ঈশপের গল্প অনেক শুনেছেন, এখন শুনুন "ঈশানের গল্প"।
বাঘ, শেয়াল আর হরিণ
এক বনে এক বাঘ ছিলো।
একদিন বাঘ তার গুহার বাইরে বসে আছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এক শেয়াল। শেয়াল জিজ্ঞেস করলো, মামা কেমন আছেন?
বাঘ উত্তর দিলো- ৩ দিন ধরে কোন শিকার পাচ্ছিনা, না খেয়ে আছি। কেমন থাকতে পারি বুঝে নে।
শেয়াল বললো আরে মামা এইটা কোন ব্যাপার! আমি আছি কি করতে?
বাঘ তাড়া দিলো ভাগ্নে জলদি যা। খিদার চোটে আমার অবস্থা কাহিল।
শেয়াল গেলো হরিণের কাছে। চেহারায় চিন্তিত ভাব নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
হরিণ - দোস্ত, স্যাড কেন্? ক্যায়া হুয়া?
শেয়াল - হুক্কা হুয়া। বিরাট ফাঁপরে আছিরে ভাই।
হরিণ- কেন কি হইছে? বৌ দাবড়ানি দিছে?
শেয়াল- না দোস্ত। আমাদের বনের যে বাঘ সে অসুস্থ জানো তো?
হরিণ- হতে পারে। ২/৩ দিন ধরে বাঘের দৌড়ানি খাই নাই। কিন্তু তোমার মন খারাপ কেন্?
শেয়াল- বাঘ আমারে খুব করে ধরছে তার অবর্তমানে রাজা হবার জন্য। কিন্তু তুমি তো জানো, আমি পন্ডিত মানুষ্। রাজনীতির খেলায় তো সুশীল সমাজের অংশ নেয়া উচিত না।
হরিণ- তা অবশ্য ঠিক। এখন কি করবা ভাবতেছো?
শেয়াল- দোস্ত তুমি পারো আমারে বাঁচাইতে। তুমি পরবর্তি রাজা হও। প্লিজ দোস্ত না কইরোনা।
হরিণ- কিন্তু আমি কি পারবো?
শেয়াল্- চিন্তা কইরোনা, আমি তো আছি। আমি তোমার উপদেষ্টা থাকবো। তুমি রাজি থাকলে বলো, আমি বাঘের সাথে টার্মস এন্ড কন্ডিশন নিয়া কথা বলি।
হরিণ- যাও দোস্ত জলদি যাও। ইউ আর সো সুইট।
শেয়াল- শুধু সুইটে কাজ হবেনা। আমারে একটা মুর্গি খেতে দিবা।
হরিণ- ও.কে,ডান।
শেয়াল বললো, তাইলে ঠিকাছে। আমি বাঘের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করতেছি। তুমি আধা ঘন্টা পর বাঘের গুহায় যাবা।
শেয়াল গেলো বাঘের কাছে। মামা সুসংবাদ্।হরিণরে ভুজুং ভাজুং দিয়া পটাইছি। তুমি কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাইখা কাজ করবা। আমি গেলাম। তোমার সাথে আমারে দেখলে হরিণ সন্দেহ করতে পারে।
বাঘ ঘাপটি মেরে হরিণের অপেক্ষা করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো, গুটি গুটি পায়ে হরিণ বাঘের গুহায় আসতেছে। ভুখাফাকা বাঘের আর সহ্য হইলোনা। কাছাকাছি আসতেই ঝাঁপ দিয়ে পড়ল হরিণের উপর। হরিণ পড়িমরি করে দে ছুট। বাঘের ঝাপটায় হরিণের একটা কান বাঘের থাবায় রয়ে গেলো। বাঘ চিবিয়ে চিবিয়ে কান খায় আর আফসোস করে, ইসসিরে! অল্পের জন্য মিস হয়ে গেলো।
এদিকে শেয়াল ভাবলো যাই দেখে আসি কেম্নে কি হইলো। এসে দেখে বাঘ মাটিতে রক্ত চাটতেছে। বাঘের মুখে কাহিনি শুনে বললো, মামা তুমি হুদাই রাজা হইছো। প্রজাদের অবস্থার কোন খোঁজ রাখো না। এইটাও জানোনা,হরিণ তার পেটের মধ্যে গুড়গুড় ডাক শুনলেই দৌড় দেয়্। কোন আক্কেলে ঝাঁপ দিলা? বললাম না মাথা ঠান্ডা রাখতে?
