ভোর ৫টা, প্যারিস।
মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে নিত্যদিনের মত বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছাড়ল রায়ান। বেশ কিছুক্ষণ পর কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে এল। ডাইনিংয়ের বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ হাতে নিতেই ভিউ মিররে পিছনের জানালায় চোখ গেল। জানালাটা খোলা। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রায়ান হেঁটে এল জানালার কাছে। পর্দাটা ফুলে থাকতে দেখে মুচকি হাসল। জানালার বাহিরে মুখ থেকে ফেনা ফেলে ঝট করে ঘুরে গেল। টুথব্রাশের লুকনো সুইচে টিপ দিতেই ৪ ইন্ঞ্চি ধারালো ছুরির ফলা বেরিয়ে এল। চোখের পলকে পাক খেয়ে ফুলে ওঠা পর্দায় সেঁধিয়ে দিল ফলাটা। মৃদু চিত্কার দিয়ে পর্দার আড়াল থেকে বডিটা পরল ঘরে। বুকে সেঁধিয়ে রয়েছে নিরিহ ব্রাশের মত দেখতে ছুরিটা। লাশের বুক থেকে ছুরিটা তুলে নিল রায়ান। এক মুহুর্ত হাতের কাজ কেমন হয়েছে দেখে নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে ফোনের দিকে এগুলো। দু'পা যেতেই মনের ভিতরের এলার্মটা বেজে উঠল। আঘাতটা এল পিছন থেকে। শিরদাঁরায় ভয়ানক লাথি খেয়ে উড়ে ঘরের ভেতর এসে পরল রায়ান। পরমুহুর্তে নিজেকে সামলে সোফার আড়ালে লাফ দিল। এক মুহুর্ত আগে ও যেখানে পরেছিল সেখানের কার্পেট ফুটো করল বুলেট। মেঝেতে আততায়ীর ছায়া দেখে ছুরিটা ছুরে মারল।
গলায় ঢুকে যাওয়া ছুড়িটা ধরে টানাটানি করার মাঝপথেই মারা গেল আততায়ী। পিছনে দরজা ভাঙ্গার শব্দে ঘুরে তাকাল রায়ান।। একটা লুগারের লোলুপ দৃষ্টি চেয়ে রয়েছে ওর দিকে। ৩য় আততায়ীর হাত লুগারের ট্রিগারে চেপে বসতে দেখে চোখ বন্ধ করল রায়ান। গুলির শব্দটা বিষ্ফোরণের মত ঘর কাঁপাল। কোন ব্যাথা অনুভব না করে পরপার দেখতে চোখ খুলল রায়ান। চোখের সামনে তৃতীয় আততায়ী টলে উঠে মেঝেতে পরে যেতেই তার পিছনে করিডরে ওয়ালথার উঁচিয়ে ধরে রাখা মানুষটার উপর চোখ পরল। মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গিয়ে দ্বিতীয় আততায়ীর গলা থেকে ছুরিটা তুলে নিল। বাটন চাপতেই অদৃশ্য হল ছুরির ফলা। আগন্তুকের উদ্দশ্যে বলল রায়ান,
-তোমাকে আসা করিনি এইসময়।
আগন্তুক ঘরে ঢুকে একটা লাশকে সার্চ করতে করতে জবাব দিল,
-ছুটি কাটাতে তো এরচেয়ে ভাল জায়গার কথা মনে পরেনা আমার।
মুচকি হাসিটা গোপন করল রায়ান,
-ইনডিড।
মুখ ধুয়ে আবার বলল,
-নিচের বারটা মোটামুটি ভাল মানের। এত সকালে খালিই থাকার কথা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে আমি তৈরি হয়ে নিতে পারি।
-ওকে। সি ইউ ইন ১৫।
দরজার দিকে রওনা হল আগন্তুক। পিছন থেকে বলল রায়ান,
-গুড টু সি ইউ, জেমস।
মৃদু হেসে জবাব দিল এসপিওনাজ জগতের কিংবদন্তি,
-মাই প্লেজার।
১৫ মিনিটের মাথায় নিচে নেমে এল রায়ান। গায়ে হালকা নীল রঙের একটা শার্ট আর কাল একটা প্যান্ট। জ্যাকেটটা হাতে ঝুলছে। কাউন্টারের সামনে জেমসের পাশের চেয়ারটি দখল করল। বারটেন্ডারকে বিয়ারের অর্ডার দিয়ে চুপচাপ বসে রইল। জেমসই প্রথমে মুখ খুলল,
-প্যারিসে কি মনে করে? কাজ নাকি অন্য কিছু?
