স্যার, আপনার মৃত্যুর খবর শুনে আমি স্তব্দ হয় বসে ছিলাম ঘন্টা দেড়েক যাবৎ। কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু একটা ছবি দেখে মনে হলো কয়েকটা কথা বলি। আপনার মৃত্যু আমার কাছে চরম বিস্ময়কর একটা বিষয়। ন্যাকমী আপনি পছন্দ করেননা। তাও বলি, কেন যেন মনে হয় এই যে আপনার মৃত্যু হলো, এই যে দেশ জুড়ে এতো হাহাকার, এই যে আমাদের কান্না, এগুলো কোনো না কোনোভাবে আপনি দেখছেন। কাল-ই হয়তো প্রথম আলোতে 'মৃত্যুর ওপারের আকাশে ঝকঝকে রোদ' শিরোনামে কোনো লেখায় আপনি এগুলোকে হাস্যকর বলে ঘোষণা করবেন। লিখবেন, আমি খুব অবাক হই এটা দেখে যে দেশের মানুষ একটা মৃত্যুকে কত সিরিয়াসভাবে নিচ্ছে। অথচ কত বড় বড় বিষয় রয়ে গেছে তাদের।
স্যার, এটা আমার মোটেও কাল্পনিক বিষয় না। হতেই পারে। আপনার সাথে বিশ্বাস নেই।
অন্বেষার শাহাদাত ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি আপনি যখন আমেরিকায় চলে যাচ্ছেন তখন অনেক প্রকাশক আপনার বাসায় গিয়েছিল। তারা সবাই মন খারাপ করে বসে আছে এমন সময় আপনি তাদের মন খারাপে ছাই ঢাললেন। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের মন খারাপ দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। আমার অসুখ হয়েছে তোমরা আমাকে দেখানো জন্য মন খারাপ করে সামনে দিয়ে ঘুরছো। আমাকে দেখাচ্ছ।
তাদেরকে ফেললেন মহাসমস্যায়। মুহুর্তেই বিব্রতকর অবস্থা দেখা দিল তাদের মধ্যে।
স্যার, আমি শাহাদাত ভাইয়ের কথা শুনে তার চেহারায় তাকাচ্ছিলাম। ওই সময়ও তাকে ব্যাপক বিব্রত দেখাচ্ছিল।
স্যার, কীভাবে সম্ভব? নিজের অস্তিত্বকে ছাড়িয়ে কীভাবে ভাবতে পারতেন?
স্যার, আজ টিভিতে একজনকে দেখলাম আপনার জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। আপনি জানেন, যার শোক এতো প্রকট সে টিভি স্ক্রীনের সামনে আসতে পারতনা। ব্যাবসা শুরু হয়ে গেছে স্যার।
কী বলবো স্যার, যারা নিজেকে পাঠক হিসেবে দু কদম আগে বাড়িয়ে রাখতে আপনাকে গালি দিত। তারাও দেখছি অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখ্খীন হয়ে গেছে নাকি! স্যার, আপনাকে পছন্দ করে কম গালি খাইনি। আমার আশেপাশের অনেক বিদগ্ধ পন্ডিতগণ দিনের পর দিন ঝেড়ে গেছেন, ব্লগ জুড়ে বহুজন গালাগালি করে গেছেন। বিশ্বাস করবেন? আপনার জন্য আমার গালাগালিও ভালো লাগতো। অতি সাম্প্রতিক সময়ে একজন নিজেকে আমার চেয়ে আলাদা করলেন আমাকে হুমায়ূনতাড়িত আখ্যা দিয়ে।
স্যার, বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে। আমি সন্মাণিতবোধ করেছি।
স্যার, এ বছরের বইটা উৎসর্গ করেছিলাম আপনাকে। দেয়া হয়নি। প্রয়োজনও মনে করিনি। ভালোবাসা গোপনই রেখেছি। থাক।
বারো বছর আগের কোনো এক বিকেলে আপনার বাড়ীর দাড়োয়ানের মহানুভবতায় আপনার বাসায় ড্রয়িংরুমে যেতে পেরেছিলাম। আপনার হাত ধরেছিলাম। স্যার আগেও বলেছি, আমি সেই হাত স্পর্শ করে আর কিছু না হলেও লিখতে শিখে গিয়েছিলাম।
আজকে তাই এই সময়েও হরবর করে কীসব লিখে ফেললাম!
স্যার অনেক ন্যাকমী হয়ে যাচ্ছে জানি, কিন্তু কী করবো?ছবিটা দেখে কষ্ট হচ্ছিল। যে মৃত্যুকে এতো ভয় আপনার, তার জালেই ঝরালেন?
ঠিক হয়নি। আপনাকে ভালোবাসি বলে সব কাজ পছন্দ করিনা। এটাও করলাম না।
ছবি সৌজন্য : সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল