পর্ব-১ পর্ব-২
৮ : প্যাসকেলের ওয়েজার (প্যাসকেলের বাজি)
এটি মূলত ফলস ডিলেম্মা বা মিথ্যা দ্বন্দ গুরুপের একটি কুযুক্তি । কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহারের কারনে একটি সম্পূর্ণ পোস্ট । হালের সিরিয়াস আলোচনায় এটি যে একটি কুযুক্তি তা সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন । কিন্তু বাঙালী আসতেকদের কথা ভিন্ন ।
বিজ্ঞানী হিসাবে যারা প্যাসকেলকে চিনেন তাদের অনেকেরই ধারণা ওরকম একজন বিজ্ঞানী এধরনের আখাম্বা একটি ওয়েজার কিছুতেই দিতে পারেন না । অবশ্য প্যাসকেলের বিভিন্ন ডায়েরি/লেখা থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এইটা প্যাসকেলেরই কাম ।
ব্লগীয় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এড হোমিনেম এবং স্ট্র ম্যান (বিস্তারিত এইখানে ) কুযুক্তিতে ভরপুর একটি পোস্ট দিয়ে, কিছু মোসাহেবের হাততালি পেয়ে খুশিতে বগল বাজানো একজনের জবাবে এটা লেখা হয়েছিল মূলত।
প্যাসকেলের ওয়েজার সম্ভবত প্যাসকেলের জন্মেরও আগে থেকে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে । এর মূল কথা হল
" ঈশ্বর থাকতেও পারেন, নাও থাকতে পারেন । কিন্তু ঈশ্বর আছেন এটা ধরে নেয়া সুবিধাজনক । কারন যদি ঈশ্বর নাই থাকেন তাহলে আস্তিক নাস্তিক দুজনেরই মরার পরে কোনো সমস্যা নাই । কিন্তু যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তাহলে মরার পরে আস্তিক বেঁচে যাবেন কিন্তু নাস্তিক পড়বে ঝামেলায় । অর্থাৎ আস্তিকের বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ যেখানে নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ "
প্যাসকেলের নামের সাথে জড়ালেও এটি একটি কুযুক্তি । সাধারনভাবে কূপমন্ডুকদের খুব বেশী দেখা যায় এটি ব্যাবহার করতে, যারা তার নিজস্ব ঈশ্বরের বাইরে অন্য কোনো ধর্মের ঈশ্বরের কথা ভেবেই দেখেনা ।
এই কুযুক্তিটির স্বরুপ উম্মোচনে সাধারনভাবে গাণিতিক শব্দমালা ব্যাবহার করলে, অল্পকথায় বুঝানো যায় । কিন্তু আমি চেষ্টা করব ভারি শব্দ যথাসম্ভব কম ব্যাবহার করতে ।
দুইটি কারনে এযুক্তিটি একটি কুযুক্তি ।
কারন ১: যুক্তিটিতে কারন ছাড়াই ধরে নেয়া হয়েছে, যে ঈশ্বর একজন/একটি । এবং যে ব্যাক্তিটি বাজিটি ধরছে সে যেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী সেটিই একমাত্র সম্ভাব্য ঈশ্বর । কোনোপ্রকারের ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে যেহেতু কোনো পরীক্ষিত উপাত্ত নাই সেহেতু এই দুইটি প্রস্তাবনাই ভুল । ভুল প্রস্তাবনার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা যুক্তিও কুযুক্তি ছাড়া আর কিছু নয় ।
বিভিন্ন ধর্মে এবং লোককাহিনীতে বিভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা আছে । তাদের প্রত্যেকের পক্ষে উপাত্ত সংখ্যা সমান । অর্থাৎ ০ টি । এখানে একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরের অনুসারিরা ছ্যাঁৎ করে উঠতে পারেন । তাদের ঈশ্বরের পক্ষে প্রমান ০ শূন্য নয় বলে । মিরাকল , চমৎকার আসমানী কেতাব এইগুলা হতে পারে সম্ভাব্য কারন ।কিন্তু এইগুলা যে একটি ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া হবে তার কোনো কারন নাই । কারন ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া কি হবে তার উপর মানুষের কোনো হাত নাই । অথবা বলা যায় ঈশ্বর নিয়ে এখনো কোন নিশ্চিত মডেল পাওয়া যায় নাই, যেটার স্বাপেক্ষে বিবেচনা করা হবে , তার ক্রাইটেরিয়া কি কি হতে পারে ।