-দুটোই।
এমনসময় এক লোকে এসে জেমসের সাথে নিচু গলায় আলাপ করে একটা কাগজ হাতে দিয়ে চলে গেল। কাগজে চোখ বুলিয়ে একটা এ্যড্রেস দিল রায়ানকে। বলল,
-এর সাথে যোগাযোগ করলেই আশা করি তোমার কাজ হয়ে যাবে।
মুচকি হেসে জবাব দিল রায়ান,
-বাহ! বেশ দ্রুত কাজটা সেরেছ দেখেছি।
-ছুটি কাটাচ্ছিলাম। তোমার মেসেজ পেয়ে কিউ এবং কিছু বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতেই যা চাইছিলাম পেয়ে গেছি।
-ও। ধন্যবাদ।
হঠাত্ ঘুরে কাউন্টারে পিঠ দিয়ে বসল রায়ান। গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
-ব্যাপারটা অনেক জটিল আর প্যাঁচানো জেমস। তুমি তোমার সব ট্র্যাক মুছে ফেলো।
-আই নো হোয়াট টু ডু। ড্রিঙ্কসের জন্য ধন্যবাদ। টেক কেয়ার।
জেমস চলে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ বসে রইল রায়ান। এরপর কাগজটা খুলে পড়ে ফায়ারপ্লেসে ফেলে পুরিয়ে ফেলল। ঘরে ফিরে জিনিসপত্র প্যাক করে বেরিয়ে এল। টার্গেট পেয়ে গেছে। বসে থাকা এখন আর ওর কাজ নয়।
ভ্লাদিমির মেটাল ওয়ার্কস থেকে সেদিনের মতো কাজ শেষ করে বেরিয়ে এল ওয়ার্কারদের দলটা। ছোটছোট দলে ভাগ হয়ে যার যার পথে এগিয়ে গেল। তিন বন্ধুর একটি দল এগিয়ে চলল সেভেন্থ ব্লক দিয়ে। প্রতিদিনের মতো প্রাসাদসম এক বাড়ি দেখে আফসোস করতে লাগলো দুজন।
একজন প্রশ্ন করল,
-আচ্ছা দিমিত্রি তুমি কিসের তৈরি?
জবাব না দিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিল দিমিত্রি। কিছু বলল না।
প্রশ্নকর্তা আবার বলল,
-তুমি শালা চোখের সামনে সরগ দেখলেও নির্বিকারভাবে এগিয়ে যাবে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি!
অপর বন্ধু জবাব দিল,
-বাজি ধরার জন্য আগে কোন বেকুবকে খুঁজে বের করতে হবে তোমার। কারণ তাছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে বাজি ধরবে না।
-হুহ! ঠিক আছে যাও। যদি তুমি ওকে অবাক বা চমকে দিতে পার তাহলে আমি তোমাকে ১০ ডলার দেব।
-তোমার পকেট থেকে ঐ পরিমাণ টাকা বের হলেই ও চমকে যাবে।
এইরকম হাসি ঠাট্টা করতে করতে যার যার বাড়ি এসে পড়ল এবং ওরা আলাদা হয়ে গেল। সবার শেষে দিমিত্রির বাড়ি। ছিমছাম, সুন্দর, ছোট একটি বাসা। সদর দরজা বন্ধ করে কোট হ্যাঙ্গারে ওভার কোটটা ঝুলিয়ে দিল সে। হঠাৎ বহু পরিচিত একটা অনুভূতি হল ওর। ঝট করে নিচু হয়ে পা থেকে ছোট পিস্তলটা বের করে আনল। ধীরে ধীরে নিচতলা সার্চ করে কাউকে পেল না, কারও থাকার কোন নমুনাও পেল না। যা যেখানে রেখেছিল সেখানেই আছে। কিন্তু বহুদিনের সঙ্গি অনুভূতিটাকে অগ্রাহ্য করতে পারল না। পা টিপে টিপে দোতলায় উঠে এল। মাত্র দুটো ঘর আছে দোতলায়। প্রথমে বেডরুমটা চেক করল সে। কাউকে না পেয়ে এগুলো স্টাডির দরজার দিকে। ও প্রায় নিশ্চিত এখানেই যে ঢুকেছে সে লুকিয়ে আছে। দরজাটা খুলে ভিতরে উঁকি দিতেই জমে গেল। টেবিলের জানালার ফ্রেমে পা উঠিয়ে ওর দিকে পিছন ফিরে চেয়ারে বসে আছে আগন্তুক। ঘরে আর কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে নিল দিমিত্রি। উদ্যত পিস্তল হাতে সুইচবোর্ডের দিকে হাত বারাল। হঠাৎ আগন্তুক কথা বলে উঠল,
-এতো বোরিং লাইফ কি কারনে তুমি বেছে নিতে পারলে সেটা আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না।
কথাটা ওকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে বুঝতে পেরে জবাব দিল দিমিত্রি,
-কারও মাথায় যাতে না আসে সেটাও একটা কারণ।
-তাহলে দেখা যাচ্ছে তোমার উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।
খট করে লাইটের সুইচ টিপল দিমিত্রি। আগন্তুক ওর দিকে ঘুরে বসলো। অস্ফুস্টে বলে উঠল দিমিত্রি,
-কর্নেল রায়ান! আপনাকে কখনই আশা করিনি। শেষবার শুনেছিলাম পাততাড়ি গোটাতে হয়েচে আপনাকে।
-যাক! তাও যে কিছু জানতে, এখনও যে চোখ-কান আছে তোমার সেটা শুনে ভাল লাগলো।
শ্রাগ করল দিমিত্রি। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমার শিডিউলটা খুব টাইট। তাই দয়া করে যদি হঠাৎ দর্শনদানের কারণটা বলতেন...
এক হাত তুলে ওকে থামাল রায়ান। বলল,
-আমার একটাই প্রশ্ন, এই অ্যাপল পাই লাইফ তুমি পছন্দ কর নাকি কিছু একশনের জন্য প্রস্তুত?
এক মুহূর্ত সময় নিল জবাব দিতে,
-শুনতে কখনই আমার খারাপ লাগে না। বলে যান।
চেয়ার ছাড়ল রায়ান। জ্যাকেট গায়ে চরিয়ে বলল,
-তাহলে ডিনারটা আমার সাথেই কর।
বিশ মিনিট পর সেই ছোটখাটো প্রাসাদের মত বাড়ির গেটে এসে দাঁড়াল রায়ান আর দিমিত্রি। রায়ান রিমোট টিপে দরজা খুলতেই মন্তব্য করল দিমিত্রি,
-অলয়েজ রিমেইন দা ম্যান উইথ স্টাইল...
মুচকে হেসে ভেতরে এসে ঢুকল রায়ান। দোতলায় উঠতেই নির্জন বাড়ির লুকানো পরিবেশ চোখের সামনে ভেসে উঠল দিমিত্রির। কেউ ফাইল নিয়ে ছুটছে, কেউ ঝুঁকে আছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে। সবাই ব্যস্ত। একটা কনফারেন্স রুমে নিয়ে এল রায়ান। দিমিত্রিকে বসতে বলে ইন্টারকমের রিসিভার তুলে নিল,
-জেসন এবং তার টিমকে কনফারেন্স রুমে পাঠাও।
-ইয়েস স্যার।
রুমে ঢুকল জেসন এবং আরও চার এজেন্ট। চারজনই স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং পাওয়া। পরিচয় করিয়ে দিল রায়ান,
-এজেন্ট জেসন স্ট্যালিয়ন, হপার এণ্ডারসন, এরিক ভালদেজ, আলিন ইউসুফ, রজার ক্যাম্পবেল। আর ইনি হচ্ছেন কমান্ডার ফেলিক্স হুয়েরা।
পরিচয় হল। এবার কাজের কথায় আসা যাক। জেসন, শুরু কর।
-একটা ইমারজেন্সি সিচুয়েশনের জন্য আমরা সবাই একত্র হয়েছি। তাই কাজের কথায় মোটামুটি সংক্ষেপে আসছি। কয়েক বছর আগে আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, চীন সহ আরও কিছু দেশ থেকে বেশ কিছু ২য় সারির বিজ্ঞানী গায়েব হয়ে যায়। আমাদের সাহায্য কেউ না চাওয়ায় আমরা রুটিন চেক ছাড়া আর কিছুই করিনি সে ব্যাপারে। কিন্তু কিছুদিন আগে পুরনো ফাইলপত্র রিচেক করার সময় আমাদের এনালাইজার একটি প্যাটার্ন খুঁজে পায়। হারানো বিজ্ঞানিদের কেউ নিউক্লিয়ার এক্সপার্ট, কেউ রাডার টেকনোলোজিতে এক্সপার্ট, কেউ হেভি ওয়েপন এক্সপার্ট। যাই হোক সব মিলিয়ে দেখা যায় এরা আলাদাভাবে সাধারন বিজ্ঞানী। কিন্তু একত্রে? একত্রে এরা এক অপরাজেয় শক্তি। এছাড়াও পুরনো সেই সময়ের কল রেকর্ডসহ অন্যান্য ব্যাপার ঘেঁটে ঐ কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের উপর তদন্ত চালান হয়। শেষমেশ আমরা দেখি আমেরিকান মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের এক মেজর এই কেসে সবচেয়ে ভাল ফলাফল দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায় তিনি কাজ বন্ধ করে দেন। বলতে গেলে কোন কারণ ছাড়াই তাকে ইন্টেলিজেন্স থেকে বিদায় দেওয়া হয়। এভাবে প্রজেক্ট শাট ডাউনের মর্মোদ্ধার করা যায়নি। তবে ওনার লাস্ট রিপোর্ট অনুসারে তিনি একটি চূড়ান্ত নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আশঙ্কা করছিলেন। চূড়ান্ত শব্দটার উপর জোর দিল জেসন।
কথা শেষ করে সবার মুখের উপর একবার চোখ বুলাল জেসন। ওর দৃষ্টি এসে থামল রায়ানের উপর। রায়ান বলল,
-শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেই প্রাক্তন মেজর বর্তমানে প্যারিসে আছেন।
ফেলিক্সের দিকে ফিরে বলল,
-তুমি আর আমি বরং তার সাথে একটু দেখা করে আসি। আপত্তি নেই তো?
-নাহ। চল যাই, শুনে আসি তার রুপকথা।
এপার্টমেন্ট নাম্বার ২৪। বন্ধ দরজার সামনে বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছে রায়ান আর ফেলিক্স। বেশ খানিক পরেও কেউ জবাব না দেয়ায় লকপিক ইউজ করে তালা খুলে ঢুকে পড়ল ওরা। ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল ফেলিক্স,
-মনে হচ্ছে আমরাই শুধুমাত্র বুড়ো বয়সে রুপকথায় আগ্রহী নই।
পিছনে পিস্তলের বোল্ট টানার শব্দে চমকে উঠল ওরা। ধীরে ধীরে মেয়েলি পদশব্দ এসে থামল রায়ানের পিছনে। বলল,
-সব ঘর খুঁজেও কাউকে না পেয়ে আবার ফিরে আসাটা বেশ বড় বোকামির লক্ষণ! নাকি নতুন কোন টীম?
পরিচিত গলার আওয়াজ চিনতে পেরেও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল রায়ান। জবাব দিল ফেলিক্স,
-নতুনই বলতে পারেন, তবে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরনে বিশ্বাসী।
-নিজেদের অস্ত্র খুব যত্নের সাথে বাম হাতে বের করে পিছনে ছুঁড়ে দিন।
নির্দেশ পালন করল ওরা। অস্ত্রগুলো তুলে নেওয়ার আওয়াজ শুনল ওরা। একটা অস্ত্র তুলতে গিয়ে হালকা থমকে যাওয়াটাও ফাঁকি দিতে পারল না রায়ানকে। আবার বলল,
-বন্ধুত্বপূর্ণ কিনা সে ব্যাপারে কিভাবে নিশ্চিত হব?