বাঘ বললো- ভাগ্নেরে ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দে। হরিণটারে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
শেয়াল বললো- এখন কি আর আসবে? তাও আমি দেখি চেষ্টা করে।
শেয়াল ফুল নিয়ে হরিণের সাথে দেখা করতে গেলো।
"দোস্ত কংগ্রাটস্। অভিষেক কেমন হইলো?"
হরিণ তো রাগে কাঁপতেছে। "আরে রাখ তোর কংগ্রাটস অল্পের জন্য জানে বেঁচে গেছি। বাঘ আমারে খাওয়ার ধান্ধা করতেছিলো। কানের উপর দিয়া রক্ষা পাইছি। সব তোর ষড়যন্ত্র।"
শেয়াল- এই হলো পাব্লিকের দোষ। হুদাই সুশীল সমাজকে সন্দেহ করে। আরে ব্যাটা তোর চৌদ্দ গোষ্টিতে কেউ রাজা হয় নাই তো তাই ম্যানার্স জানসনা। রাজায় রাজায় দেখা হইলে উষ্ণ করমর্দন করে, কোলাকোলি করে। বাঘ তো তাই করতে গেছিলো। তুই না বুঝেই লাফ দিলি। মাঝখান থেকে কান খোয়ালি।
হরিণ- দোস্ত, আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন কি করি? তুই একটু বাঘরে বুঝা প্লিজ, আর ভুল হবে না।
শেয়াল- বাঘের সামনে যাইতেই আমার ভয় লাগতেছে। আচ্ছা তবুও তুই আমার দোস্ত। তোর জন্য একটা রিস্ক নিমু। তুই একটু পরে আয়। আমি গিয়া বাঘরে ম্যানেজ করি।
শেয়াল আবার বাঘের কাছে গেলো, "মামা ব্যাটারে রাজি করাইছি। আসতেছে। তুমি কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করবা।"
লোভে বাঘের চোখ চকচক করতে লাগলো। জিভে জল নিয়ে হরিণের অপেক্ষা করতে থাকলো। শেয়ালও তামাশা দেখতে ঝোপের আড়ালে লুকালো।
হরিণ আস্তে আস্তে বাঘের গুহায় আসলো। এইবার বাঘ আর ভুল করলোনা। কাছাকাছি আসামাত্রই ঝাপ্টা মেরে হরিণের পা দুটো ধরে ফেললো। হরিণ শত চেষ্টাতেও পালাতে পারলোনা। সম্পূর্ণ শরীর নিয়ণ্ত্রনে নিয়ে ঘাড় মটকে হরিণকে হত্যা করলো। তারপর আয়েশে খাওয়া শুরু করলো।
বাঘের খাওয়া দেখে শেয়াল ভাবলো, বাঘ যেভাবে খাইতেছে, আমার জন্য তো কিছুই থাকবে না। এই ভেবে শেয়াল পা দিয়ে টোকা দিয়ে দিয়ে হরিণের মাথা থেকে মগজ বের করে খেয়ে নিলো।
বাঘ খাবার শেষ করার পর শেয়াল আড়াল থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, মামা কেমন খাইলা?
বাঘ- ভাগ্নে তোরে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেকদিন পর এতো টেস্টি একটা লাঞ্চ করলাম্। কিন্তু একটা ব্যাপার্, হরিণের মগজ তো পাইলাম না। মগজ গেলো কই?
শেয়াল হেসে বললো, মামা ওর যদি মগজ থাকতো, তাইলে কি কান দেয়ার পরে আরেকবার জান দিতে আসতো?
নীতিকথাঃ সুশীলদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে রাজনীতিকের লোভের বলি হবেন না। কান দিয়েছেন, জান দিবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৭