কেন? কিছুক্ষণ দাড়াবো কেন! আমিতো চিরদিনের সাথী হয়ে এসেছি ...
গোলাপ দিতে পার নি- দিয়েছ বাসর রাতের সোহাগ,
বুঝার সুযোগ হয়নি আমার মন যে বড় উদাস।
বড় আশায় ঘর বেধেঁছি , চির সূখী হব
পঞ্চাশে পা দিলেও আমি, থাকব সূখী, নব।
তাহলে বাধা দিল কিসে, কই কেউতো আমার ক্ষতি করেনি , বাধা হয়ে দাড়ায়নি আমার চলার পথে। কিন্তু বিধি নামক স্বত্বাটি কেন যে আমার পায়ের কাটা হয়ে দাড়ালো বুঝতেই পারিনি, বয়স যে আমার ফুরিয়ে এল, আগুন যে আমার নিভু নিভু............
নিয়তী , কই নিয়তী আমায় বাধা দেয়নি বরং আমি নিজেই নিয়তীকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছি।
পুরো সমাজটাকে দেখিয়েছি কয়েক হালি মুলা আর সাগর নামক কলা.........
গরীব কালাম করাত কলে চাকুরী করে এক মাত্র মেয়েকে মেট্রিক পাশ করিয়েছে, বড় আশা সুপাত্রস্থ করে অন্তিম শায়ান্নে স্বস্তির ঢেকুর তুলবে। সূখতো আর দেখা হল না, কস্টের গ্লানী টেনেই পরপারের প্রহর গুনা।
তবু আশা সন্তান যদি সূখী হয় মৃত্যু যবনিকার অপারে আত্মার সূখই বোধহয় তার পরম পাওয়া।
কালামের মেয়ে পপি , দেখতে খুবই সুইটি, খাসলত নাকি ডার্টি।
আপন খালার দেবর, লিটন বড় হ্যান্ডসাম , ড্রাইভারী তার ডিউটি।
পপির বাবার ক্যান্সার , আত্মীয় স্বজন আর গ্রামের লোকের সাহায্যে ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি , মেয়েকে নেয়া হয়েছে বাবার সেবা শুশ্রুষা করার জন্য , পপি বাবার সেবা যত্ন বাদ দিয়ে লিটনের প্রেমসেবা নিয়ে কেমন জানি বেরুম বেরুম।
এদিকে হঠাৎ পপির খালা পপির মায়ের কাছে মহা উপদেশকের ভূমিকায় অবতীর্ন ।
দুলা ভাইয়ের এই সময়ে পপিকে বিয়ে দেয়াই উত্তম, তাছাড়া লিটনের সাথে মাখামাখি কেমন ঠেকছে সমাজে।
পপির মা: কি বলিস লিটন ওর মামা !
খালা: রাখতোর মামা চৌদ্দপুরুষের বাইরে, রক্তের সম্পর্কও তো নাই ..
পপির মা: লোকে কি বলবে ?
খালা: রাখ তোর লোক , লোক তোদের খাওয়ায় নাকি। হাজার খানেক টাকা গুজিয়ে , রাখ তোর কাজে লাগবে। দুলাভাইয়ের মরন খবর বাদ দিয়ে শুধুই পপির খবর এই আর কি...........
আমাদের পপি চাঁদ কপালী , লিটন অনেক ভাল,
লিটন তোদের জামাই হলে তোর সংসার আলো।
পপির মা:
তার পরও তো , একই ঘরে তুই খালা হয়ে ওকে কি করে জ্যাঁ বলে ডাকবি!!!
আমরা একলা বাড়ীতে থাকি , কে কার খবর রাখে,আমি নিজেই তো ওর সূখে সূখী। না হয় পপিকে জিজ্ঞেস কর..
পপির সোজা উত্তর এখানে বিয়ে না হলে ও গলায় দড়ি দিয়ে মরবে।
ওর বাবার কোন মূল্য নেই , কথা বলতে ডাক্তারের মানা।
সমাজ রইল ঘুম বাড়ীতে,পপি বিয়ের পিড়ী,
সজাগ হয়ে লাভ কিছু নেই, পপি শশুর বাড়ী।
এপর্যায়ে কে কার খবর রাখে, সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালেও ওরা সূখে আছে এমনিতেই সমাজসূখী, বেশী বাড়াবাড়ী করলে আবার নারীবাদী আন্দোলনের লোকেরা কি করে বসে তাও তো বিপদ।
কারন উনাদের বাজার তো এমটিতেই গরম।
পপি যখন খোশ মেজাজে ,কালামের খেলা শেষ,
খালার কোলে জ্যাঁ এর ছবি, পপির জীবন শেষ।
পপির মনে কি যেন সন্দেহ ......
