ভাইয়েরা আমার!!! পিলিজ বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না দয়া করে।
আমরা চলাফেরার সময় আপনারা অসচেতনার সহিত অনেক কিছু গায়ে জড়িয়ে বের হন, যা আপাদের করা উচিত না। যেমন- আপনারা ফরমাল ড্রেস পরে বের হন। একবার ভাবুন আপনাদের পেছনের শেপ বোঝা যায়, আপনাদের বুকের মাপ বোঝা যায় আপনাদের অনেক আর্কষনীয় লাগে এতে মেয়েরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবং এর জন্য মেয়েটি দায়ী নয় বরং আপনি দায়ী কারণ আপনি এমন পোশাকটি পরে আসছেন।
ভাইয়েরা, একবার ভেবে দেখুন; আপনি যখন টি র্শাট গায়ে দেন তখন আপনার বাহু দেখা যায় তাতে একটি মেয়ে উত্তেজিত হতে পারে তাই এমন পোশাক অবশ্যই পরা উচিত না। আর যদি আপনি বডি বিল্ডার বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোন তাহলে তো কথাই নেই প্রতিটি মেয়ে আপনাকে ডেব ডেব করে দেখবে। আপনি কেন আপনার বাপ, ভাই কে এমন টি শার্ট গায়ে দিয়ে রাস্তায় বের হতে দেন। একবার ভাবুন তো কেউ আপনার ভাই ও বাবার দিকে তাকালে আপনার কেমন লাগবে? আসুন এই পোশাক পরিহার করি।
ভাই একবার ভাবুন আপনি যখন থ্রি কোয়াটার পরে বের হোন তখন আপনার সুন্দর পা দেখে কী মেয়েরা খাদকের মতন তাকিয়ে থাকে না? তাহলে কেন আপনি সেই পোশাকটি পরেন। অনেকেই না বুঝে পরে তাই পোশাক বাছাইয়ে সাবধান হোন এবং সুন্দরের পথে আসুন। ভাইয়েরা আপনার গরম লাগে বলে হাফ হাতা জামা পড়েন যা একেবারেই উচিত না। কারণ আপনার বাহু বের হয়ে থাকে যা একদম অনুচিত। আপনে ধর্ষিত হলে কিন্তু মেয়েটার দোষ নেই বরং আপনার পোশাকটি ও আপনি দায়ী।
ভাইরা আমার, চুল দেখিয়ে হাঁটবেন না প্লিজ। আপনার সুন্দর সিল্কি চুল দেখলে মেয়েরা চুলে হাত বুলাতে চাইবে। আপনার চুলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। প্লিজ ভাইয়েরা মাথা ঢেকে চলাফেরা করুন।
ভাইয়েরা, আপনারা স্টাইল করে বুকের বোতাম খুলে চলা ফেরা করেন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনার খোলা বুক সাথে যদি পশম থাকে তাহলে মেয়েদের কেমন অবস্থা হয়। ধর্ষন হলে কিন্তু আপনাকে দায় নিতে হবে। কারণ যে কোন মেয়ে খোলা বুক দেখলে উত্তেজনা অনুভব করবে। এটাই স্বাভাবিক। লক্ষ্মী ভাইরা আমার প্লিজ বুকের বোতাম লাগিয়ে রাস্তায় বের হোন। কোন মেয়ে যাতে উত্তেজিত না হয় সে রকম পোশাক পরে বের হোন। একটি মেয়ে আপনার বাপ, ভাইয়ের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকুক তা নিশ্চই চান না। আসুন ভাইয়েরা আমরা সত্যের পথে আসি, সুন্দরের পথে আসি।
............................................................................................................
অনেকে ভাবতাসেন মালডা কি মেন্টাল কেস। পাগল-টাগল হইয়া গেলো। উপরের লেখাটা উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত; কিন্তু শুধু লিঙ্গ'টা পরিবর্তন করে দিলেই খুবই স্বাভাবিক বহুল প্রচলিত একটা স্ট্যাটাসে পরিণত হবে। উপলক্ষটা হচ্ছে আমাদের সমাজের বহুল প্রচলিত মিথ "ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাক দায়ী"
ধর্ষণের জন্য কি সত্যিই নারীর পোশাক-আশাক, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি দায়ী। তাই যদি হত তাহলে একাত্তরে আমাদের মা-বোনেরা কি এমন পোশাক পরেছিলেন ও আচরণ দেখিয়েছিলেন যে, পাকিবাহিনী তাদের নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছিল? কেউ কি পাকিদের ধর্ষণের জন্য উন্মত্ত করেছিলেন সে সময়? প্রাসঙ্গিক ভাবেই “যুদ্ধ ও নারী” গ্রন্থ থেকে সেসময়ের নারী নির্যাতনের কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি।
“২৬ মার্চ ১৯৭১, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়েদের ধরে আনা হয়। মেয়েরা আসা মাত্রই সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি মহিলা এবং বালিকার পরনের কাপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণে লিপ্ত হতে থাকে। …পাকসেনারা ধর্ষণ করেই থেকে থাকেনি, সেই মেয়েদের বুকের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দেয়, মাংস তুলে নেয়। মেয়েদের গাল, পেট, ঘাড়, বুক, পিঠ ও কোমরের অংশ তাদের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন। যেসব মেয়ে প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করত তাদের স্তন ছিড়ে ফেলা হত, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করা হত। বহু অল্পবয়স্ক বালিকা উপর্যুপরি ধর্ষণে নিহত হন। এর পরে লাশগুলো ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে বাইরে ফেলে দেওয়া হত।”
পাকিবাহিনী বলুন আর যে কোনো ধর্ষণকারীই বলুন- এরা আসলে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। এদেরকে পশু বললেও পশুজাতির অবমাননা করা হয়। তাই এদের শুধুই ঘৃণ্য ধর্ষণকারী নামে গণ্য করা হোক।
এখন বলুন একাত্তরের নারী ধর্ষণে নারী সমানভাবে দায়ী হয় কিভাবে?
যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়, যখন সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের স্ত্রী-কন্যাদের উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়, তখনও কি আপনারা বলবেন যে নারী নিজেই তার ধর্ষণের জন্য দায়ী?
ইয়াসমিনের মত মেয়েরা যখন বাসায় পৌছানোর জন্য পুলিশের সাহায্য নেয়, তখন ইয়াসমিনের কোন আচরণের কারণে তাকে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। মাথায় হিজাব পরেও কি রক্ষা পেয়েছিল দক্ষিণখানের নোয়াপাড়া আমতলার একটি ক্লিনিকের খণ্ডকালীন চিকিত্সক ডাঃ সাজিয়া?
কারো কাছে কি কোনো যুক্তি আছে কেন ২ বছরের শিশুকে ধর্ষিতা হতে হয়?
উপরের সবগুলো ঘটনায় নারী কিভাবে ধর্ষণের জন্য সমানভাবে দায়ী কেউ কি বলতে পারে?
আসলে ধর্ষণের জন্য নারী নয়, ধর্ষনকারীর বিকৃত মানসিকতাই এককভাবে দায়ী। ধর্ষণকারী কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয়। ধর্ষণকারী নারীর পোশাক, বয়স, আচরণ কোনো কিছুই আমলে নেয় না। বিকৃত কাম চরিতার্থে নারীরা এদের শিকার হয়। ধর্ষণকারীর পক্ষে তাই কোনো সাফাই নয়। এদের দরকার উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সেইসঙ্গে যথাযথ চিকিত্সা।
নারীর পোশাক যদি ধর্ষণের মূল কারণ হয়, তাহলে বলেন ১১ বছরের বাচ্চাটার পোশাক কী এমন উগ্র ছিল যার জন্য তাকে ধর্ষণ করা হলো। ৯ বছরের বাচ্চা কিংবা এই যে ১৭ মাস বয়সী মায়ের কোলের শিশুটাকে পর্যন্ত ধর্ষণ করা হয়... তারা কী "অশালীন" "অসভ্য" পোশাক পরিধান করতো?
পোশাককে যারা ধর্ষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এইসব আত্মমর্যাদাহীন লোলায়িত পুরুষরা নিজের মাতৃগর্ভকে পর্যন্ত কলঙ্কিত করে ফেলেছে! এদের মতো শিক্ষিত বলদেরা ধর্ষকদের সাফাইকারী! ধর্ষক থেকেও এরা মারাত্মক অপরাধী। কারণ এদের সাফাই আরেকটা ধর্ষণের ক্ষেত্র তৈরি করে আমাদের সমাজে। তাই সমানতালে এইসব বর্বর সাফাইকারীদেরও বিচার করা উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:২৪