই ছেলেবেলা থেকেই আমি বাউল গান আর যাত্রার ভক্ত ছিলাম। ছেলেবেলায় যাত্রা দেখে খুব মজা পেতাম। আমার দেখা স্বল্প সংখ্যক যাত্রা পালার সবগুলোই রাজা-রানী নির্ভরছিল। বেশীর ভাগ যাত্রা পালার শুরুটা হতো “রাজা”র আগমণের দৃশ্বে-যা ভিন্নতর ভাল লাগায় আমার মনে দাঁগ কেটে আছে এখনও। যাত্রা শুরু হবার কিছু বৈশিস্ট আছে। যেমন- যাত্রা শুরু হবার আগে যাত্রার কনসার্ট মানে বিউগল বাজানো হয়।যখনই বিউগল বেজে উঠত- তক্ষুণি দেখতাম গ্রীনরুম থেকে উজ্জ্বল পোশাকে সজ্জিত হয়ে উচ্চৈঃস্বরে সংলাপ বলতে বলতে রাজা আসছেন। রাজা আসছেন দ্রুত পদক্ষেপে যাত্রার খোলা মঞ্চে। তখন দর্শকরা স্বমস্বরে বলতেন- " রাজা আসছে, রাজা আসছে"।

এখন আর যাত্রা দেখা হয়না। কিন্তু যাত্রার শুরুতে রাজা আসছে, রাজা আসছে-তেমন একটা অনূভুতি উপলব্ধি করি ফেব্রুয়ারী মাসে। বছর ঘুরে ফেব্রুয়ারি মাস যখন আসে তখনই সেই যাত্রার বিউগলের শব্দের মত শুনি প্রাণ মন কাঁপানো সেই হৃদয়গ্রাহী গান- "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি"- একই সংগে শুরু হয় বাংগালীর প্রানের স্পন্দন “একুশের বই মেলা”!

ফেব্রুয়ারী মানেই একুশ, একুশ মানেই বাংগালীর প্রানের নতুন এক উদ্দীপণা, এক ভিন্নতর শিহরণ! একুশ এলেই মনে হয় ছেলেবেলায় শোনা যাত্রার সেই স্টার্টিং কনসার্ট বাজছে, বিউগল বাজছে। ফেব্রুয়ারী এলেই সত্যি সত্যি রাজা আসেন- একুশের মুকুট মাথায় পরে। সালাম, বরকত, জব্বার- এরা কি আমাদের রাজা নন? ভাষার রাজা,মাতৃ ভাষা রক্ষার সংগ্রামের রাজা। বাংগালী ও বাংলাদেশীদের প্রকৃত রাজা কি তারা নন? যারা এই দেশকে ভালোবেসে বিদেশী ভাষার আক্রমণ থেকে নিজেদের দেশ ও মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, রাজপথে নিজেদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে পবিত্র ইতিহাস রচনা করেছিলেন-তারাইতো আমাদের প্রকৃত রাজা! এই ভাষার রাজাদের মধ্যে অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই। কেউ কেউ এখনও আছেন সেই '৫২-এর ভাষা সংগ্রামের সাক্ষী হয়ে-তাঁদের জানাই সালাম।

এ কথা স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, একুশে ফেব্রুয়ারিই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার সমুজ্জ্বল ও সুদৃঢ় সোপান। স্বাধীনতার স্বর্ণতোরণ। বাঙালীর সত্যিকার মন ও মানসকে, চিন্তা ও চেতনাকে জাগরিত করার তুফানী হাওয়ার মাসই হচ্ছে ফেব্রুয়ারী মাস। এই রক্তচ্ছাটা একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছিল বলেই আমরা ২৬ মার্চ আমাদের রঞ্জিত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পারছি। তাই একুশই হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিউগল। এই বিউগল শুনেই দেশের আপামর কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র জনতা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ প্রান আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল মহান বিজয়।

আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ বৃটিশ বেনিয়া নেই। পাকিস্তানী শোসকরাও নেই। লুণ্ঠনকারীরা সব চলে গেছে। এখনতো সব আমরা আমরাই। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে অবশ্যই আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বিবেকের স্বাধীনতা-আমরা কি পেয়েছি? পৃথিবীতে ভাষার জন্য কোনো জনগোষ্ঠীর আত্মত্যাগের এমন উদাহরণ সত্যিই বিরল। এ আন্দোলন শিক্ষা দেয় অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হতে। এ আন্দোলন প্রেরণা যোগায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিপ্লবের। এ আন্দোলন শিক্ষাদেয় অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করবার।

