"বাচবেন আর কয়দিন,
হাসি আনন্দে বিভোর থাকুন
সকাল সন্ধা প্রতিদিন"
একদম মন খারাপ করা লেখা, যারা হাসি আনন্দে বিভোর থাকেন প্রতিটা ক্ষন তারা ভুলেও এই পোস্টে ঢুকবেন না! প্লিজ!
আচ্ছা কেউ কি আমায় বলতে পারেন, বাবারা এমন হন কেন? [সীমাহীন শূণ্যতা! ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০]
বাবা! তুমি অনেক বিদ্বান ছিলে, দেশ বিদেশের নামকরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের ঝুরিতে একে একে ভরে নিয়েছ বড় বড় ডিগ্রি! চাকুরি জীবনে বিত্তের দুর্মোহ হাতছানি সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়ে একে একে কাধে তুলে নিয়েছ অজপাড়াগায়ের ওইসব লিখতে পড়তে না জানা কৃষান কৃষানির বেটা বেটিদের কিভাবে টিপসই না দিয়ে স্বাক্ষর করতে হয়, কিভাবে কুড়ি'তে না গুনে ১০,২০,১০০ করে টাকা গুনতে হয়, কিভাবে অংক বইয়ের দুর্বোধ্য জটিলতা খেলার ছলে সমাধানের নেশায় মত্ত হওয়ার আনন্দে বিভোর হতে হয়, কোট টাই পড়া শহুরে ভদ্দোরনোকেদের কিভাবে নিজেদের বিবেক বোধ, সৌজন্যতা বোধ, বিনয় দিয়ে শিখিয়ে দিতে হয় মানুষ হওয়া মানে হৃদয়ের ভেতরের আরেকটা হৃদয়বোধকে অন্যের সেবায় উজার করে দেয়া যায় তার প্রকাশের মাধ্যমে। তুমি বন জঙগলে ঘেরা গাও গেরামের কত সহস্র ছেলেমেয়েদের হৃদয়ে প্রকৃত (প্রাতিষ্ঠানিক, আদর্শিক) শিক্ষার আলো দিয়েছ জ্বালিয়ে তার হিসেব কে জানে। তোমার ওই হাজারে-হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে আমিও তো ছিলাম একজন! মনে আছে তোমার সেই দিনের কথা? ক্লাস চলাকালীন বড় ভাইয়ের সাথে সাথে আমিও গিয়ে বসে থাকতাম তোমার চেয়ারটার টিক পাশের চেয়ারটায়! নাছোড়বান্দা এই আমি'র গগনবিদারী চিত্কারে তুমি আমাকে সরাসরি ক্লাস টুতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলে~ বলেছিলে ফাস্ট হতে না পারলে ক্লাস টুতেই থাকতে হবে আরো একবছর~! আমি কিন্তু আব্দার ধরেছিলাম, আমি ফাস্ট হতে পারলে আমাকে একটা ডাহুক ঘুড়ি বানিয়ে দিতে হবে~
তুমি যেদিন আমাকে ডাহুক ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছিলে আমি কতটা ভীষন খুশি হয়েছিলাম তা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা বাবা~ তোমার হাত ধরে সেই ক্লাস টু থেকেই শিখেছি গ্রামের হাট থেকে দরদাম করে কিভাবে বাজার সদাই করতে হয়~ বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে মাকে নি জানিয়ে চুপিচুপি কিভাবে মুড়কি/ লাড্ডু কিনে খেতে হয়~ {কিভাবে যেন মা, ঠিক ঠিকই টের পেয়ে যেত}
স্কুলে, কলেজে, শুক্রবারের মসজিদে, বড় ইদগাহ মাঠে, গ্রাম্য শালিসে সব খানেই তুমি হতে মধ্যমনি! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম কি সুন্দর হাসিমুখে তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে~ একটু বড় হয়ে বুঝতে শিখেছি শুধু শিক্ষাগত বড়বড় ডিগ্রিই নয় কেবল আদর্শ দিয়েই আপামর মানুষের হৃদয়ের কতটা উচ্চতায় নিজের আসন গড়ে নেয়া যায়!
তুমিতো একজন সত্যিকারের অগ্রপথিক, পথ তোমাকে চলতেই হবে~ তোমার দেখানো পথে পিছু পিছু আমরাও চলে আসব দলে দলে! বড্ড অদ্ভুত এই সমাজের চলার পথে যখনই কোন সমস্যার
মুখোমুখি হব তোমার কাছে চলে আসব এক দৌড়ে। তুমি সকৌতুক হাসিমুখে বলে দেবে তার সমাধান!
তুমি এত কিছু বুঝ, এত ছিল তোমার জ্ঞানের বহর! তবে কেন বুঝনি আমি এখনো তোমার প্রত্যাশিত যোগ্যতায় নিজেকে শানিয়ে নিতে পারিনি~ এখনো তোমার স্বপ্নের ওই ভুমিতে হালচাষ করতে শিখিনি~ তুমি চেয়েছিলে আমি যেন শত দুর্ভোগে, খড়স্রোতা কস্টনদীর চৌকোষ মাঝি হয়ে তোমারই মত সমাজের ওইসব অভাগা মানুষের পাশে দাড়াতে পারি~
তুমি আমাকে এতটা অপ্রস্তুত রেখে এভাবে লুকিয়ে থাকতে পার না~ আমার ডাকে সাড়া তোমাকে দিতেই হবে~ আমাকে আরেকটা পানষ ঘুড়ি আজকেই বানিয়ে দিতে হবে~ আমি ওই ঘুড়িটার মত করে একটা উন্মুক্ত আকাশে অবাধ উড়ে বেড়াব~
লোকেরা বলে তুমি নাকি না ফেরার দেশে চলে গেছ! সঅঅঅঅব মিথ্যে কথা! তুমি আমাকে দেখ নাই? কি চমকানো! হাসি মুখে নিজ হাতে তোমায় যতন করে দিয়েছি গোসল! গোসল অবশ্য আগেও দিতাম! ব্যতিক্রম শুধু সেদিনের গোসলে উপরে ছিল একটা মশারী! পানিটুকু ছিল কিসব পাতার সমাহারে মেশানো! তোমাকে গোসল দেয়ার বড় ভাইয়া কি সুন্দর ঘ্রানের মিশ্রন মিশিয়ে দিয়েছে তোমার সাদা ওই কাপড়ের গায়ে!
তোমার অগনিত গুনগ্রাহী একে একে অশ্রুসজল চোখে তোমাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছিল! আমি দিব্যি হাসি মুখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলাম! কাধে করে নিয়ে গেলাম তোমারই অতিপ্রিয় (তোমারই স্মৃতিধন্য ৫৯ বছরের) বড় ঈদগাহ মাঠে! বলেছিলে নামাজে জানাজাটা পড়াতে! মাত্র ৪.০০ ঘন্টার ডাকে বিদেশ বিভুই থেকে উড়ে এসে বড় ভাইয়া পড়িয়েছে তোমার নামাজে জানাজা! আমি অবোধের মত তাকিয়ে রইলাম! হাজার হাজার মানুষকে উদ্যেশ্য করে আমি কিছু বলতে পারিনি~ জানাতে পারিনি তোমার স্বপ্নপথের পথিক হব এই দৃপ্ত শ্লোগান!
নিজ হাটে খুড়েছি কবর! শেষ তোমাকে শুইয়ে দিয়েছি চিরদিনের ঘুমের বিছানায়! পাষানের মত শক্ত হৃদয়টাকে আর ধরে রাখতে পারিনি! তোমার অনুরোধ সত্বেও চোখের পানি আর পারিনি ধরে রাখতে!


বাবা তুমি আমার ডাক শোন আর নাইবা শোন~ শুধু আরেকটি আবদার রেখে যাও, তোমার দেখানো পথে আমিও আসছি! খুব শিঘ্রই! তুমি, আমার মা, আমরা ৪ ভাই ৪ বোন আবার একসাথে হবার আগপর্যন্ত যেন সীমিত সামর্থে আদর্শের এক পুর্নাঙ্গ নমুনা হয়ে আমরা পাশে থাকতে পারি সমাজের ওইসব সুবিধা বঞ্চিত অগনিত মানুষের!
তার আগে আরেকবার বলছি তোমায়! বাবা আমায় আরেকটা রঙ্গিন পানষ ঘুড়ি বানিয়ে দাও বিশাল ওই উন্মুক্ত আকাশে অবাধ উড়ে বেড়াব বলে!
"ভাল থেক বাবা তুমি
চির শান্তির নীড়ে~
আমি এসে ডাকব তোমায়
ঘুম ভাঙ্গাব বলে"