-আমরা কেবল আপনার পুরনো এক কেস সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। আর কিছুই না।
-তাই? কি করে বুঝব যে আপনারা আসলে আমাকে খুন করতে আসেননি?
জবাব দিল রায়ান,
-জানা খুব সহজ,
বলতে বলতে ঘুরে পিছন ফিরল রায়ান,
-চমকে গেছ তা বলবে না কারণ আমার পিস্তলটা তোলার সময়েই তুমি যা বুঝার বুঝে নিয়েছ।
মৃদু হাসল রিনিস,
-হ্যালো সৌরভ।
-কাজের কথায় আসি?
-তুমি কোন ব্যাপারে জানতে চাও?
-প্রজেক্ট ডেডএন্ড।
মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠল রিনিস। প্রশ্ন করল,
-কিভাবে আমি তোমাকে বিশ্বাস করব? কিভাবে আমি বুঝব যে তুমি অন্যদের মতো সব জানার পর আমাকে মারতে চাইবে না?
ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে পিস্তলের নলটা নিজের কপালে ঠেকতে থামল রায়ান। বলল,
-পুল দা ট্রিগার। আ বুলেট অলয়েজ টেলস দা ট্রুথ।
টানটান উত্তেজনায় ভরা একটি মিনিট কেটে গেল। শ্রাগ করে পিস্তল নামিয়ে নিল রিনিস।
কিছুক্ষণ পর হাতে কফির মগ নিয়ে কাজের কথা শুরু হল। রিনিস বলল,
-তদন্তের প্রধান টার্গেট ছিল আমেরিকান রাডার এক্সপার্ট আলবার্ট হিউগো। আমি একসময় ওনার স্টুডেন্ট ছিলাম। উনি কিডন্যাপ হওয়ায় পার্সোনালি আমি এব্যাপারে তদন্তের দায়িত্ব নেই। ধীরে ধীরে একটা ছেড়া সুতো আবিস্কার করি। গিট দিতে দিয়ে দেখি কালসাপ। প্রায় দুমাস ধরে শুধু আমাদের দেশের নয়, বেশ কয়েকটি দেশের সাধারন কিছু বিজ্ঞানী গায়েব হতে শুরু করে। তারা কোন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ছিল না, কোন কিছুর আবিষ্কারকও ছিল না। বলা যায় তারা নিরপেক্ষ শান্তিপ্রিয় বিজ্ঞানী। তাঁদেরকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিতে চাইলেও তারা সবসময় উপেক্ষা করেছেন। তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড, কি ব্যাপারে এক্সপার্ট এসব নিয়ে অনেকটা অসচেতনভাবেই আমি একটা ধারনায় চিন্তা করতে শুরু করি। প্রায় এক মাস আমি দেশ থেকে দেশে ছুটে বেড়াই। এই ছুটে বেড়ানো বৃথা যায়নি। অনেক গভীর এক নীল নকশা আবিস্কার করি আমি। এর পেছনে এমনকি সিআইএ –র হাতও আছে ধারনা করতে শুরু করি। তবে এ ব্যাপারে সিওর হই যখন আমাকে ছুটি বাতিল করে হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আমি তাঁদেরকে এই নীল নকশার ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ফলাফল শুন্য। আমাকে অন্য কেস চাপিয়ে দিতে চাইল। আমার কাছে প্রমান চাওয়া হল, কিন্তু আমি তখন সতর্ক হয়ে গিয়েছি। কোন প্রমান নেই বলে দেই। তারা এটাকে প্রজেক্ট ডেডএন্ড নাম দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়। আমি কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির ইস্তফা দেই। তবে ওরা আমার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। কয়েক জায়গায় ব্যাপারটা নিয়ে ধর্না দেই আমি। কিছু বড় কর্মকর্তার সাথেও পূর্বপরিচয়ের খাতিরে দেখা করে এ ব্যাপারে জানাই। কিন্তু সাহায্য করেনি কেউ। বরং কেউ কেউ আমাকে ফাসিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেছে। আমার নিজের প্রাক্তন ডিপার্টমেন্টকেই আমাকে শেষ করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়। ছয়মাস আমি প্রান বাঁচাতে ছুটে বেড়াই।
