চারটি ইংরেজি শব্দ Acquired Immune Deficiency Syndrom এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল AIDS (এইডস)। আবার তিনটি ইংরেজী শব্দ Human Immunodeficiency Virus এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল HIV (এইচআইভি)। এইচআইভির কারনে এইডস হয়। কোন রোগ বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে এইচআইভি ক্রমান্বায়ে ধ্বংস করে দেয়। তাই, এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই যেকোন রোগে (যেমন: নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া) আক্রান্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এইডস এর কোন প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি।
মানবদেহে এইচআইভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করার ঠিক কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা দেবে তা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়। তবে এটা মনে করা হয়ে থাকে যে, এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস- এ উত্তরণ পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ৫-১০ বৎসর অথবা তারও বেশি। এই সুপ্তাবস্থার তাৎপর্য হচ্হে, এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি (যার শরীরে এইডস -এর কোন লক্ষণ যায় নি বা যে আপাতদৃষ্টিতে সুস্খ) তার অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ছড়িয়ে দিতে পারে।
এইডস এর প্রধান লক্ষনসমূহ
এইডস -এর নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। তবে, এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্য যে রোগে আক্রান্ত হয় সে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে: (১) শরীরের ওজন অতি দ্রুত হ্রাস পাওয়া (২) দীর্ঘদিন (দুমাসেরও বেশি সময়) ধরে পাতলা পায়খানা (৩) পুন: পুন: জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া (৪) অতিরিক্ত অবসাদ অনুভব হওয়া (৫) শুকনা কাশি হওয়া ইত্যাদি।
উল্ল্যেখ যে কারো মধ্যে উপরিউক্ত একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তবে, কোন ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এইচআইভি কিভাবে সংক্রমিত হয়
বায়ু, পনি, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোঁয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ) বেশি থাকে। ফলে, মানব দেহের এই তরল পদার্থগলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হল:
১) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত ব্যাক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে
২) আক্রান্ত ব্যাক্তি কতৃক ব্যবহৃত সুচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোন ব্যাক্তি ব্যবহার করলে
৩) আক্রান্ত ব্যক্তির কোন অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে
৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে)
৫) অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে
এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ
এইচআইভি সংক্রমণের উপায়গুলো জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা এইডস প্রতিরোধ করতে পারি। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হল:
১) অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া
২) ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা
৩) অনিরাপদ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা
৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
৫) কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া
যৌনরোগ এবং এইচআইভি
ইংরেজি শব্দাবলী Sexually Transmitted Disease এবং Sexually Transmitted Infection এর সংক্ষিপ্ত নাম যথাক্রমে এসটিডি (STD) এবং এসটিআই (STI)। এসব রোগ বা সংক্রমণ সাধারণত অনিরাপদ যৌনমিলনে মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। কিছু কিছু যৌনরোগ যৌনমিলন ছাড়া অন্য উপয়েও সংক্রমিত হতে পারে। যৌনরোগসমূহ ভাইরাসঘটিত অথবা ব্যকটেরিয়া ঘটিত হতে পারে। এ ধরনের প্রধান রোগগুলো হল: গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামিডিয়া, এইচআইভি, জননেন্দ্রিয়ের চর্মরোগ ও ফোঁড়া, হেপাটাইটিস-বি ইত্যাদি। এসব রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হল: যননাঙ্গ বা এর আশেপাশে ঘা/চুলকানি হওয়া, প্রসাবের সময় ব্যথা ও জ্বালা করা, যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ পড়া ইত্যাদি।
যৌনরোগ এবং এইচআইভির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যাদের কোন যৌনরোগ রয়েছে তাদের এইচআইভি দ্বরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
এইডস অক্রান্ত ব্যাক্তির পরিচর্যা
মরণব্যাধি এইডস এর পরিণতি আমরা জানি। একজন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্যকে সংক্রমিত করে না এবং অক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে না। তাই আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে আমাদের সামজ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করা না হয়। তাকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে উৎসাহিত করতে হবে। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের করনীয় হবে:
১) এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা,
২) তাদেরকে মানসিকভাবে প্রফুল্র রাখার চেষ্টা করা এবং তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া,
৩) তাদেরকে অন্যান্য সবার মত সমান সুযোগ দেয়া,
৪) এইচআইভি অক্রান্তদের নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ থেকে বঞ্চিত না করা,
৫) পরিবারের ও সমাজের অন্যান্য সদস্যগণ কতৃক এদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।