তোমার আমার ক্ষন পল মুহূর্তগুলো টমেটোর মত টুকটুকে লাল হয়ে উঠছে দিন দিন। বুঝিবা ফলনের তিথী এল ওই। আলগোছে বসানো কচেকচে সবুজ বোটায় আর ধরছে না ওজনদার অনুরাগ।
টুপ করে খসে যখন পড়ল সেদিন আলসেবেলায়, টেরটি পেলাম না কেউই। আমি কেবল কাঁধ বেঁকিয়ে তাকালাম একবার বিছানামুখি আয়নাটায়। উবু হয়ে বসে লিখতে থাকা তুমি মুখ তুলে হাসলে, দু সেকেণ্ড পর মুখটা নামিয়ে নিলে। আয়নার ফ্রেমে বন্দী হল তোমার হাসি।
তবু কি যেন হয়ে গেল! মিষ্টি লাগল না আগের মত তেমন কিছুই। মনের রাডারে হঠাৎ পড়ল ধরা "চাল নেইই এর বিরক্তি" কিংবা "না কেনা কোনো জুতোর আক্ষেপ"।
আমাদেরই অলক্ষ্যিতে সুযোগ বুঝে হামা দিয়ে এল বর্গীর দল। কুড়িয়ে নিল খসে পড়া টুপটুপে টমেটো। ঝকঝকে ধারালো ছুরি দিয়ে ফালি ফালি করে ফেল্লো দুজনার প্রেম। নুনের আশায় এদিক ওদিক চাইতেই চোখাচোখি হল হুলোর সাথে।
হুলো, মানবশিশুর অনুপস্থিতিতে এ বাড়ির সন্তানপ্রায়। দায়িত্ববান পোষ্যের মতই ক্ষিপ্রতার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমাদের প্রেমফল বাঁচাতে। চলল তুমুল লড়াই দস্যুতে-পোষ্যতে।
তুমি- আমি হুলোটাকে অকারণ লাফাতে আর গড়গড়িয়ে গোঙাতে দেখে বকে দিলাম বেশ করে। কিছুতেই ফেরাতে না পেরে মাঝারি গোছের হাই তুলে লেপের মাঝে তলিয়ে গেলে তুমি। আমিও বারেক ভ্রু কুঁচকে ফের চোখ ঢুকিয়ে দিলাম ল্যাপটপে। জুৎসই লাগছিল না এই সব ঘরকন্নার দিনলিপি।
ওদিকে অনেক ঘাম ঝরিয়ে লোম খসিয়ে অতি প্রাকৃত যুদ্ধে রত বাড়ির বেড়ালটা। ছিনিয়ে আনবেই দুজনার টইটম্বুর প্রেমের সেই মাদকতাময় অনুভব। কে জানে কতক্ষণ লড়েছিল, কতটা কঠিন ছিল শুভ-অশুভর এই যুদ্ধ! শুধু যখন ফিরে এল লক্ষ্মী পুষি দুজনার মাঝে, কোলে নিয়ে হামলে আদর করলাম খুব দুজনে। আর অনুরাগের টকটকে লাল টমেটোখানা তোমার আমার মাঝে একফাঁকে আলগোছে রেখে চলে গেল সে । তারপর কি জানি কী হয়ে গেল আবার! আদরের উত্তাপে উষ্ণ হলাম খুব। চাল-ডাল, ধনে পাতা আর শপিংএর লিস্টি ছড়িয়ে গেল বেড়ালের কোলে , বারান্দার চড়ুইয়ের খড়কুটোয় আর আয়নায় বন্দী তোমার হাসিতে।
শেষমেষ বেছে বেছে ভীষন তুমি-আমিময় একখানা ছবি খুঁজে নিয়ে অনেকখানি মিষ্টি মাখিয়ে তুলে দিলাম ফেসবুকের ওয়ালে।