থেমে ইতস্তত করে আবার বলতে শুরু করল রিনিস,
-এরপর আর তেমন সমস্যা হয়নি। কিছুদিন আগে হঠাৎ এক সারভেইলেন্স টিমের চোখে ধরা পরে যাই আমি। তারপর আজ ঘরে ঢুকে দেখি এই অবস্থা। ওরা কোনভাবে জেনে গেছে সেই প্রমানগুলোর কথা।
হঠাৎ খড়খড় করে উঠল রায়ানের বেল্টে আটকানো ওয়াকিটকি। তুলে নিয়ে সুইচ টিপল রায়ান। ওর এক এজেন্ট রিশাদের গলা ভেসে এল,
-স্যার সরি টু ডিস্টার্ব, কিন্তু মনে হচ্ছে আপনারা কিছুক্ষনের মধ্যেই গেস্ট রিসিভ করতে যাচ্ছেন।
-কতজন?
-১০/১২।
দ্রুত হিসেব কসে নিল রায়ান,
-তুমি সরে পর। সেইফ হাউজে চলে যাও।
-কিন্তু স্যার...আপনাদের ব্যাকআপ?
-যা বললাম কর।
-ইয়েস স্যার।
ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে কথা শুনছিল ফেলিক্স। হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। রায়ানের দিকে ফিরে জিগ্যেস করল,
-প্ল্যান অব এটাক?
-প্ল্যান অব এস্কেপ। রিনিস, তোমার এখান থেকে এস্কেপ রুট কোথায়?
-ফায়ার এস্কেপ?
জানালার দিকে ইংগিত করল রিনিস। মাথা নাড়ল ফেলিক্স। হাতে উদয় হয়েছে ওর পিস্তল। জানালায় মাথাটা উদয় হতেই গুলি করল। বলল,
-প্রফেশনাল লোক। সবই জানে।
রিনিসের দিকে ফিরল আবার রায়ান,
-আর কিছু?
-ছাদে?
-ছাদে যেতে হলেও বারান্দায় পৌছতে হবে। নো ওয়ে।
দরাম করে লাথি পড়ল দরজায়। দরজায় তিনটে স্পেশাল লক থাকায় কিছুই হল না। তবে বেশিক্ষন এ অবস্থা থাকবে না। দ্বিতীয়বার দরজায় লাথি পড়ল, এরপর তৃতীয়বার। হঠাৎ এক আইডিয়া এল রায়ানের মাথায়। দৌড়ে কিচেনে এসে ঢুকল। কিচেনের এক কোনে যা খুঁজছিল পেয়ে গেল। কিচেনের ওয়েস্ট ডাম্পিং শ্যাফট। এস্কেপ রুট হিসেবে মন্দ নয়। ডাক দিতেই কিচেনে হাজির হল রিনিস আর ফেলিক্স। রায়ানকে শ্যাফটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই ঘটনা আঁচ করতে পারল ওরা। রায়ান বলল,
-ফেলিক্স, প্রথমে তুমি।
-তোমার রুচিবোধের ব্যাপারে আমি খুবই উদ্বিগ্ন বোধ করছি।
বিড়বিড় করতে করতে শ্যাফটে ঢুকে গেল ফেলিক্স। তারপরপরই রিনিস।
বের হতে গিয়েও থেমে গেল রায়ান। ফিরে এসে স্টোভের গ্যাস নভ পুরো খুলে দিল ও। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেতেই ঢুকে পড়ল শ্যাফটে। শেষ মুহূর্তে নিজের লাইটারটা জ্বেলে ছুঁড়ে দিল শ্যাফটের মুখ লক্ষ করে। গরম আগুনের ধাক্কায় আর বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠল। সোজা শ্যাফটের নিচে অপেক্ষমাণ দুইজনের সামনে এসে পড়ল কালিঝুলি আর ময়লামাখা রায়ান। কিন্তু ওর অবস্থা দেখে অন্যরা হাসতে পারল না, তাদেরও চেহারার একই হাল।
ঝেরেঝুরে যতটুকু সম্ভব পরিস্কার হয়ে রাস্তার দিকে রওনা হল ওরা। এই অবস্থাতেও রসিকতা করতে ছাড়ল না ফেলিক্স,
