বিবাহ করিয়া বেকায়দায় আছি । দিনে অফিস কইরা রাইতে বাড়ি ফিরিয়া আর ব্লগে বসা হয় না । সব কিছু লাটে উঠিয়াছে । মাঝে মধ্যে উকিঁঝুঁকি মারিয়া দেখিয়া যাই । ইত্যবসরে ব্লগে দেখিলাম -এটিমের জন্মদিন পালন হইয়া গেছে । দেখতে দেখতে একবছর চলিয়া গেল , কতো ছাগুযে ম্যাৎকার করিয়া পালাইয়া গেল , কতো আকুকাকু বুকে বুক মিলাইয়া ভ্যানিশ হইয়া গেল , কতো চানমিয়া স্বাধীনতার নয়া ইতিহাস লিখতে গিয়া নিজেই ইতিহাস হইয়া গেল , কতো আলিতা-ললিতা , বুবস কান্দিয়া কাটিয়া নাটক জমাইতে গিয়াও পারিল না ।সময় বড়ো জলদি যায় গিয়া।
একবছর পূর্তির এই দিনে এ-টিম নিয়া এক্টা লেখা দিতে মন চায় । নতুন ব্লগারদের কৌতুহল মিটাইবার জন্য এই লেখা কামে দিব ।
এ-টিম কী ? :
এ-টিম হইলো একটা ভার্চুয়াল সংগঠন যা ঠিক একবছর আগে তৈরী হইয়াছিল সামহোয়্যার ব্লগের অব্যাহত রাজাকার তোষনের প্রতিবাদে ।
তখন ব্লগে ছিল আইয়েমে জাহেলিয়াতের যুগ , পুরা অন্ধকার । তখন কিছু উগ্র জামাতি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়া নিয়মিত রঙ্গ রসিকতা করত । প্রায়ই ব্লগে পাকিস্তানী পতাকা উড়ানো হইতো , মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লক্ষ নয় তিন হাজার শহীদ হইছিল , মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের হত্যাকান্ডে আমরা দূ:খিত নই , গোলাম আযম মহান নেতা , এই সব রাজাকারী কনটেন্ট তখন প্রতিদিন ব্লগ খুললেই পাওয়া যাইত । সুস্থ ব্লগারদের অনেকেই এটা নিয়া তর্ক করতেন , প্রতিবাদ করতেন , সামহোয়্যারকে এইসব পাকিস্তানপ্রেমী ব্লগারদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলতেন । কিন্তু এতে কইরা কাজের কাজ কিছুই হইতো না ।
এই পরিস্থিতিতে , " সামহোয়্যার রাখিব রাজাকার মুক্ত " এই শপথ নিয়া কিছু দুষ্ট ছেলের দল একটা নতুন সংগঠন দাড় করায় - তার নাম এ-টিম ।
এ-টিমের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য একটাই - যেখানে ছাগু সেখানেই গদাম লাথি । নেটে জামাতি রাজাকারদের দৌড়ের উপ্রে রাখা হইবে ।
এ-টিম সিদ্ধান্ত নেয় যেহেতু এই রাজাকারগুলোরে বুঝাইয়া বা যুক্তি দিয়া লাভ নাই আর যেহেতু এক চউক্ষা মডারেটররা এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না , তাই এইগুলারে লাথি দিয়া কন্ট্রোল করতে হইবে ।
এ-টিমের সাফল্য : একবছর পূর্তির প্রাক্কালে :
একবছর পূর্তির এই সময়ে পিছন ফিইরা দেখলে দেখা যাবে এ-টিম তার লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য অনেকটাই সফলভাবে পালন করতে পারছে ।
খতিয়ানে দেখা যায় ,
১. একটা নীতিমালা তৈরী হইছে । যেই নীতিমালায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী লেখার জন্য কোন ব্লগারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবার বিধান আছে । যদিও এই নীতিমালা নিয়া অনেক বিতর্ক আছে ,তবু একটা মন্দের ভালো নীতিমালা হিসেবে এইটা মাঝে মাঝে ভালোই কাজে লাগছে ।
২. জামাতি কাটপেস্ট কমছে । আগে জামাতি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা দৈনিক সংগ্রাম আর নয়াদিগন্ত থাইকা সরাসরি কাটপেস্ট কইরা লাদি ছড়াইত , এইটা এখন কমছে ।
৩. উগ্রতা কমছে । প্রখ্যাত এক নারী ব্লগারের কাপড় খুইলা ফেলানোর প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়াও ছাগুরাম একসময় বীরদর্পে এইখানে ব্লগিং করত, কিন্তু এখন সেইটা সম্ভব হবে না ।
৪. সবচাইতে বড়ো অর্জন হইলো সাধারন ব্লগারদের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে । তারা এখন জামাতিদেরকে মোটামুটি একঘরে কইরা ফালাইছে ।
এটা কি এ-টিমের একক সাফল্য :
অবশ্যই না , অবশ্যই না , অবশ্যই না। এটা আসলে রাজাকারদের বিরোধিতা করা সকল ব্লগারের সম্মিলিত সাফল্য । এ-টিম সেই ব্লগারদের একটা অংশ ।
এ-টিমরে ভালোবাসেন , সমর্থন করেন
এ-টিম কিভাবে কাজ করে ?