আমার সখায় খালার পিরিতী, একি দেখিলাম , হায়রে মাথায় হাত।
বলিতে নারি ,সহিতে নারি ,মুখ বুঝিয়া চিন্তায় মরি, চলিয়া গেল জাত।
বোবা কান্নার মৃগী রোগী সম ,পপির মন, কেমন জানি হয়ে গেছে , আগের মত আর খুশী খুশী ভাব নেই , কি যেন একটা বাসা বেধে আছে।
ইতোমধ্যে গ্রামের ফুটুস ফাটুস পোলাপান কি যেন বলে বেড়াচ্ছে ..................
পপির নাকি বোবা কান্নার রোগে হয়েছে। (না পারি বলিতে, না পারি সহিতে।)
শত হলেও পপির ছেলের বয়স দু বৎসরর ও এখন গৃহিনী,
হায়রে কপাল খালা নাকি জাঁ এর বেশে মস্ত বড় ডাইনী।
লিটন ভাইয়ের পুরনো রোগ,
পপির এখন দারুন শোক।
লিটন প্রেমে খালা পাগল
এক বাসাতে প্রেমিক যুগল।
খালা স্বামীর অধিক রাত
পপির এখন মাথায় হাত।
প্রতিবাদী নারীর ভূমিকায় পপি এখন অগ্নিমূর্তি সংহারক ।
আমি নারী , কি করিতে নাহি পারি , হয়তো গলায় দড়ি, নয়তো কোথাও পাড়ী।
খালাআম্মার অগ্নীগর্ভ চক্ষুরোষ, চুপকর ছোটলোক, প্রতিবাদ নয় , সমাজদ্রোহী, কলঙ্কিনী নারী ।
প্রতিবাদী পপি ,আমার স্বামীতে তোমার প্রভাব , প্রকাশ করিব , সমাজ ডাকিব,সইতে নাহি পারি।
খালাআম্মা: খামোশ বেয়াদপ, লাগাম ধর, প্রতিবাদ নয় তোর কপালে পুরনো দিনের শাড়ী।
আমার কর্মের নীরব সাক্ষী জানিয়া, খালারুপী জ্যাঁ সাজিয়া তোমায় বরণ করি,
ছোট লোক তোরা , দয়ায় আসিয়া প্রতিবাদী সুর ! কেমন করিয়া, হায়রে আমি মরি।
অসহায় পপি অশ্রু মুছিতে মুছিতে.....................
স্বামী পানে অপরুপ, ওগো মোর প্রাণরুপ ,আমার দিকে চাও ,
আমি যে তোমার আগের পপি, কেমনে ভুলে যাও।
লিটন ভাই অগ্নিশর্মা দৈত্যরুপী যেন এক জল্লাদ রুপে...............
আগের মত রুপ নাই তোমার, সাগর জলে নাও,
চুপ করিলে এমন হত না, তিনটি তালাক যাও।
শেষ ভরষায় পপি বেগম............
আপন খালায় ছোরা মারিলে, কোথায় যাইব , নীরব অশ্রু বারী,
তিলক খসিয়া, শাখা খুলিয়া ,সমাজ পানে, জীর্ণ বাপের বাড়ী।
স্ব য়ামী পানে পথ চাহিয়া, দুহাতে নয়নের জল মুছিয়া
নিরুত্তাপ স্বামীর জবাব পাইয়া , কোলের ভূষণ পুত্র লইয়া, আসিল বাপের বাড়ী....
চিন্তা হেতু , সমাজ আমায় স্থান করিবে, অধিকারে মুই দাড়াইব আবার, রীতির প্রতি শ্রদ্ধ্যা জানাইব,
সমাজ এখন আবার আসামীর কাঠগড়ায়, কি হয়েছে পপি কেন আবার অসময়ে আমাদের ডাকলি, সবই তো শুনলাম , এভাবে নিয়মনিতীর বাইরে গিয়ে কেউ সূখী হতে পারে না, আমরা কি করব বল। আমাদের কিই বা করার আছে।
পপি বেগমের নরম সুরে দম্ভোক্তি...........
অধিকার আছে বিচার পাওয়ার , দায়ীত্ব সমাজ, সিদ্ধান্ত দেবার.......