-কুকুরদের জন্য তিনটে লোভনীয় খাবার হেঁটে যাচ্ছে। বাড়তি গন্ধের ফ্লেভার যুক্ত।
মুচকি হাসল রিনিস, রায়ান নির্বিকার।
রাস্তা পার হওয়ার জন্য কিনারে এসে দাড়াতেই দূর থেকে ৫জন লোককে ছুটে আসতে দেখল। একনজরেই ওরা যে চিহ্নিত হয়ে গেছে বুঝতে পারল ওরা। ট্রাফিকের হালকা ফাক পেয়েই দৌড় দিল রিনিস। রায়ান বা ফেলিক্স কিছু করার আগেই ওদের হতভম্ব চোখের সামনে রিনিসকে একটা দ্রুতগামি স্পোর্টসকার ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে উড়িয়ে নিয়ে ফেলল। ছুটে গেল ওরা। রিনিসের মাথা নিজের কোলে নিল রায়ান, ওদিকে ব্যাস্ত রাস্তায় গাড়ি থামাতে ব্যাস্ত ফেলিক্স। হঠাৎ রিনিসের ঠোঁট নড়ে উঠতে ওর মুখের কাছে কান নিল রায়ান। বিড়বিড় করে একটা ব্যাংকের ঠিকানা, লকার নাম্বার আর লক কি বলল রিনিস। একটু থেমে আবার বলল,
-তোমাকে একটা কথা কখনও বলা হল না সৌরভ। ভয় পেও না। না বলে আমি কিছুতেই বিদায় নিতে চাই না। কথাটা হল...
অস্পষ্ট হয়ে গেল এরপরের কথা। কারও শোনার কথা না। কিন্তু রায়ান কি আদৌ শুনতে পেয়েছিল?

আলোচিত ব্লগ
আমরা যেমন আমেরিকান পণ্য বয়কট করছি, আমেরিকা আমাদের বয়কট করলে কী হবে?
কোক, পেপসি বা অন্যান্য খাবার কিংবা কসমেটিকসের আমেরিকান পণ্য আমরা বয়কটের ডাক দিয়েছি, ইজরায়েলি পণ্য বলে। যদিও এর মধ্যে সবগুলো ইজরায়েলিই তো নয় ই, আমেরিকান পণ্যও নয়।
এসব নিয়ে আমেরিকার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্পের ট্রারিফ নিয়ে পাগলামী বিশ্ব স্টক মাকের্টে তোড়পাড়। এখন কি বিনিয়োগের ভালো সময়?
যাদের ডোনল্ড ট্রাম্পের মতন প্রসিডেন্ট আছে তাদের পাগল দেখতে অন্য কোথাও যাইতে হয় না্। প্রতিদিন টিভিতেই ট্রাম্পকে দেখে তারা।
২০২৫ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিরো আলমদের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া রত্নরা
আশিক চৌধুরী সেদিন বলেছিলেন, মার্কিন শুল্কারোপ আমাদের জন্য ভালো সংকেত ।
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে আমি সুযোগ হিসেবেই দেখছি। কারণ যে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে—... ...বাকিটুকু পড়ুন
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামরিক জান্তার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত ?
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফেসবুক পোস্টে সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ— মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফেরত নিতে প্রস্তুত! আরও ৭০ হাজার যাচাই-বাছাইয়ে আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্মৃতি নামের পরশপাথর
ফিরে ফিরে আসা
ভালুকা ছেড়েছি আট বছর হলো। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালুকা ও এর আশেপাশে কয়েক জায়গায় বসবাস করেছি, কোচিং করিয়েছি, স্কুলে পড়িয়েছি। বেকারত্বের সময়ের কত... ...বাকিটুকু পড়ুন