আদালতের কোন মামলায় যদি কোন সাক্ষী মোবাইল ফোনে সাক্ষ্য দিতে চায় তাহলে হাকিম কোন দৃষ্টিতে নেবেন তা নিজেই অনুধাবন করুন। মোবাইল ফোনে বিয়ের হিড়িক যেভাবে পড়েছে, উজান পানে স্রোতের প্রভাবে বউ পালানোর যে ভাবে প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে,
তাতে ভাটির দেশের লোকের বন্যার দরকার হবে না এমনিতেই হাবুডুবু খাওয়ার সময় এসেছে।
বিকারগ্রস্ত এই সম্প্রদায় আজ যে ভাবে জেগে উঠেছে সামনের দিকে বিবাহ অনুষ্ঠান বা মোল্লা মুন্সীর দরকার হবেনা রিমোট কন্ট্রোলে টিপ তো য়ুআও য়ুআও করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবেন, দশ মাস পূরণের দরকার আর হবে না।
এমনিতে ডিজিটাল যুগ বিবাহটাও না হয় ডিজিটাল হল ক্ষতি কি?
তার পরও ধর্ম কর্ম বলেতো একটা কথা আছে , সামাজিক নিয়ম কানুন বলেতো কিছু একটা আছে। মহা সমস্যায় আছি আমরা যারা সমাজ সভ্যতায় বিশ্বাস করি, একটু আধটু ধর্ম কর্মে বিশ্বাসী , আমি এত ধর্ম বুঝিনা বাপু শুনেছি মিয়া বিবির সাথে মাঝখানে দুজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীর প্রয়োজন হয় ।
কোন কিছু চুরি করে করা আর প্রকাশ্য করা অনেক তফাত ,চোরের মন সকল সময় পুলিশ পুলিশ করে তাই বোধ হয় মহান রাব্বুল আলামিন একটি সামাজিক প্রথাকে পাকা পোক্ত করতে এমন ব্যবস্থা রেখেছেন। তাছাড়া চুরি করে বিয়ে করে কয়জন সূখী হয়েছেন তা ভুক্তভোগী ভাল বলতে পারবেন ।
চুরির পাশাপাশী অদৃশ্য সত্তার সহিত সামান্য বাক্যালাপে নাকি বিয়ে, কতটুকু শুদ্ধ!!!
সারা জীবন দেখলাম বিয়ের সময় পাত্র লজ্জায় থাকে, পাত্রী কান্নায় ভেংয়ে পড়েন (আহারে সারা জীবনের বাবার বাড়ী ছেড়ে বুঝি চলে যাচ্ছি , বাবার বাড়ীর পুকুর পাড়ে বুঝি আর যাওয়া হবে না , বাড়ীর আঙ্গিনার কুল বরই আর পেয়ারা গাছ বুঝি নীরব সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকবে। যেখানে যাচ্ছি হয়তো আরো অনেক পাব তার পরওতো...... স্বাধীনতা থাকবে না থাকলেও লজ্জা আর স্বাধীনতার মাঝে পেয়ালার কাটা বাধা হয়ে দাড়াবে, জীবন সঙ্গীটি জানি কেমন হবে আরও কত কি।
বিদায় বেলায় পাত্রীর কান্নায় পুরো বাড়ী শুদ্ধ কান্নার বাড়ীতে পরিনত হয়।
পাত্র: ও জানি দেখতে কেমন , আমাদের বাড়ীতে মানাবেতো , এখন থেকে বুঝি আমার দায়বদ্ধতা বেড়ে গেল, সংসার জীবন কেমন হয় , মাবাবা আর আমার প্রেয়শীনির মাঝে সেতুবন্ধন কেমন হবে , আগের মত মাবাবার চোঁখে থাকবতো,
আরও কতকি।
অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলাপচারীতা লজ্জা লজ্জা ভাব , লজ্জায় মুখটাও দেখাতে চায় না সেদিন, রুমাল দিয়ে মুখ চেপে রাখে আজকেই তো ফুল সজ্জার রাত , চারি দিকে রেকর্ড বাজছে (সোহাগ ছবির ঐ জনপ্রিয় গান গুলি ,
দাও গায়ে হলুদ পায়ে আলতা হাতে মেন্দি ,বিয়ের সাজে কন্যারে সাজাও জলদি..
