ঢাকা — এক সময়ের স্বপ্নের শহর। এই শহরকে আমি একসময় ভেবেছি এক অলৌকিক জায়গা, যেখানে আছে অগণিত নাগরিক সুবিধা। তিতাস গ্যাস, বিদ্যুতের লাইন, ইন্টারনেট কানেকশন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, নিয়মিত ময়লা অপসারণ—সবকিছুই যেন এক পরিপূর্ণ নাগরিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।
জয়পুরহাটে ছিলাম আমি ক্লাস সিক্স থেকে এইট পর্যন্ত, বাবার চাকরির সুবাদে। তখন মাঝে মাঝে ঢাকায় মামার বাসায় বেড়াতে আসতাম। মামা থাকতেন বাড্ডায়। সেই সময় ঢাকায় পা রাখলেই মনে হতো—আমি যেন কোনো বিজয়ী যোদ্ধা, মহান কিছু জয় করে ফেলেছি। রাস্তায় লম্বা বিল্ডিং, গার্ডার ব্রিজ, ঝকঝকে শপিং মল—সব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করতো।
এরপর আমি চলে যাই মুন্সীগঞ্জ, নানার বাড়ি। তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। নিজের টাকায় একটা মোবাইল কিনেছিলাম—নকিয়া ১৬৬১। সেই ফোনে ছিল এফএম রেডিও। মুন্সীগঞ্জে রেডিওর সিগন্যাল যেমন ভালো পাওয়া যেত না, তেমনি ঢাকায় এলেই একদম পরিষ্কার ধরা দিত। তাই ঢাকায় যাওয়ার জন্য থাকতাম উগ্রীব। ঢাকায় গেলেই কানে হেডফোন, আর রেডিও-ই ছিল আমার সঙ্গী।
একবার মামাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম—“মামা, ঢাকায় বড়লোকরা কোথায় থাকে?” হয়তো মামা বুঝে গিয়েছিলেন, উত্তর দিলে আমি বায়না ধরে বসব ধানমন্ডি বা বনানীতে যাওয়ার। তাই চুপ ছিলেন।
কিন্তু সময় বদলায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়। এখন ঢাকায় থাকলে বরং ক্লান্তি লাগে, একরকম অসহ্য লাগে। কোলাহল, জ্যাম, দূষণ—সব মিলে যেন হাঁপিয়ে ওঠা এক জীবন। এখন বরং গ্রামের জীবনটাই ভালো লাগে।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে আছে তিতাস গ্যাসের সংযোগ। হাতের কাছে মুদির দোকান, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট—সবই তো আছে। শান্তির একটা পরিপূর্ণ চিত্র যেন আঁকা থাকে প্রতিদিনের জীবনে। এখানে নেই ভিড়, নেই কোলাহল। আছে প্রকৃতি, প্রশান্তি আর এক টুকরো নির্ভেজাল জীবন।
ঢাকার প্রতি ভালোবাসা এখনও আছে, স্মৃতির পাতায়। কিন্তু এখন আমার মন পড়ে থাকে গ্রামের উঠোনে, কুয়াশাভেজা সকালের চা-এ, আর সন্ধ্যায় পাখির ডাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