ধন, সম্পদ, বিদ্যা, বুদ্ধি -কোন কিছুই শুধু অর্জনের জন্য নয়। গচ্ছিত রাখার জন্যও নয়। বিতরণের জন্য। আমাদের মধ্যে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন। আবার অনেক বুদ্ধির পুঁজিপতিও আছেন। পুঁজিবাদ যেমন আমাদের জন্য ক্ষতিকর, বিদ্যা-বুদ্ধির পুঁজিবাদও তেমনি আমাদের জন্য অনিষ্টকর। সব থেকে বেশী ক্ষতিকর দেশ পরিচালনায় স্বৈরাচারী-স্বেচ্চাচারী মানষিকতা। আমাদের মনে রাখা উচিত-রাস্ট্রীয় শাসন ব্যাবস্থা যেধরনেরই হোক-সেই পদ্ধতি ‘শাসন’ ব্যাবস্থা নাহয়ে যদি ‘নাগরিক সেবা’ ধর্মী নাহয়-অর্থাৎ রাস্ট্র পরিচালনা যারা করবেন তারা যদি নাগরিক কল্যাণমূখী নাহন তাহলে আমরা যেই তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই থেকে যাব। নেতৃত্ব যদি দেশে ও দেশের মানুষের কল্যাণকামী না হতে পারেন-তাহলে আমরা লক্ষ লক্ষ শহীদের আত্মার সাথে, বেঁচে থাকা ১৬ কোটি মানুষের আশা আকাংখার সাথে বিশ্বাসঘাতকতারই শামিল হবে।

১৯৫২ ভাষা শহীদদের রক্তস্নাত পথ ধরে লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রানের বিনিময় আমরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব অর্জন করেছি। কিন্তু আমরা কি এই অর্জনের জন্য আমাদের যা যা বর্জন করার কথা ছিল সে সব বর্জন করতে পেরেছি? সত্যিকার শিক্ষা, উন্নত রুচি ও নান্দনিকতার আলোকে আমরা কি নিজেদের আলোকিত করতে পেরেছি? আমরা একত্রিত হচ্ছি। কিন্তু দেশ গড়ার জন্য একতাবদ্ধ কি হতে পারছি, উদার মন নিয়ে কোন মুক্ত সামিয়ানার নিচে? আমরা কি পারছি-আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য,জাতীয় চেতনাবোধে সমুন্নত রেখে নাগরিক কর্তব্য পালন করতে? স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বিবেকের স্বাধীনতা। তবে আমরা কি সবাই আজ সত্যিকার বিবেকবান হয়ে আমাদের রাজনীতিকে, আমাদের অর্থনীতিকে নিজের-নিজের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে সুবিধাভোগের রাজনীতি, লোভ আর লালসার অর্থনীতি দূরে সরিয়ে রেখে পাবার ও প্রত্যাশার সব উলঙ্গ উল্লাসকে পরিহার করে একুশের মহান চেতনায় ও মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র প্রেরণায় জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারছি?

একুশের আন্দোলন এক গৌরবের উপাখ্যান। একুশই আমাদের দেশবাসীর একমাত্র প্লাটফরম-যেখানে কোনো বাংগালীর ভিন্নমত ছিলনা। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও স্বাধীনতা বিরোধী বাংগালী রাজাকার দেখেছি-কিন্তু একুশ নিয়ে প্রিন্টিং মিডিয়ায় নুরুল আমীনের মালিকানাধীন ততকালীন দৈনিক সংবাদ এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে খুলনার সবুর খান ছাড়া আর কারো কোনো ভিন্নমত ছিলনা। এমনকি ঐসময়ের ভিন্ন ভাষাভাষী বাংগালী জাতীয়/রাস্ট্রীয় নেতারাও মাতৃভাষা বাংলার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন। একুশের প্রেরণা সৃষ্টি, ধ্বংসের নয়। এর প্রেরণা নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টির বিকাশের প্রেরণা। এর প্রেরণা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার প্রেরণা। সর্বোপরি একুশের প্রেরণা অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রেরণা। কিন্তু দূর্ভাগ্য! আজও আমাদের প্রেরনা প্রান পায়নি। যার জন্য স্বাধীনতার চল্লিশ বছরেও আমরা স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:১৭
৬৪টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বন্ধ করা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৪১


সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বহুল আলোচিত "ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন" বন্ধ করা নিয়ে অনেককেই উদ্বিগ্ন দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমাদের মতো সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তার কারণ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনা প্রধানের ভুমিকা আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ!

লিখেছেন আহলান, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:০৮




বর্তমানে দেশে সেনা প্রধানের ভুমিকা নিয়ে অনেকের মনেই নানা রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রতি সাধারণ জনগনের যে আস্থা বিশ্বস্ততা তৈরী হয়েছিলো, তাতে বেশ ভাটা পড়তে শুরু করেছে। আমার কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ: গণতন্ত্র ও আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বিশেষ ভূমিকা পালনকারী দল। দলটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৫১

আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি....

বিএনপি জানে তাদের মূল প্রতিপক্ষ কারা.....
ছাত্রসমন্বয়করা জানে রাজনীতিতে তাদের দৌড় কতদূর...

তারেক রহমানের যখন দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে তখনই হাসনাত গং নানান কাহিনী শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৮

পিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের একটা জরীপের ফলাফল নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। পিউ রিসার্চ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সামাজিক জরীপ এবং গবেষণা সংস্থা। এই জরীপের বিষয় ছিল, ২০৫০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×