মাঝে মধ্যে কি কি সব মনে করে মন খারাপ হয়। বয়সটাও বড় একটা ভালো না। মন খারাপ, হতাশা এইসব একবার ঢুকলে আর বেরোতে চায় না, মনের মধ্যে কাঁথা কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে একেবারে। কয়েকদিন পর দেখা যায় ঘটি- বাটি, থালা- বাসন, খাট- পালংক নিয়ে রীতিমতো সংসার পেতে বসেছে। বসতে দিলে শুতে চায় অবস্থা আর কি। দু:খ কষ্ট ব্যাপারগুলো এই কারণেই এড়িয়ে চলা ভালো। মাঝে মধ্যে একটু আধটু দু:খবিলাস করতে ভালো লাগে। এক ধরণের অহংকার জাগে, মনে হয় অমুককে ফোন দিয়ে বলি, আমার মন খারাপ। অমুক তখন বলুক, কেন কি হয়েছে? আমাকে বলা যায়?
আমি তখন বহুত কষ্টে একটা নিরুৎসুক কণ্ঠ এনে বলি, বলা যাবে না। কষ্ট পেয়ে বেচারী বলুক, কেন? আমাকে বলা যাবে না কেন? আমি বলি, সবাইকে সব কথা বলা যায় না। বলতে ইচ্ছা করে না। তখন সে ক্ষুণ্ণ হয়ে বলুক, তাহলে ফোন করলে কেন? তখন ঠোঁট উল্টে বলব, আমার ইচ্ছা।
এরপর কি হবে, রাগ করে ফোন রেখে দেবে। তখন আরেকটু দু:খ লাগবে। সেই দু:খের কারণটা তবু জানা। প্রথম দু:খের কারণটা অজানা।
অজানা দু:খে চুপ করে মেঘ মেঘ আকাশের দিকে ভাবুক চোখে তাকিয়ে থাকার একটা আলাদা ভাব আছে। নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে হয়। একটা মানুষকে কষ্ট দিতে পারার মধ্যেও এক টুকরো আনন্দ আছে। আমি কষ্ট দিলাম, মানে আমার আচরণে একজন কষ্ট পেল, মানে আমার আচরণ একজনের কাছে বিশেষ কিছু, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু। মানে বোধহয় দাঁড়াল আমি ভিড়ের মধ্যেকার মানুষটা না, একটু আলাদা। পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে এমন একজন মানুষ আছে যে আমার কথায় মনে কষ্টও পায়...................
এটা কি দু:খবিলাস? হ্যাঁ এটাই দু:খবিলাস। ভিড়ের মধ্যে থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে যদি একটু মুহূর্তে একজন মানুষকে কষ্ট দেয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে মেঘ গুণতে গুণতে হাঁটা যায় সেটাই দু:খবিলাস। সেটুকুর জন্যই মানুষ অনেক সময় দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করাটাও হয়ত আনন্দের। যার অপেক্ষা শেষ হয়েছে হয়ত তার কাছে...........
কে বলতে পারে?
দু:খকে হেসে অবজ্ঞা করে সরিয়ে দেয়াটাই কি সুখী হবার জন্য খুব দরকার? নাকি সেটাকে সত্যিই বেড়ে উঠতে দেয়াই উচিৎ? একদিন বেড়ে উঠে মহীরুহ হবে। তার নিচে দাঁড়িয়ে আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করব, কি বিশাল গাছ!! আমার চেয়েও অনেক বড়। অনেক প্রশস্ত। তারপর ক্লান্ত অবসন্ন দেহে নিজেই একদিন সেই বিশাল গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে পড়ব। আরো মানুষজন আসবে যাবে, বসবে। আবার চলে যাবে। কেবল আমিই থেমে থাকব। যে গাছটাকে মেরে ফেলা যেত কেবল পায়ে মাড়িয়ে, তার নিচে অসহায় আত্মসমর্পিতের মত বসে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব। আশা থাকবে না, আশাভঙ্গের বেদনা থাকবে না। কষ্টও থাকবে না। যে কষ্টের নিচে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় সে কষ্টকে ভালবাসা যায়। সে কষ্টের সাথে দিনযাপন করা যায়। তাকে হয়ত ভালবাসাও যায়................
..............................
.......................................
একটা দিনের ছোট্ট একটা দু:খবিলাস।
ছোট্ট একটু।
সেখান থেকেই কি তবে শুরু?
.......................................
ছাইরঙা মেঘের সাথে তবে এই প্রথম দু:খবিলাস হোক....................
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১৬