মেডিকেলে এত রোগীর ঝামেলা দেখলেই বুঝা যায় আজকাল বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে লোকজন। চারদিকে রোগীদের নানাবিধ অসুস্থথার ধরণ মনটাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। ভালই আছি বলে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা জানাতে মন চায়।
সাদা এর্পন পরা মেয়েটি যে নার্স না ডাক্তার তা নির্ধারণ করতে পারছি না। একবার মনে হয় নার্সই হবে আবার ইন্টারনি ডাক্তারও মনে হয়। অভিজ্ঞতাকে বৃদ্ধির লক্ষ্যে রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়লাম। মেয়েটির পিছে হাঠতে শুরু করলাম। নির্দিষ্ট ওয়ার্ড গিয়ে মেয়েটি তার রুমে চলে গেল।
ওয়ার্ডের ভিতরে ফাঁকা যায়গায় দাড়িয়ে মেয়েটির অপেক্ষারত থেকেগেলাম। আনমনে হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। মেডিকেলে মাসি, আয়া, খালা, ভাই, চাচা, চাচি, দারওয়ান সবার অমায়িক আচরণ দেখতে দেখতে কিভাবে যে অনেকটা সময় কেটেগেল আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি। অমায়িক শব্দের ব্যবহার আসলে একটু রেগে গিয়ে ভদ্র ভাষায় বলার চেষ্টা করছি। ওয়ার্ডের ভিতরে রোগি প্রবেশের পর থেকেই এদের আদর আপ্যায়ন শুরু হয়। নির্দিষ্ট ওয়ার্ড খুজে পেয়ে শুধু সিট কোনটি দেখিয়ে দিতে গুনতে হয় সামান্য চায়ের টাকা । সীটের সন্ধ্যান পাওয়ার পর শুরু হল বিছানা চাদর, বালিশের মূল্য পরিশোধের জন্য বিস্কুট সামগ্রী ক্রয়ের টাকা প্রদান। টাকার পরিমাণের উপর বিছানার চাঁদরের পরিষ্কার পরিচন্নতার দিক নির্ধারণ করা হয় । রোগীকে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যেতে তো শুধু চা এবং বিস্কুটের মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে।
রোগীর সাথের লোকজন এবার ছুটল ডাক্তার খোজাতে। অনেক্ষণ এই রুম ওই রুম করে ডাক্তারে সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। সেবিকাদের রুমে গিয়েও রোগীকে দেখার জন্য আসতে নূন্যতম দশবার বলতে হলো। তারপরও রোগী পর্যন্ত পৌঁছাতে অনন্তপক্ষে আরও সাত আটবার যেতে হল। কিন্তু নার্স ম্যাডামকে সাজসজ্জার জন্য রোগী পর্যন্ত যেতে ঘন্টা খানেক সময় দিতে হবে।
মেয়েটিকে দেখে আমার আনমনে ভাব চলে গেল। আরে এপ্রণ পরিহীত সেই মেয়েটিই তো। ইর্ন্টানি ডাক্তার হিসেবে আজ এ ওয়ার্ডেই আছে। দ্রুত পায়ে রোগীর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। মেয়েটি রোগি দেখছে, আর আমি মেয়েটির চেহারা দেখছি। উপরওয়ালা আসলেই অনেক সুন্দর করে মেয়েটিকে তৈরি করেছেন । রোগির সাথে কথা বলার সময় মেয়েটির চুলের একটা সংস্পর্শ পেয়েছিলাম। মনে হল, কোন ভাল মানের শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে মেয়েটির চুলের এত সফট অবস্থা। রোগির সম্পর্কে জেনে মেয়েটি কাগজে অনেক কিছুই লিখছে। লিখার ধরণ দেখে মনে হল ডাক্তার ম্যাডাম মনে হয় ভাল মানের ঔষুধের নাম লিখছেন কোম্পানীর বিবরণসহ। দারুন মায়াবী মুখের দিকে সামন্য সময়ের জন্য কোথায় জানি হারিয়েগিয়েছিলাম। কাল্পনীক চিন্তায় ঘুরপাক খেতে আসলেই দারুন ভাল লাগে বলে বেশিক্ষণ এই ভাল লাগায় থাকার সৌভাগ্য হল না।
নার্স মহোদয়া এবার ডাক্তারের পাশে এসে দাড়ালেন। ডাক্তার উনাকে সেই লিখিত কাগজটি দরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। নার্স কাগজটি নিয়ে রোগীর সাথের লোকজনকে খুজতে লাগলেন। সাথের লোক সাড়া দেয়ার পর মহোদয়া অপরুপা সৌন্দর্যের অধিকারণী ডাক্তারের নরম হাতের দ্বারা লেখনি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, উনি চা-বিস্কুট পছন্দ করেন না। তাই একটু ভাল মানের খাবারের অর্ডার করেছেন। দয়া করে খাবারগুলোর ব্যবস্থা করে উনাকে রোগীর সেবা করতে সহযোগিতা করুন।
রোগীর সাথের লোক একবার পকেটের দিকে তাকিয়ে রোগীর কাছে গিয়ে বলল চিন্তা কর না। কিছুক্ষণের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার সাহেব সামন্য কয়েকটা টেস্ট দিয়েছেন তারপর তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। আমি আপাতত নিচে থেকে টেস্টগুলো করানোর ব্যবস্থা করে আসি। টেস্টের টাকার ব্যবস্থা করার জন্য সে মোবাইলের সব কয়টা ব্যালেন্স শেষ করে ফেলল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে টেস্টের টাকার ব্যবস্থা করে রোগীকে টেস্ট করানো হল। টেস্টের করানো হয়েছে জানাতে ডাক্তারের রুমে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বলা হলে ম্যাডাম মিষ্টি ভাষায় বললেন রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত সময়ে আমরা রোগীকে পর্যবেক্ষনে রেখেছি। টেস্টের রিপোর্ট আসা মাত্রই খাবার দাবারের অর্ডার দেব। সামান্য ভাল মানের নাস্তা নিয়ে এসেই ঘেমে গেলে চলবে না।
অবশেষে রোগী সুস্থতার মূখ দেখলেন। চিকিৎসার মান ধীরগতি হলেও খারাপ না। প্রতিদিন নির্ধারিত রোগীর থেকে বেশি পরিমান রোগীর আগমন ঘটায় চিকিৎসার এই করুন অবস্থা। তারউপর এদের বড় বড় ডাক্তাররা নিজের পকেট গরম করার জন্য প্রায়ভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্থ থাকে। সবমিলিয়ে এত গরীব দেশে সরকারী ডাক্তার খানার অবস্থা দেখলে আপনি প্রথমে বুঝবেনই না এটা হাসপাতাল না মাছ বাজার। মাছ যেমন বিভিন্ন দামের হয়, সরকারী মেডিকেলের সকল কর্মকান্ড সেই একই রকম।
(অনেকদিন ধরে কিবোর্ডে হাত রাখিনি তাই অগোছালোভাবে লেখার চেষ্টা করলাম।)