যাই হোক ধরা যাক, মোট n সংখ্যক ঈশ্বরের কথা প্রস্তাবিত আছে পৃথীবিব্যাপী । n এর সর্বনিম্ন মান ১ (শূণ্য ঈশ্বরটাকেও একটা ঘটন সংখ্যা হিসাবে ধরে নিয়ে) । এখন একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যাক্তির পরিত্রানের সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে ২/n (যদি কোনো ঈশ্বর না থাকে, অথবা তার ঈশ্বরটিই সত্য হয় ।) যেখানে নাস্তিকের সম্ভাবনা ১/n ( কোনো ঈশ্বর নাই ) । অর্থাৎ আস্তিকের পরিত্রাণের সম্ভাবনা নাস্তিকের দ্বিগুন ।
কিন্তু n এর মান বড় হতে থাকলে, এই দ্বিগুন তখনও দ্বিগুন থাকলেও দুটো সংখ্যার পার্থক্য নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে । এবং মোটামুটি বড় একটি n এর জন্য ১/n এবং ২/n অলমোস্ট সমান । পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মের সংখ্যা চার হাজারের বেশী । n = ৪০০০ ধরে নিলে আস্তিকের বাঁচার ০.০২৫% সম্ভাবনা , নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ০% । আস্তিকের সুবিধা ০.০২৫ % বেশি । প্যাসকেলের ওয়েজারে প্রস্তাবিত সম্ভাবনার ২০০০ ভাগের একভাগ মাত্র ।
কিন্তু এই ক্ষুদ্র সুবিধাটিও ধোপে টিকে না, যখন আরেকটি সম্ভাবনার কথা স্বীকার করা হয় । প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই, নিজটা সঠিক অন্যেরটা ভুল বলে গলাবাজি করা আছে । এখন একটা ভুল ঈশ্বরে বিশ্বাসীকে সত্যিকারের ঈশ্বর যদি শাস্তি দিয়ে থাকেন , তাহলে বিশ্বাসীর পক্ষে ঘটন সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় (১+১-১)=১ ।
অর্থাৎ আস্তিক নাস্তিক দুইয়ের জন্যই বাঁচার সম্ভাবনা দাঁড়ায় ১/n, যা কারো জন্যই কম সুবিধার না, আবার কারো জন্যই বেশী সুবিধার না ।
কারন২ : ঈশ্বরের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে মানুষে কিছু বলার নাই । ঈশ্বর যা নিজের ইচ্ছা হয় তাই করবেন । তাহলে ঈশ্বর তার অনুসারিদেরও শাস্তি দিতে পারেন, আবার তার যারা অনুসারি নয় তাদেরও শাস্তি দিতে পারেন । অসীম দয়ালু অসীম জ্ঞানী কেউ একজন, ঈশ্বরের মত বড় ব্যাপার নিয়া জুয়া খেলা একজনরে ফেভার না কৈরা, এভিডেন্স ভিত্তিক এপ্রোচ নেয়াটাকে ফেভারও করতে পারেন
এই দুইটি সম্ভাবনা যে সমান এটা কারো কারো মাথার সহজে নাই ধরতে পারে । কিন্তু বিবেচনা করুন, মানলে পুরস্কার দেয়া, না মানলে শাস্তি দেয়া এটা মানুষের বৈশিষ্ট । ধর্ম প্রচারকরা এটা ঈশ্বরের বৈশিষ্ট বলেও চালিয়ে দিতে চাচ্ছে । কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো পরীক্ষণলব্ধ প্রমান নাই ।
সুতরাং এই ক্ষেত্র আস্তিক নাস্তিক উভয়েরই স্বপক্ষে ঘটন সংখ্যা হবে ২ এবং উভয়ের জন্যই পরিত্রাণের সম্ভাবনা ২/n (০ ঈশ্বর অথবা অবিশ্বাসীদের পুরস্কৃতকারী ঈশ্বর, নাস্তিকের জন্য , ০ ঈশ্বর অথবা নিজ ঈশ্বর, আস্তিকের জন্য )
সুতরাং দুইটি পছন্দেরই সম্ভাবনা মূল্য সমান ।
প্যাসকেলের ওয়েজার একটি আখাম্বা ওয়েজার ।
এত প্যাঁচগোচের কথায় যাগো অস্বস্তি, তাগো লাইগা এককথায় কৈলে :
" আল্লা থাকলে বেহেশত, না থাকলে কিছু না, লসের কিছু নাই ভাইবা যারা বৈসা আছেন, যদি আল্লা না থাইকা শিব থাকে আর হেয় যদি মরার পরে কয় আমার লিঙ্গ থুইয়া তুই আল্লার ইবাদত করলি এখন এইটা তোরে সান্দানি হৈবেক , তখন ? "