অনেকের মাঝেই কৌতুহল আছে যে এ-টিম কিভাবে কাজ করে । আমি তো কই এ-টিম যেভাবে কাজ করে এইটা যদি সবাইরে পুরা জানানি যাইত , তাইলে রাজনৈতিক দলগুলা এই সংস্কার কাজে লাগাইত ।
পুরা বিষয়টায় মজা আছে ।
সংক্ষেপে কিছু কই । এ-টিমের সকল সদস্যের পরষ্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য চ্যাটের ব্যবস্থা আছে । যেকোন ইস্যুতে সকলের মতামত দেবার সমান ক্ষমতা , সকলের ভেটো পাওয়ার । তারপরেও অনেকের অনেক দায়িত্ব নির্দিষ্ঠ । যেমন কয়েকজন আছেন হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট । এই দায়িত্বে যারা আছে তাগো ক্ষমতার আসলেই তুলনা নাই । এর যেকোন পুরানপাপীর নতুন নিক খুইজা বাইরা কইরা ফালাইতে পারে । ( থেরাপিস্টের তিনটা কমেন্ট পড়ার পরেই এদের একজন আমারে কইল যে এইটা সারোয়ার চৌধুরীর নিক । আমি প্রথম বিশ্বাস করি নাই । কিন্তু এরা বাক্যের গঠন , আরো কী কী জানি দেখাইয়া আমারে আবার একই কথা কইল । কিন্তু আমি মনে কর্লাম , সারোয়ার চৌধুরীর মতো একজন কাব্যানুরাগী এইটা করবে না । পরে যখন থেরাপিস্টের ম্যালফাংশ হইল , তখন দেখি ঘটনা সত্য । ) এর কখনো কারো নয়া নিক খুইজা বাইর করতে গিয়া আজতারি ভুল করছে বইলা আমি দেখি নাই ।
তারপর কেউ আছে আর্কাইভের দায়িত্বে , তারা অনেক মজার মজার কমেন্ট আর পোস্টের স্ক্রিনশট জমাইয়া রাখে ।
কেউ কেউ টেকনিক্যাল বিষয়গুলা দেখে । এ-টিমের কেউ যদি আইপি শুদ্ধা ব্যান খায় তাহলে সেই শহীদকে তারা নতুন নিক নিতে সাহায্য করে । তাছাড়া কম সময়ে করা যায় এরকম অনেক টেকনিক্যাল বিষয় এদের জানা আছে । এদের উপরে সামহোয়্যারের ডেভেলপররা গোস্বা থাকে সবসময় ।
কেউ কেউ যুক্তি আর প্যারোডিতে একনাম্বার । তারা মাঝে মাঝে প্যারোডি আর রম্য রচনা লিইখা ছাগুদের ডলা দেয় ।
এইভাবে মিলেমিশে কাজ করার কারনে এ-টিম রাজাকারদের চাইতে অনেক ধাপ আগাইয়া থাকে সবসময় ।
এ-টিম নিয়া বিতর্ক :
বিভিন্ন সময় এ-টিম বিতর্কিতও হইছে । বিতর্কটা হইছে কিছু ব্যক্তি আক্রমনের ঘটনায় ।
তয় সবচাইতে বড়ো সমস্যা হইছে , এখন সাধারন ব্লগারদের মাঝেই অনেকে মজার মজার নিক নিয়া ছাগু োন্দায় । তাদের অনেকের অনেক কথার দায়দায়িত্বই এ-টিমের ঘাড়ে পড়ে ।
তাছাড়া এ-টিমের মূল নীতির একটা হইল , রাজাকার প্রতিরোধ ছাড়া অন্য এজেন্ডায় এ-টিমের সদস্যরা যার যার মতো মতামত দিতে পারে । আহমেদ শারফুদ্দীন যখন কাউরে লোলপুরুষ কয় , এ-টিমের কেউ যদি মনে করে সেও ঐটাতে একমত সেইটা সে তার মতো কইতে পারে । এইটা এ-টিমে এজেন্ডা না ।
অনেক প্রো৭১ ব্লগার যারা রাজাকার দেখতে পারেন না কিন্তু এ-টিমের কর্মপন্থার সাথে একমত না তারা অনেকবারই এ-টিমে কার্যক্রমের সমালোচনা করছেন । আমি কই -যতো মত , ততো পথ । রাজাকার দমনে আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে কাজ করেন , আমরা আমাদের তরিকায় কাজ করি । লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেই হইল,, আপনাদের মতামতরে শ্রদ্ধা করি , আমাদের কর্মপন্থারেও আপনারা শ্রদ্ধা করবেন বইলা আশা করি ।