আমি সাজবো নতুন সাজে , তাই মন খুশিতে নাচে এত দিনে আমার তুমি হবে গো..
মহান রাব্বুল আলামীন নিয়ম করেছেন ফুল সজ্জার রাতে দুরাকাত নফল নামাজ পড়ে দুজনে দুজনের জন্য দোয়া করার।
এখন শুনি বতল খেয়ে আলীঙ্গন করা হয় , পরিনামে অনাগত ভবিষ্যত চোর গুন্ডা উপহার দেয়।
দেশের বিবাহ সংস্কৃতিতে নতুন ভুতের আগমন ,প্রথার কপালে লাথি, ডিজিটালের বিয়ের নতুন ভিজিট।
বিশ ত্রিশ লক্ষ টাকার কাবিন,
কিছুদিন পর সংসার ভেংয়ে নিতে হয় আদালতের জামিন।
দু পক্ষের শুরু হয় মামলা মোক্দ্দমার প্রতিযোগীতা,
হয়ে গেল পুলিশ ভাইদের সুবিধা।
মানি কাঁদে মানের জন্য , কুকুর কাঁদে ভাতের মাড়ের জন্য।
এই যা অবস্থা ।
মামলা করলে লাভ আর লাভ যেহেতু কাবীনের অংক বিরাট,
আদালত নারী নির্যাতনকারী বর পক্ষকে পাওয়া মানি নির্ঘাত জেল জরিমানা ।
অথছ মহান আল্লাহ বলেছেন পাত্রের অবস্থা বিবেচনা করে কাবিন ধার্য্য করা (তাও প্রদেও)
এত কিছূর কি দরকার, হেলো কবুল বলেন, বাস হয়ে গেল,
শুরু হয়ে গেল খোদাকে ভেংচি মারার নতুন আয়োজন,
আপামনির মা খালারা মাজার কাপড় মাথায় এটে, বাপ চাচারা কাজের ছেলের কাছ থেকে টুপি হাওলাদ নিয়ে আর মাথায় দিয়ে বিশাল দোয়ার অনুষ্ঠান আর কোলাকুলী চুমাচুমি , পোলাও বিরিয়ানী , বেয়াই বেয়াইন মজার আড্ডা এই তো শেষ।
ইতোমধ্যে মোবাইল যন্ট্রের ব্যবহারের মাত্রা অগ্নিমূর্তি ধারন করল মা বাবা, খালাখালু, চাচা দুলাভাই, হলিউড কিউপেট্রা শালীকা মহারানীর তো ঘুম নেই কখন দুলাভাই আসবে উনার জন্য নানান রংয়ের লিপস্টিক নিয়ে।
ওদিকে আবার টেলিফোনে বিয়ে করা পাত্রের যে ঘুম নেই ভাতের মাড় উতরাচ্ছে, কবে প্রেয়শীনির সাথে দেখা হবে এত লাম্বা, এত সুন্দর গাল, ইমেইলে পাওয়া ছবিতে কি যে লাগছে, স্বপ্ন এখন দুস্বপ্নে পরিনত হয়েছে তার। মেয়ের বাবার অনুরোধে ডিজাইনার সাহেব ফটোসপে একটু স্কিউ আর গ্লোশান ব্লার দিয়ে লাল টুকটুকে আর টেনে লম্বা করে দিয়েছেন।
মন কি আর বেধেঁ রাখা যায় কখন দেশে আসবে , কখন দেখা হবে মনের মানুষের সাথে,
এসেতো চোঁখ ছানাবড়া.......................