আসামির কাঠগড়ায় সমাজ:
মোদেরও তো অধিকার আছে , রিতীনিতী আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধ্যা রাখার।
পপি বেগম:
ধর্ম ডাকো, মাওলানা ডাকো , নতুন নিয়ম সানাই হাকো, ফতোয়া কর জারী
আসামি সমাজ:
এই ক্ষমতা নাইকো মোদের , প্রথায় মোরা কুর্ণিশ করি ,নিয়ম জলে পাড়ি।
পপি বেগম:
বধির সমাজ গান শুন নাই, যুগের হাওয়ার খোজ রাখ নাই, শোন একটা গান.......
যে গান শুনে আমার যৌবন, নতুন যুগের নতুন ভুবন, রিতীনিতী ম্লাণ।
কাচাঁ বয়সে কাচাঁ প্রেমিক সে তো বড়ই চমৎমকার
কাঁচা বয়সে প্রেম না হইলে সেই প্রেমের আর কি দরকার।
ভীত সমাজ:
থাক বাবা থাক তোদের গান আর তোদের যুগের হাওয়া ,
যেই গানেতে তুই ডুবেছিস ঐ জলেতে নাওয়া।
পপি বেগম: তাহলে শুনে রাখ বধির সমাজ........
চারিদিকে মোরা নারী , অপরাধ নয়, মোদের শক্তি ভারী ,
ঘুনে ধরা সমাজ হুকুম কর জারী , হয়ত হেতু কর ,নয়তো লাথী মারি।
ভীরু কাপুরুষ সমাজ:
সমস্যা নাই একটা না সত্তরটা লাথী মার আমরা কি করিতে পারি। তাছাড়া তোর গর্ভে সন্তান এক্ষেত্রেও তো আইনের বাধ্যবাধকতা আছে কারন অনাগত সন্তান সম্পর্কেতো আমরা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারব না, এটা পারিবারিক আদালতের ডিক্রীর বিষয়। তাছাড়া তোরা খালা বোনের মেয়ে মিলেই তো সব করেছিস, তোর মা ই তো যথেষ্ট।
আদালত পাড়া, সে তো বড় মহাঝামেলা,
লিটনকে ধরা টাকাপয়সা আর পুলিশি হামলা।
সমাজ হয়েছ ক্ষমতা রাখনা, নারী অধিকারের মর্ম বুঝনা,
ঘৃনিত সমাজ একটা নয় হাজার থু থু মারি.......
নারী অধিকারে বলিয়ান মোরা , চারিদিকে মোরা নারী , মোদের শক্তি ভারী...............
অবনত মস্তকে সমাজ:
প্রণাম দেবী ক্ষমা কর মোদের, অক্ষমতা হেতু, মোরা রিতীনিতী ধারী,
ভয়েতে মোদের, হৃদয় কম্পন, বিচ্যুত হলে খবর সৈনিকের আবার পায়চারী।
সমাজ কাউকে খারাপ হতে বলে না বরং কেউ খারাপ হতে চাইলে বাধা প্রদান করে, তাতে অপরাধী সুধরানোর সুযোগ পায় সমাজ থাকে স্বস্তিতে। নিয়ম নিতীর প্রতি শ্রদ্ধা সৃস্টি হবে সামাজিক দায়দায়িত্ব মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা অটুট থাকবে , থাকবে অটুট প্রথা। এটাই স্বাভাবিক। ধর্মিও বিধানের সহিত কুপ্রথাকে যারা আলিঙ্গন করে নতুন নিয়ম সৃষ্টি করতে চায় তাদের পরিনাম এই রকমই হয়।
সমাজ এখানে আসামীর কাঠগড়ায়। সমাজ এখানে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল এটা তার বড় অপরাধ।
অপরাধী আজ ভুক্তভোগী , সমাজ আজ জামিন পেয়েছে ঠিকই ,
ভুক্তভোগী আজ নিজের কাঠগড়ায় নিজেই আসামী।
ভুক্তভোগী আজ নিজেই নিজের নিয়তি।
ধর্মের আংশিক ব্যাখ্যা আর মনগড়া ফতোয়া, প্রথা বহির্ভূত দৃষ্টিকটু সামাজিক নিয়ম নিতী একটা গোলক ধাধায় এক করে, সংসার গড়ার পরিনতি এমনি হয়।
পরিশেষে..........
তবুও মোরা সমাজ স্রোতে এক হতে চাই, নিয়ম প্রথায় সম্মান রাখি যতই আসুক বাধা
যুগের হাওয়ায় না হারিয়ে , অসম প্রেমে ধিক্কার জানাই , আইনে রাখি শ্রদ্ধ্যা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:২৬