মৃত্যুর এপারে জায়গাটা খুব অদ্ভুত। এক ধরনের ঘোরপূর্ণ জায়গা। পৃথিবীতে থাকলে এর নাম হয়তো দিতাম, ঘোরাঞ্চল। আমি যে পথের উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছি সেটা তুলোর মত নরম একটা রাস্তা। জানতে ইচ্ছা হচ্ছে এটা কীসের তৈরি, কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে পারছিনা। আমার পাশে যে দেবদূত হেটে চলছেন, বেশ গম্ভীর মুখ করে হাটছেন। আমি তার তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছি। তার কোনো ভাবান্তর হচ্ছেনা। আমি তাকে জিঞ্জাসা করলাম। তার মুখ আরো এক দফা কঠিন হয়ে গেল।
এখানে একটা বিস্ময়কর বিষয় হলো মনের প্রশ্নের উত্তর একটা সময় পর এমনি পাওয়া যায়। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। এটা পথটা মেঘের তৈরি। পার্থিব জীবনে যে বিষন্নতার মেঘ আমাকে ঘিরে রেখেছিল সেসবই এটা। ভেতরে জীবনের কান্নার সমান বৃষ্টিও আছে।
আমার ভাল্লাগছে, এখানে বৃষ্টি আছে ভেবে। আমার জানতে ইচ্ছে করছে এখানে কী বর্ষা আছে?
আমি দেবদূতের দিকে তাকালাম। দেবদূত ধরে ফেললো আমি তাকে প্রশ্ন করবো। সে আঙ্গুলের ইশারায় সামনে হাটতে বললো। আমি বাধ্য ছেলের মতো হাটতে থাকি। পৃথিবীতে নিষাদ মাঝে মাঝে এইরকম করতো। বিরক্ত করলে আমি তাকে হাত ইশারা করতাম, আমার বিরক্ত বুঝতে পেরে সে চুপসে যেত।
আমি হাটছি। খুবই রহস্যময় জায়গা এটা। আমি কোথায় যাচ্ছি জানিনা। জানার উপায়ও নেই। আমি হাটছি। সামনে কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। নুহাশ পল্লীতে এরকম কিছু গাছ আমি লাগিয়েছিলাম। আমি গাছের সামনে গিয়ে গাছগুলো চেনার চেষ্টা করলাম। চিনতে পাড়ছি না। বিপ্রদাশ বড়ুয়া হয়তো গাছগুলোর নাম বলতে পারতেন।
আমি হাটতে হাটতে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেলাম। এখানে ক্লান্তি কাটানো কোনো উপায় দেখছি না। পানির পিপাসা পেয়েছে। আমি দেবদূতের কাছে সাহস করে পানি চাইলাম। সে কী একটা করলো, প্লাষ্টিকের একটা জার ভর্তি পানি। আমি পানির পিপাসা ভুলে গেলাম। তার পানি আনার প্রক্রিয়াটা ধরার চেষ্টা করলাম। তাকে আরেকবার করতে বললাম। পৃথিবীতে জুয়েল আইচকে আমি বহুবার একটা জিনিস বারবার করিয়েছি। তাকে বলামাত্র সে একবার তাকিয়ে হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। আমি ভেবেছি সে হাটুক আমি আর যাবনা। কিন্তু রহস্যময় কারণে সে হাটতে থাকলে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা। আমিও হাটতে থাকলাম।
আমি একটা গাছের পাশে এসে দাঁড়ালাম। তেতুল গাছ। আমি এখানে থাকতে চাচ্ছি। সন্ধ্যা নেমে আসলে এখানে জোস্না দেখবো। দেবদূতকে কীভাবে বলবো? তার ভাবগতি খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছেনা। হয়তো রাজি হবেনা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বসল। আমি হতচকিত হয় গেলাম। ব্যাটা করে কী?
তাকে ইশারা দিলাম। অ্যাই, ওঠ। বসা চলবে না। সে মুখ বাকা করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।
নাম জিজ্ঞাসা করলাম। মুখ বাকা দেবদূতকে ভুতের বাচ্চার মতো দেখাচ্ছিল। যে ভুতের বাচ্চাগুলো ধ্রুব আকতো। ধ্রুব'র আকা ভুতগুলো মায়া ছিল। দেবদূতের প্রতি মায়া হচ্ছেনা। আমি আবারো নাম জিজ্ঞাসা করলাম।
সে নিশ্চুপ।
আমরা কোথায় যাবো?
সেরকমই চুপ সে।
আমি বসে পড়লাম। পৃথিবীর কথা মনে করার চেষ্টা করছি। আর বিড়বিড় করে কথা বলছি, আমি পৃথিবীতে থাকাকালিন মৃত্যুর পর এই জীবনটা নিয়ে ভেবেছি অনেক। আমি বেঁচে থাকাই জীবনের সব আনন্দ ধরে নিয়েছিলাম। খুব কম আয়ু নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই হয়তো এমন তাড়না ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে একটা মেলা হয়। আমি ২২-২৭ তারিখের মধ্যে যে কোনো সময় যেতাম। মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসতো। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা আমার জন্য অপেক্ষা করতো। আমি লিখতে পারতাম বলে তাদের এই ভালোবাসা। বিশ্বাস করবেনা, আমি কখনো ক্লান্ত হইনি।
আমার না পৃথিবীতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার যে নুহাশ পল্লী আছে সেখানে। আমার রাজহাসগুলোকে আমি কাঁদতে দেখে এসেছি। আমার গাছগুলো আমার কফিনবন্দী অবস্থাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা আমার দিকে তাকায়ও নি। আমার সেন্টমার্টিন যেতে ইচ্ছে করছে। নুহাশকে নিয়ে। নিষাদকে নিয়ে। নিনিতকে নিয়ে। আমি খুব একটা গান পারিনা। আমার গান গাইতে ইচ্ছে করছে।
শাওন সুন্দর করে গান গায়। আমি পারিনা।
আমি যে বর্ষায় চলে আসলাম খুব কষ্ট হয়েছিল আমার। আমার ব্যাঙ্গের ডাক শুনতে ইচ্ছে করছিল শেষবারের মতো। মাকে কী এখান থেকে জানানো যাবে আমার ইচ্ছেটা?
ছোট ভাই শাহীন ডোবা নালা চষে ব্যাঙ্গের ডাক রেকর্ড করে পাঠাবে।
তোমার বিশ্বাস হয়?
আমি দেবদূতের দিকে তাকালাম। তাকে দেখে অবাক হলাম। তার চোখে পানি।
সুন্দর একটা গন্ধ বের হচ্ছে তা গা থেকে। আরো অবাক হলাম, তার গা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। তাকে হিমু হিমু লাগছে।
আলোচিত ব্লগ
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।
ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।