মুখপানে তাকানো যায় না , পুরো গাল বরণ দিয়ে ঠাসা, ছবির মাপে আর উনার মাপে দুই ফুট ফারাক হায়রে কি হল । দেখলাম কি, পেলাম কি, শুরু হল পারিবারিক সমস্যা এক পর্যায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ।
হাসবেন্ড দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটানো স্ত্রীর নিসংগতা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের বিরাট ব্যবধান তৈরী করে , তার উপর অবাস্তব বিবাহ প্রথা কাল্পনিক মূর্তি স্বরুপ কাউকে জীবণ সঙ্গী বেছে নেয়া যা এ সময় বাস্তবতার বিচারে সম্পুর্ন বিপরিত রুপ ধারন করে। ফল স্বরুপ অধিকাংশ স্ত্রী অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় যা অসম প্রেম পিরিতীর কারন হয়।
পিরিতীর যে কত রুপ যা বর্ননার অপেক্ষা রাখে না।
আড়ালে আবদালে , গাছের মগডালে প্রসাধনীর দোকানে ,
মনে মনে গোপনে, স্বপনে ,কত কিছুই দেখা হয় মোবাইল ফোনে।
মোবাইল ফোনে হিন্দি ছবি লোড করে কম্বল প্রেক্ষাগৃহে দেখার মজাটাই আলাদা , মমতাজের বুক ফাইটা যায় গান কার না শরীর গিজগিজ করে। মন কি আর বেঁধে রাখা যায়। হাসবেন্ড এর দেয়া বান্ডিল তো আসছেই , লেটেস্ট মডেলের মোবাইল তো ব্যাপারই না।
মুখে সব সময় গান আর গান, মন করে আন চান। বেরুম বেরুম।
ইতোমধ্যেই প্রসাধনী কিনতে গিয়ে দোকান কর্মচারীর সাথে সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা ,
দুচার দিন আসা যাওয়া আর কি লুকিয়ে রাখা যায় মনের ব্যাথা।
পোষাক আসাকের কথা না হয় বাদই দিলাম।
টাকা লেনদেনে হাসা হাসী
সুযোগ পেলে চোঁখ টিপনী ঠাসাঠাসী।
তার পর লম্পট দোকান কর্মচারীর ফোন নাম্বার চাওয়া,
আপুমনির এ যে আমার পরম পাওয়া।
বি:দ্র: দোকান গুলোতে ঘুঘু ধরতে এক শ্রেণীর হেন্ডসাম লম্পট যুবকদের রাখা হয় তাতে বেচা কিনা ভাল হয়। পাশাপাশী মনদেয়া নেয়ার এক কারখানা হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম কামিয়েছে এই শ্রেণীদ্বয়।
অসম বিয়ে আর কুপ্রথাকে আলীঙ্গন করে সামাজিক প্রথাকে বিদায় জানানোর এই প্রতিযোগীতা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাই ভাববার বিষয়।
একদিকে অদৃশ্য স্বত্বার সহিত সামান্য বাক্যালাপে বিয়ে, টাকার লোভে প্রবাসী পাত্র নির্বাচন, পাত্রীর পছন্দ অপছন্দের অবমূল্যায়ন, ধর্মিয় রিতীনিতীর সাথে মনগড়া অপসংস্কৃতি মিলিয়ে ধর্মিয় রিতীকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই মূলত আজকের এই সামাজিক অবক্ষয়।
একথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই পাত্রের পারিবারিক মর্যাদার গুরুত্ব সকল সময় পাত্রের ব্যক্তিগত চারিত্রিক মর্যাদা মূল্যায়নে যথার্থ নয়।
তাই এই কাল্পনিক বিবাহ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে , ধর্মিয় রিতীনিতী অনুসরন করত বিবাহ প্রথাকে সুসংহত রাখতে বিশেষ অনুরোধ।
নয়তো একদিন জন্তু জানোয়ারের বাজারে পরিনত হবে আমাদের সমাজ।