আমার শুধু মরে যেতে ইচ্ছে করত।। মৃত্যু একটা প্রধান বোধ হয়ে অনুভুতিতে ঘুরে বেড়াতো। আমি সধারণত রাতে ঘুমাইনা, সকালে ঘুমাতে গেলে মনে হত, ঘুমিয়ে কি হবে তার চেয়ে বরং একবারে মরেই যাই। মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ নাকে লেগেই থাকত। মরে যাওয়াটাকে খুব স্বাভাবিক কিছু মনে হত, এই আমি থাকবনা এমন মনে হত না, কারন এই আমি কিছুতেই ছিলাম না।
মস্তিস্ক বেচে থাকতে চাইত, মন ছিল লেজ কাটা শেয়ালের মত, বলত আমিতো মরেই গেছি তুমিও মরে দেখ, মরনেই সুখ।
কিন্তু আমি নিরীহ প্রাণি বলে বেচে আছি, বেচে গেছি। বেচে থাকার জন্য চেষ্টা করেছি। আমি কি আর মানুষ হত্যা করতে পারি!
বেচে থাকাটাই অস্বাভাবিক ছিল, তখন মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখা শুরু করলাম, কবিতার কাছে মৃত্যুর গল্প বলেছি। কবিতা খুব বিশ্বস্ত জমি ইচ্ছে হলেই কবর খোড়া যাত যখন ইচ্ছে তখন, মরে যাওয়া যায়।
অনুবোধ এ মৃত্যু ঘোরে ।
ঘুরে ফিরে, ঘোর হয় খুব।
মৃত্যুর ঘোর; কুহকীর সুরে
সব স্বপ্ন ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষে,
সম্মোহন আর আচ্ছন্নতায় ভেসে।
মৃত্যু দল আসে, ভাত শালিকের মত।
এই স্পষ্ট জীবনের দৃশ্য ছিড়ে খুড়ে,
মায়ার দৃশ্যে ঘিরে-
প্রবল শেকড়ে জড়ায়ে ধরে।
আমি কিভাবে ফেরাই তারে!
বন্দরে! নোঙ্গর গেড়ে আছে।
এত নিশ্চয়তা! এত অনন্ততা!
বন্ধুতা। পঞ্চমীর চাঁদের সাথে।
আমারে বোধছানি দিয়ে ডাকে।
সব সাধ ধোয়া হয়ে হয়ে-
বোধ সব ঘোলা হয়ে থাকে।
চাঁদ যেতে যেতে নুয়ে-
সাধ জাগে জাক-জমক মৃত্যুর !
কারোরে কিছুই বলার নাই। এই আমার ব্যাস্ত শহরে সবাই জীবিত, কেউ মৃতপ্রায় মানুষের গল্প শোনার জন্য থামেনা। বলতেও ইচ্ছে করেনা। জীবিতরা সব কিছু বোঝেনা। তারা ত্রিমাত্রিক, মৃত্যু চতুর্থমাত্রার।
কাল্পনার সব মৃত্যু, দৃশ্যমান সবকিছুই জীবন।
টায়ার ড্রাইভার ছেলেটার হাসি মাথায় সুই ফুটিয়ে দেয়, মনে করিয়া দেয়, আমি বেচে আছি। সদ্য বাবা হওয়া লোকটা সাইকেলের ক্যারিয়ারে মশারী নিয়ে যায়, দুই পা নেই ওয়ালা লোকটা জীবন ভিক্ষা করে। আহা! কি জিবীত শহর! বালের শহর।
মৃত্যু বারে বারে ডেকে গেছে, কেউ ফেরায় নি। যে বলেছিল "চল একসাথে মরে যাই" সেও আজ বেচে আছে। প্রচন্ড অভিমানে মৃত্যুর ডাক শুনে শুনেও ফিরে এসেছি জীবনের কাছে। কবিতা লিখেছি স্বস্তা শব্দের।
হাটতে হাটতে মৃত্যুর জন্য দাড়াই
কেউ হিসহিসিয়ে বলে না,
আরও একটু চল, মৃত্যুত আছে
ছিল, থাকবে, নিশ্চিত ।
যে কোকিল টা মাত্র উড়ে গেল
বষন্তের মৃত্যুতে সে ব্যাথাতুর।
আমিও কাহারে ব্যাথা দিয়ে চাই!
থমকে দাড়াই , চিলেকোঠার শেষ প্রান্তে।
দেখতে দেখতে অন্ধ হয় যাই।
মৃত্যুর মুখ চোখে ফেলে মায়া।
আলো এত আলো! চারিদিক ঝলসানো!
তবু কেউ আলো ফেলেনা।
চোখে কেউ পিট পিট চোখে চেয়ে থাকেনা।
যে ধূসর ঘুঘু টা -
মৃত বৃক্ষ বন ছেড়ে এসেছে
সেও উড়ে উড়ে ফিরে চায়
হুহু করে কাঁদে।
আবারও মৃত্যুর ডাক শুনি!
কেউ কি কেঁদে উঠবে মধরাতে!
ফিরে তাকাবে পিট পিট চোখে-
খুব নরম ভোরের বেলায়।
যারা নিজেকে মেরে ফেলেছে, তাদেরকে দূর্বল মনে হয়না, বোকা মনে হয় না। নিজেকে দূর্বল মনে হয়। ভাগ্য খারাপ যে আমি নিজেকে কবি ভাবি। কবিতা আমায় মরতে দিলনা। কবিতা আমায় মেরে ফেলল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