[[ ড. বাশশার বিন আওয়াদ বিন মা'রুফ।সমকালীন ইলমি দুনিয়ার পরিচিত-প্রশিদ্ধ একটি নাম। তিনি একজন মুহাক্কিক, ঐতিহার এবং ইসলামী স্কলার। ১৯৪০ ঈসায়ী তে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে তাঁর জন্ম। ছোট বেলায় আব্বার কাছে কুর'আন শরিফ পড়েছেন। এরপর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৬০ ঈ তে জামি'আ বাগদাদ( বাগদাদ ইউনিভার্সিটি) এ ইতিহাস অনুষদে ভর্তি হন। ১৯৭৬ ঈ তে জামি'আ বাগদাদ থেকে ডক্টেরট ডিগ্রী অর্জন করেন। ইতিহাস বিষয়ে তিনি ডিগ্রী অর্জন করলেও ইলমে হাদিছের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে হাদিছের ময়দানে নিয়ে আসে। হাদিছ, রিজাল-শাস্ত্র এবং ইতিহাস বিষয়ক অনেক মাখতুতাতের(পাণ্ডুলিপি) তাহকিক(সম্পাদনা) করেছেন তিনি। সেই সাথে ভিবিন্ন বিষয়ে তাঁর অনবদ্য রচনা আর প্রবন্ধও আছে। তবে তিনি ইলমি ময়দানে একজন যোগ্য মুহাক্কিক হিসেবে প্রশিদ্ধ। আল্লামা মিযযি'র তাহযিবুল কামাল, ইমাম যাহাবির তারিখুল ইসলাম, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, আল্লামা ইবনে জারির এর তাফসিরে তাবারি ইত্যাদি সহ হাদিছের অনেক কিতাবের তিনি তাহকিক করেছেন। নিচের লেখাটি মিসরের ইস্কান্দারিয়ার একটা জামি'আর তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত অনুলিখন।
— অনুবাদক।]]
... আমাকে আমার জীবন শিখিয়েছে, যে মানুষের জন্য তার জীবনের একটি মুহুর্তও নষ্ট করা উচিত নয়; বরং সব সময় নিজের মূল্যবান সময় কে ইলম অর্জন এবং আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি তালাশের মাধ্যমে ব্যয় করা উচিত। নিজের আখেরাতের জন্য সব সময় ফিকির করা উচিত। পৃথিবী র জীবনটাকে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি এবং ইলমে নববী অর্জনের মাধ্যমে অতিক্রম করা উচিত।
মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি এতগুলো কিতাব কীভাবে তাহকিক করেছেন, এত লেখালেখি কীভাবে করেছেন?
আমি তো আমার এই হাত দিয়ে দেড় লক্ষ পৃষ্টারও অধিক লিখেছি।
পঞ্চাশ বছর ধরে আমি প্রতিদিন সব সময় চিন্তা-ফিকির করি, যে আজকে আমি কতগুলো সময় কাজে লাগালাম। কতগুলো সময় আজকে আমি লেখালেখি, গবেষণা এবং তাহকিক না করে নষ্ট করলাম।
চল্লিশ বছর ধরে আমি নিয়মিত একটা রুটিন করে রেখেছি, যে আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ষোল পৃষ্টা লিখবো। অনেক সময় আমি দিনে বিশ পৃষ্টাও লিখে ফেলতাম। এয় ভয়ে যে, হয়তো কালকে আমি ষোল পৃষ্টার লেখা পূর্ণ করতে পারবো না। হতে পারে কালকে কোন ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, যার ব্যাপারে আমি জানি না।
মানুষ বলে, ড. বাশশার কিতাবের উপর শুধু তার নাম লিখে দেন। লেখালেখি এবং তাহকিক করেন অন্যরা। তিনি শুধু তার নামটা কিতাবের উপর লিখে দেন।
আমি তো কিতাবের সর্বশেষ সম্পাদনা, এমনকি কিতাব প্রেসে যাওয়ার আগের সম্পাদনাটাও পর্যন্ত নিজেই করি। আলহামদুলিল্লাহ।
মানুষ সব সময় চেষ্টা করে, যেন সে তার জীবনে ভালো কোন কাজ আঞ্জাম দেয়। এবং সেই কাজ নিয়ে তার জীবনের উপর সন্তুষ্টি থাকার চেষ্টা করে।
বিশেষকরে ইলমে হাদিছের পবিত্র এই খেদমত। দুঃখের সাথে বলতে হয়, কোন জামি'আ তে আমার হাদিছ পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। ইলমে হাদিছের উপর আমার কোন সনদ, কোন মাস্টার্স এবং ডক্টেরট ডিগ্রী নেই।
কিন্তু আমি ইলমে হাদিছ কে ভালোবাসি। ইলমে হাদিছের ভালোবাসা আমার শরিরের শিরায় শিরায় প্রবেশ করেছে। এমনকি ইলমে হাদিছ আমার অন্তরও দখল করে নিয়েছে।
আমি ভিবিন্ন দেশে সফর করি। উলামা-মাশায়েখের সাথে মুলাকাত করার জন্য। তাদের ইলম থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য। তাদের সান্নিধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত করার জন্য।( এই কথা বলার পর তিনি কান্না শুরু করে দিলেন)
আমাদের বন্ধু শায়খ ড. আব্দুর রাজজাক ইস্কান্দার* (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
"আমি আমার শায়খ আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরি রহ. এর কদমের পাশে বশে যতটুকু ইলমি ইস্তিফাদা করেছি, এরকম আর কোথাও ইস্তাফাদা করতে পারিনি। আমি যখন উনার খেদমত করতাম, যখন উনার পা দাবিয়ে দিতাম, এবং তিনি তখন আমার সাথে কথা বলতেন, তখন আমি তাঁর ইলম থেকে উপকৃত হতাম।"
আমরা যখন সেসব দেশে সফর করি —হিন্দুস্তান, পাকিস্তান সহ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে— এবং সেখানকার তালিবুল ইলমদেরকে দেখি, যেরকম এখানে(ইস্কান্দারিয়ায়) তালিবুল ইলমদের পবিত্র চেহেরা দেখছি। তারা মৌমাছির বাসার মত দল বেঁধে বেঁধে কুর'আন তেলাওয়াত করছে। হাদিছ শরিফ পড়ছে। তখন সত্যিই আমাদের গর্ব হয়।ইসলামের সম্মান তো এভাবেই প্রকাশ হয়।.......
ভাষান্তর: ইসহাক ওমর
১. ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩২ ০