প্রত্নতত্ত্ব হারিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। এর মাঝে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী "ইউনিক" কোন জিনিস স্থানান্তরিত করা যাবে না, বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, যেখানের জিনিস সেখান থেকেই তোলা যাবে না। এমন আইন থাকার পরও এবং হাইকোর্টের আদেশ থাকার পরও কিভাবে সুপ্রীম কোর্ট কোন আইনে সেই আদেশকে স্থগিত করে? সংবিধানের রক্ষক কেন সংবিধান অমান্য করল? স্বার্থ কার? এভাবেই হচ্ছে তবে বিচারবিভাগের স্বাধীনতার চর্চা?
২। চুক্তিটি ছিল "লাইন টু লাইন" চুক্তি যার মানে হচ্ছে যেখান থেকে ফ্রান্স নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেখানে সেভাবে ফিরিয়ে দিবে এবং প্রত্নতত্ত্ব ঠিক যে জাদুঘর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই জাদুঘরের বাইরে নেয়ার সাথে সাথেই দায়িত্ব তাদের। এমনকি প্রতিবাদের সময় এ ব্যাপার সন্মেলন করে "লাইন টু লাইন" চুক্তি ব্যাপারটিও উল্লেখ করে তারা। তাহলে এখন কেন দায়িত্ব অস্বীকার করছে?
৩।গিমে জাদুঘরে প্রায় ৩০,০০০ সম্পদ রয়েছে যা চুরি করা, শুধু চীনেরই রয়েছে ৭,০০০, যা চীনের মত দেশ এখনো উদ্ধার করতে পারছে না। এসব জানা থাকার পরও কিভাবে এই চুক্তি হয়।
৪। প্রত্নতাত্ত্বিক এসব ব্যাপার নিয়ে ইউনেস্কোর একটি চুক্তি রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ এতে স্বাক্ষর করলেও ফ্রান্স করেনি। চুক্তিটির মূল বিষয়ই ছিল যে - কোন দেশের ইউনিক সম্পদ হরণ করা যাবে না।
৫। প্রজ্ঞা পারমিতা এবং আরেকটি বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে যা বর্তমানে পৃথিবীর আর কোথাও নেই এবং এগুলোর মূল্য নিরুপণ করা সম্ভব নয়, কার স্বার্থে এগুলো পাঠানো হল?
৬। প্রত্নতত্ত্ব কোথাও নিতে গেলে কিছু জিনিস বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। সেগুলো হল - এর একটি সিরিয়াল নাম্বার দেয়া, ওজন মাপা, উচ্চতা সহ আনুষংগিক সকল তথ্য নেয়া, একটি লাইসেন্স করা এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল - প্রতিটি এংগেল থেকে এর ছবি নেয়া। এর কোনটি করা হয়নি? কেন?
এর সাথে গতকালের একটি খবর যোগ করুন - বিখ্যাত দুই রেপ্লিকা বিশেষজ্ঞ গতকাল ফ্রান্সে প্রজ্ঞা পরিমিতা এবং অপর বৌদ্ধমূর্তিটি ভাল করে দেখেছেন। বুঝে নিন কি হতে চলেছে।
৭। প্রত্নতত্ত্ব আনা নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হোম বাউন্ডকে। এর বিদেশী মালিক ১৯৭৫ সালে আরেকটি প্রত্নতত্ত্ব চুরি মামলায় এদেশে জেল খেটেছে।
৮। এদেশের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, সে হিসেবে ফ্রান্সের সম্পদ এত সমৃদ্ধশালী না। তাই ওরা সবসময়ের অন্যের সম্পদের দিকে হাত বাড়ায়। এত প্রতিবাদের পরও কিছু লোক এদের সাফাই গেয়েছেন। ডঃ কামাল হোসেন নামক ভন্ডগুলো তাদের একজন। সে বিবৃতিও দিয়েছে তাদের পক্ষে।
৯। আইয়ুব কাদরী গ্যারান্টী দিয়েছিলেন, সম্পদের কিছু হবে না। আমরা পদত্যাগ চাই না, টাকা চাই না, পয়সা চাই না - আমরা ফিরে পেতে চাই আমাদের সব সম্পদ।
১০। ব্যারিস্টার মইনুল দেখলাম আজকে বলছেন "কোথায় এয়ারপোর্টে কি চুরি গেছে"? সিংহের ঘরে যে অকাল কুষ্মান্ড জন্ম নিতে পারে, তার প্রমাণ আবার দেখলাম। এদেশের অমূল্য সম্পদের প্রতি এমন ভাব দেখানো একজন কিভাবে এখনও দেশের উঁচু পদে আসীন? বংগবানী কবিতার লাইন গুলো নিজের মত করে সাজিয়ে বলছি -
"দেশের সম্পদের প্রতি যার এত অবজ্ঞা, এমন কুলাংগার সন্তানকে এই দেশের দরকার নেই। "
স্বার্থটি কি তবে মইনুল গংদের? কিভাবে কাদরী গ্যারান্টি দিয়েছিলেন? যেহেতু গ্যরান্টি দিয়েছিলেন, তাই এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
আর মইনুলের মত ৬ খুনের আসামীরা এত সাহস পায় কোথা থেকে যে দেশের সম্পদ চুরিকে বলে "কোথায় এয়ারপোর্টে কি চুরি হয়েছে!!" শুধু বলাই নয়, ঐ সময় তার যে বডি ল্যাংগুয়েজ ছিল - আমি সাংবাদিক হলে দুই গালে থাপ্পড় মেরে মুখে থুতু ছিটাতাম।
সব পয়েন্টগুলো মেলান। কি বুঝছেন?
আমার ব্যক্তিগত ধারনা - পাওয়া গিয়েছে বলে যা বলা হচ্ছে সব ভুয়া। দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
অজুহাত খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই খোঁজা যায়। গত সরকারের সব ফালতু চুক্তি বাতিল হলেও এটি কেন বাতিল হল না, জানতে চাই।
আমি যা চাই -
১। যেভাবেই হোক, যেমন করেই হোক মূল সম্পদগুলো এখনই ফেরত পেতে চাই।
২। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি'র বিচার চাই।
৩। এর সাথে জড়িত সকলের (সে যেই হোক, সরকারের কেউ হলেও) কঠোর বিচার চাই।
৪। দেশের ঐতিহ্যকে অবজ্ঞার দায়ে মইনুলের মত কুসন্তানদের বিচার চাই।
কিন্তু কে করবে এই বিচার?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১:৩৯