তাদের খুশি করতে মিথ্যাও বলেন। আরে, এতো ক্যালেন্ডার পাই। ঘরে টানানোর জায়গা নেই।
তারা ক্যালেন্ডার পেয়ে খুশি হয়। তাদের খুশি দেখে খুশি হন বোরহান সাহেবও।
২.
বোরহান সাহেব এই ক্যালেন্ডার দিয়ে বছর শেষে আবার নিয়েও নেন। কারন ক্যালেন্ডার দেয়ার সাথে একটা অনুরোধও থাকে তার। ক্যালেন্ডারে যেন পুরো বছরের স্মৃতী তুলে রাখা হয়। সকলেই কম বেশি বোরহান সাহেবের অনুরোধ রাখেন। তারিখের উপর ছোট করে লিখে রাখেন। এগুলো বছর শেষে বোরহান সাহেব নিয়ে যান। একা একা দেখেন? বছরে কার কেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল?
৩.
অনেক বছর হয়ে গেল। বোরহান সাহেব এই কাজ করছেন। ক্যালেন্ডার দেখে দেখে বোরহান সাহেব ‘জীবন' দেখেন। মানুষের জীবন। মানুষের কত ঘটনা। কারো ক্যালেন্ডারে থাকে আনন্দের ঘটনা। কারো বেদনার।
সকলেই বোরহান সাহেবের জন্য নিজেদের আনন্দ বেদনার দিনগুলো ক্যালেন্ডারে টুকে রাখেন।
মাঝে মাঝে কারো না কারো বাড়িতে বোরহান সাহেব চলে যান। গিয়েই জেরার সুরে জিজ্ঞাসা, কি ভাই লিখছেন তো?
৪.
এভাবেই চলে বছরের পর বছর। বোরহান সাহেব বছরের শুরুতে ক্যালেন্ডার দেন। বছর শেষে নিয়ে যান। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে হানা দেন। কি ভাই লিখছেন তো?
তারা বোরহান সাহেবের জন্য তাদের জীবনের গল্প টুকে রাখে। গল্প দীর্ঘ হয়। বোরাহান সাহেব বিস্ময়করভাবে সকলের গল্প মনে রাখতে পারেন। শুনতে চাইলে, শোনান। কোন বছর কার কি ঘটল? তারা এই ঘটনায় বিস্মিত হয়। তাদের গল্প বড় হচ্ছে বোরহান সাহেবের কাছে। তারা উৎসাহিতও হয়। উৎসাহিত হয়ে ক্যালেন্ডারে দাগ ফেলেন। একেকজন একেক দিনে ক্যালেন্ডারে দাগ ফেলেন। একেকজনের জন্য একেক তারিখ দাগ রেখে যায়।
৫.
একবার কাকতালীয়ভাবে সকলের ক্যালেন্ডারেই একই দিনে দাগ পড়ে। সকলেই কষ্ট পান। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সকলেই
অদ্ভুতভাবে একইরকম সুরে বলে ওঠেন, ইস! আমাদের গল্পটা আর দীর্ঘ হলো না। বোরহান সাহেব বেঁচে থাকলে হয়তো গল্পটা আরো দীর্ঘ হতো।
৬.
এই গল্পের লেখক হিসেবে আমিও কষ্ট পাই। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বোরহান সাহেবের জন্য।গল্পটা এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। বোরহান সাহেব বেঁচে থাকলে হয়তো গল্পটা আরো দীর্ঘ হতো।