শ্রমআইন সংক্রান্ত কোনএক সেমিনারে জাষ্টিস নির্মলেন্দু ধর'কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমাদের নতুন "বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬" -এর নানান ধারায় অসামন্ঞ্জস্যের কারন সম্পর্কে। সাধারনত নতুন আইনে নতুন নতুন সংযুক্তির সাথে সাথে পুরানো ভুলগুলোও শুধরে নেয়া হয়, আমাদের ক্ষেত্রে তা হয় না কেন?
মৃদু হেসে উনি বলেছিলেন, - একটা গল্প শোনেন, তারপর পাবেন উত্তর।
দেশের এক উচ্চপদস্হ আমলা, এক ধর্মগুরুর একনিষ্ঠ ভক্ত। গুরুর নিবাস নিউয়র্কে। অতিবৃদ্ধ গুরু শেষ বারের মতো সম্মেলন ডাকলেন, আমলা যাবতীয় কাজকর্ম ফেলে ছুটে গেলেন সম্মেলনে। সৌমক্রান্তি গুরু একটানা নানা বিষয়ে বানী দেয়ার পর হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে উদাস নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ বুজেঁ রইলেন, যেমনটা ভাব ধরে মাঝে মাঝে গুরুরা।
বেশ কিছুক্ষন পর চোখ মেলে বললেন - "অনেকদিন ধরে সবাইকে বলবো ভাবছি বলা হয়ে ওঠেনি কিছুকথা, যদিও মনে পড়ে সবসময়ই। এই যে আমার এই আমি হয়ে ওঠা, এতো সম্মান-প্রতিপত্তি, এই সবই সম্ভবপর হয়েছে এক নারীর কারনে, আমার অন্তরের কাছের সে, আমার জীবনে তার অবদান অনস্বীকার্য। ............তবে সেই নারী আমার স্ত্রী নন"।
এটুকু বলে গুরু চুপ হয়ে চোখ বুজলেন। চারপাশে জোর গুন্ঞ্জন, হতবাক সবাই। কি, বলছে কি গুরু? এতোদিনের শ্রদ্ধা, আসক্তি সব টলটলায়মান। প্রায় সবাই বীতশ্রদ্ধ। চোখ মেলে গুরু শান্তভাবে ভক্তদের প্রতিক্রিয়া দেখলেন, ফিসফাসের মাঝে গুরু হাত তোলায় থেমে যায় সব।
ভাবধরা গলায় উনি বললেন - "না, তিনি আমার স্ত্রী নন, সে নারী আমার মা"।
হাহাকার পড়ে গেল চারিদিকে। নিজেদের ছোট মনের জন্যে নিজেরাই ধিক্কার দিতে লাগল। যারা বেশি উচ্চবাচ্য করছিল, তারা কান্নায় গড়াগড়ি, ছি: ছি: নিজেদের কুটিল পাপবোধের কারনেই কুটিল ভাবনা এসেছে মনে। গুরুর প্রতি মমতা বেড়ে গেল তাদের আরো বেশি।
আর যাই শিখুক না কেন সম্মেলন থেকে মানুষকে তাক লাগানো এই পদ্ধতি জানতে পেরে আমাদের আমলা সাহেব বেজায় খুশি। অল্পক'দিন পর কি এক কারনে তার সম্মানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। আমলা ভাবলেন এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না, এটাতেই প্রয়োগ করবেন ওই ভাব লাগানো শিক্ষা। সুন্দর বক্তব্য দেবার পর, নাটকীয় ভাবে উনি গুরুর স্টাইলে শুরু করলেন, সবই ঠিকঠাক, প্রথমঅংশ বলে শেষ করার পর প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছেন সেরকমই, চোখ বুজে উপভোগ করছেন মজা টুকু। তবে বাকিটুকু ভাবধরা গলায় বলার জন্যে যেই না চোখ মেলেছেন, সামনে পেলেন রণমূর্তিধারিনী সহধর্মীনি'কে। আমলা সাহেব ভুলেই গিয়েছিলেন যে অনুষ্ঠানে তিনিও উপস্হিত থাকবেন। বাকিটুকু বলার কিবা কোন সাফাই দেবার সুযোগ না দিয়েই সহধর্মীনি কাছে এসে শুধু - "এসো আজ বাসায়" বলেই চলে গেলেন। আর আমাদের আমলা সাহেব বারবার বলতেই লাগলেন - "না, তিনি আমার স্ত্রী নন, সে নারী আমার , সে নারী আমার ........"
সেমিনারে উপস্হিত সবার হাসি থামলে জাষ্টিস নির্মলেন্দু ধর বললেন, আমাদের বেশিরভাগ লোকেদের হাল কিছুটা আমলাসাহেবের মতোই, আমরা সবকিছু কপি করতে পারি কিন্তু পেষ্ট করার সময় খেয়াল করিনা পরিবেশ পরিস্হিতির সাথে তা খাপ খায় কিনা। তাই করেছেন আইন প্রণেতারা, নতুন সংযুক্তির সাথে পুরনোর যে সমন্বয় ঘটানোর কথা তা না করে পুরনোটা পেষ্ট করে দিয়ে "বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬" -এর নানান ধারার অসামন্ঞ্জস্যের সৃষ্টি করেছেন।
[এক অর্থে আমিও করলাম কপি-পেষ্ট, কতদূর গড়বড় করলাম আল্লাহ মালুম ]