যে কোন কাজ বিশেষ করে মাথা ঘামিয়ে যা করতে হয় তার সফলতা নির্ভর করে সেই কাজের প্রতি মনোযোগ প্রদানের উপরে। বিজ্ঞানী নিউটন এবং আইনস্টাইনকে সর্বকালের সেরা দুইজন বিজ্ঞানী বলা হয়। এঁরা যখন কোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন তখন এতোই গভীরে ঢুকে যেতেন যে পারিপার্শ্বিকতা ভুলে যেতেন। এসব নিয়ে মাঝে মাঝে হাস্যকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতো। এই দুই বিজ্ঞানীর এবং সেই সাথে একজন খ্যাতিমান উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসনের জীবন থেকে কয়েকটি গল্প বলিঃ
আইনস্টাইন একবার কী একটা সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবেলায় বাড়ি ফিরে দরজা নক করছিলেন। ভেতর থেকে আইনস্টাইনের স্ত্রী ভাবলেন বোধহয় আইনস্টাইনের খোঁজে কেউ এসেছে। তিনি বলে উঠলেন আইনস্টাইনতো বাড়িতে নেই। বাইরে থেকে এই কথা শোনা মাত্র অন্যমনষ্ক আইনস্টাইন উল্টো পথে হাঁটা ধরলেন!
বিজ্ঞানী নিউটন একবার তাঁর একবন্ধুকে পরের দিনের মধ্যান্থভোজনের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু সকালে উঠে তিনি কিছু বৈজ্ঞানিক সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে দাওয়াতের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন এবং নিজের কাজে বেরিয়ে পড়লেন আর যাওয়ার আগে শুধু নিজের জন্য দুপুরের খাবার ঢেকে রেখে গেলেন। দুপুরে সেই বন্ধু নিউটনের বাড়িতে এসে দেখলেন নিউটন বাড়িতে নেই এবং শুধু মাত্র একজনের জন্য সাদামাটা কিছু খাবার টেবিলে রাখা আছে। তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাগের মাথায় সেই খাবার খেয়ে নিলেন। নিউটন বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর বন্ধু বসে আছেন। তিনি "আরে দোস্ত কী খবর হঠাৎ কী মনে করে বলে তাঁর বন্ধুকে সম্ভাষন জানালেন।" তারপর বললেন "দুপুর বেলায় যখন এসেই পড়েছ চল আমার জন্য খাবার রাখা আছে সেটাই দুজনে মিলে খাই"। এরপর টেবিলের কাছে গিয়ে ঢাকনা উল্টে যখন দেখলেন খালি প্লেট পড়ে আছে তখন লজ্জিত হয়ে বললেন "কী আশ্চর্য, আমি যে খাবার খেয়ে বেরিয়েছিলাম আমি নিজেই ভুলে গেছি!"
টমাস আলভা এডিসন একবার আয়কর দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কোনো একটা সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে একেবারে লাইনের সামনে চলে এলেন। ক্যাশিয়ার যখন তাঁর নাম জানতে চাইলেন তখন কিছুতেই তিনি নিজের নাম মনে করতে পারছিলেন না! হঠাৎ কে একজন তাঁকে দেখে চিনতে পেরে ডেকে উঠলেন "আরে এডিসন না?" তার পরেই তিনি নাম মনে করতে পারলেন।
এই গল্পগুলো বলার কারন হচ্ছে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় একাগ্রচিত্ততা অত্যন্ত জরুরি। গভীর মনোযোগে আপনি দশঘন্টার পড়াশোনা দুইঘন্টায় শেষ করে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মনোযোগ বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের মনোযোগের সমস্যা আছে তাঁরা মানোযোগ বৃদ্ধির জন্য কিছু এক্সারসাইজের মতো আছে সেগুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আজকাল প্রযুক্তির ডামাডোলে কোনো বিষয়ের উপর মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে অতিরিক্ত টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা মনোযোগের বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়। কারন টেলিভিশনে আবহ শব্দ, ছবি এসবের মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় যাতে এমনিতেই মনোযোগ টেলিভিশনের দিকে চলে যায়। ফলে নিজে থেকে মনোযোগ দেওয়ার প্রবণতা দূর হয়ে যায়। কাজেই টেলিভিশনের সিরিয়াল জাতীয় অনুষ্ঠান যথাসম্ভব বর্জন করুন।