এ-টিমের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা :
সত্য কথা কইতে গেলে , এটা স্বীকার করতে হইবে যে বর্তমানে সামহোয়্যারে রাজাকারদের প্রকোপ অনেক কমছে । যা দুই একটা আছে , এরা মুখ বাইর করলেই ব্লগাররা দৌড়ানি দেয় । এ-টিমরে তৎপর হইতে হয় না ।
বর্তমানে তাই এ-টিম রিলাক্স অবস্থায় আছে । মজলিশে শূরায় নতুন সদস্য ভুক্তি এখন স্থগিত আছে । এ-টিমের পুরানা সদস্যদের অনেকেই নিজের মতো করে লেখালেখি করতেছেন । অনেকেই নতুন বউ নিয়া ঘরসংসার করতেছেন , কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ারে সময় দিতেছেন ।
এ-টিমের সংঘবদ্ধতা কাজে লাগাইয়া আরো কিছু কাজ করারও ইচ্ছা আছে আমাদের । হাসিব একটা ই-বুক করছেন , ভবিষ্যতে আম্রা আরো ই-বুক করতে পারি। হয়তো এজন্য আমরা গেস্ট এডিটরও নিতে পারি । টেকনিক্যাল সাপোর্ট এ-টিম করে দিবে । বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতায় ব্লগের উদ্যোগগুলোতে আমরা পেছন থেকে কাজ করেছি , এখন মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে করা যেতে পারে দরকার হইলে ।
তয় , এ-টিম তার মূল উদ্দেশ্য হইতে কখনোই সরে যাবে না। যদি কখনো দেখা যায় যে ব্লগে রাজাকারী বাইড়া গেছে তাইলে সাথে সাথে , একসেকেন্ড বিলম্ব না কইরাই এ-টিম পুরা একটিভ হইয়া একশনে নামবে । আমরা জনপ্রিয়তার ধার ধারি না , আম্রা সুশীল না হইলে কে দূ:খ পাইব , কে ভার্চুয়াল গুন্ডা কইব , এইসব আমরা আগেও কোনদিন কেয়ার করি নাই , এখনও করি না । সুতরাং এ-টিম জনপ্রিয়তা হারাইব কইয়া কাউরো টেনশন করনের দরকার নাই। রাজাকার োন্দানো আমাদের কাছে জনপ্রিয়তার উৎস না , রাজাকার পোন্দানী আমাদের কাছে এর চাইতে অনেক বড়ো বিষয় ।[/sb
প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই দিনে আমরা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা জানাই এ-টিমের সকল শুভানুধ্যায়ীদের । যারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহন করেছেন , যারা ব্লগেও ও মেইলে আমাদেরকে উপদেশ দিছেন , তথ্য দিয়া সাহায্য করছেন , পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিছেন , আপনারদের কাছে নতজানু ধন্যবাদ ।
যারা দূর থেকে মনে মনে সমর্থন করছেন , যারা বিরক্ত হইছেন , যারা প্রশ্রয় দিছেন , তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ।
একবছর আগের সামহোয়্যার আর একবছর পরের সামহোয়্যারের মাঝে যদি কোন গুনগত পার্থক্য চোখে পড়ে , সেই অর্জনগুলো আপনাদের । আর আমরাতো আপনাদের সেই বাউন্ডুলে দুষ্ট ভাই , যারা মহল্লার সামনে রকবাজী করে ,কিন্তু মহল্লায় কারো বিপদ আপদে বেগার খাটতে সবার আগে দৌড়াইয়া যায় ।
হ্যাপি ব্লগিং ।
হ্যাপি বার্থডে এ-টিম ।