এক এলাকায় বাস করতেন এক অসহায় মা। স্বামী মারা যাবার পর অসংখ্য প্রতিকূলতা পেরিয়ে, সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে তিনি একমাত্র ছেলেকে বড় করেন। নিজের প্রয়োজন-সুবিধা বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে পড়াশোনার সুযোগ দেন, যেন একদিন সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। মায়ের সেই ত্যাগ বৃথা যায়নি—ছেলেটি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠে।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ছেলেটি সমাজে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয় এবং ধনী পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু এই বিয়ের পরই শুরু হয় মায়ের জীবনের নতুন দুঃখের অধ্যায়। পুত্রবধূ শ্বাশুড়ির প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করতে থাকে—উঠতে বসতে কটূক্তি করে, তাকে যথাযথ সেবা দেয় না, খাবার পর্যন্ত ঠিকমতো দেয় না। ছেলেটি কর্মব্যস্ত জীবনে এসব খেয়ালই করে না। তার ধারণা, সংসারের দায়িত্ব স্ত্রী নিয়েছে, তাই তার আর চিন্তার কিছু নেই।
কিন্তু একদিন সেই স্ত্রী তার বৃদ্ধ শ্বাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। সন্তান, যাকে মা তিলে তিলে বড় করেছেন, ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে বড় করেছেন, সেই সন্তানই আজ মায়ের শেষ জীবনের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারেনি। সমাজের বাস্তব চিত্রও প্রায় এমনই। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়েদের বেশিরভাগ সন্তানই সফল, প্রতিষ্ঠিত, ধনী—কিন্তু তারা মায়ের প্রতি দায়িত্ব ভুলে গেছেন।
কিন্তু কি আশ্চর্য! আমরা কখনো দেখিনি কোনো আলেম বা ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিকে তার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে। কারণ, তারা জানেন—মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করা শুধু নৈতিক নয়, এটি ধর্মীয় ও মানবিক কর্তব্যও। মা-বাবার প্রতি কর্তব্য ভুলে গিয়ে কেউ সত্যিকারের সফল হতে পারে না। সমাজের প্রত্যেক সন্তানের উচিত, মায়ের ত্যাগ ও ভালোবাসার মূল্য দেওয়া এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের পাশে থাকা, যেন তারা শেষ জীবনে কষ্ট না পান।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫১