খুব কাছের, খুব ভালোবাসার একটা নীলরঙা নাম হঠাৎ একদিন তিতকুটে কালো হয়ে গেল। হাজার কবিতা লেখা সেই নামটার যায়গায় ভেসে উঠলো "Facebook User"। এরপর আমি খেতে ভুলে গেলাম, ঘুমুতে ভুলে গেলাম। আমার হাত কাঁপতে শুরু করলো, আমার চোখ লাল হতে লাগলো, আমার হাঁটু শক্তি হারালো। আমার প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয় অসাড় হল। বুঝলাম তুমি আমার কি ছিলে, তুমি ছিলে আমার অত্যাবশ্যকীয় অনুভূতি; আমার একান্ত ইন্দ্রিয়। আমার দৃষ্টি, আমার স্বাদ, আমার স্পর্শ, আমার উচ্চারণ, আমার ঘ্রাণ। নিশ্চয়ই আমার প্রার্থনায় কোন ত্রুটি ছিল। হয়ত ছিল ভুল মন্ত্র উচ্চারণের অলঙ্ঘনীয় পাপ। তাই তুমি, হে আমার দেবী; আমার হৃদয় মন্দিরে আর অধিষ্ঠিত রইলে না। চলে গেলে পূজা সাঙ্গ হবার আগেই।
চাঁদকে খুব ভয় পাই। আমার মাঝে একটা আতঙ্কের নাম ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। সংগোপনে বুকে পুরে রেখেছি যে স্বপ্নটাকে, চাঁদের আলোতে ওরা জেগে ওঠে। সম্পূর্ণ চাঁদ আমাকে দুমড়ে মুচড়ে রাজপথে টেনে নিয়ে আসে। আমি মধ্যরাতের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলি। কি আশ্চর্য! তোমাকে চেনার আগে, তোমাকে দেখার আগে আমি চাঁদ দেখি নাই! অথচ জীবনের বড় একটা সময় জেনে এসেছি চাঁদটা নাকি আমাদের বড় কাছাকাছি। যদি কাছাকাছিই থাকবে তাহলে এতদিন দেখিনি কেন। সত্যিই এতদিন চাঁদ দেখিনি। আমি বুঝিনি মধ্যরাতে দুমড়ে মুচড়ে পথে না নেমে এলে চাঁদ দেখা যায় না। এতদিন যে চাঁদ, সূর্য, নদীর স্ফটিকের মত স্বচ্ছ জল দেখেছি আসলে এসব কিছুই দেখিনি। যদি সূর্য দেখতাম তাহলে তোমার এতগুলো রঙের সাথে পরিচয় হয়নি কেন, যদি নদী দেখতাম তাহলে সেই জলে তোমার ছায়া দেখিনি কেন।
তারপর আমার ইন্দ্রিয় আবারও অসাড় হবে, আমি হব মধ্যরাতের ধনী।
একদিন মধ্যরাতে তোমাকে দেখবো তারপর হাসতে হাসতে আত্মহত্যা করবো।
মেয়ে তুমি কি জানো;
যে তোমাকে দেখেনি, সে কি দেখেনি ?
এক একটা সেকন্ডের উদ্ভ্রান্ত সময়ে আমি ধীরে ধীরে তোমাকে হারিয়ে ফেলছি। যেভাবে সেলুলয়েডের ফিতাও ধীরে ধীরে হলদেটে হয়ে আসে। অবহেলায় ফেলে রাখা সিগারেটের অ্যাশট্রে থেকে ছাই উড়ে যায়। আর খুব যত্ন করে রাখা ফুলদানীর তাজা গোলাপও শুকিয়ে যায় কয়েক দিনেই। তা যদি আমি খুব আবেগ দিয়ে, ভালোবেসে, চোখের জলে ভিজিয়ে রাখি প্রতিদিন; তবুও।
সেই সাথে হাল্কা হয়ে আসা তোমার অবয়ব;
সেই রাস্তা,
সেই ফুটপাত,
সেই ঘাস,
সেই রিকশা,
তোমার ক্লান্ত দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া সেই বিন্দু বিন্দু ঘাম,
সব কিছু আছে ঠিকঠাক। শুধু তুমিই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছ। হারাচ্ছে তোমার অবয়ব। ভোর হচ্ছে রাত হচ্ছে প্রত্যেকটা জড় বস্তু আছে ঠিকঠাক।
আমার ডাইরি,
আমার কলম,
এই গীটার,
শুধু জীবন্ত তুমিই হারিয়ে যাচ্ছ, রক্ত মাংসের তুমি হারিয়ে যাচ্ছ, অনেক কথা বলা তুমি হারিয়ে যাচ্ছ,
অনেক ভালোবাসার তুমি হারিয়ে যাচ্ছ।
ভুল করেছ বলি না। দেবী ভুল করে না। জীবনের ধর্ম এটাই জীবন হারায় জড় হারায় না। এখন দেখার বিষয় এই ঝাপসা স্মৃতিটুকু কতদিন টেকে। আমি চাইনা হারাতে স্মৃতিটুকু, হারাতে তোমাকে। ঝাপসা হোক, মরচে পড়ুক, তবু তোমার শূন্যতা যেন কখনো না হয় আমার জীবনের পূর্ণতা।
তোমাকে হারিয়ে ফেলার সেই দিনটা সম্ভবত ছিল কোন এক পহেলা বৈশাখ, এরপর থেকে পহেলা বৈশাখ আমার কাছে তেমন অর্থ রাখে না। আমি পুরনো ডাইরির পাতা উল্টাই, চোখ ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসে...
জীবনটা মন্দ না।