...................................
সকালে উঠলাম তমালের ফোনে, যেতে বলছে ওর ফ্ল্যাটে, অনেক কাজ, হেল্প দরকার।
সারাটা দিন ব্যস্ত কাটালাম। ওর ব্যাগ বাঁধাছাঁদা করতে করতে ক্লান্ত। সবচেয়ে বড় ক্লান্তি- সারাক্ষণ হাসির মুখোশ পড়ে থাকা।
আমার কাছ থেকে যে বইগুলো পড়তে নিয়েছিল সেগুলো ফেরত নেয়ার জন্য জোরাজুরি করল অনেক, আমি নিলাম না। থাক, ওগুলো দেখেও যদি আমাকে মনে পড়ে! মনে পড়ার কি মূল্য কে জানে, হয়ত অমরত্বের বাসনাই হবে সেটা!
সারাটা দিন কাজ নিয়ে মেতে রইলাম, মন খারাপের সুযোগ কই? তবু অবচেতনে চিন্তাটা কিছুতেই ছেড়ে যেতে চায় না- সামনে কি অপরিসীম শূন্যতা, ভাবনাটা খুবই কষ্টের...........
........................................
রাতের এয়ারপোর্ট অপূর্ব সুন্দর, আলোর ফাঁকে ফাঁকে জমাট অন্ধকার- চমৎকার দেখায়। যাওয়ার একটু আগে ও আমার ডানহাতটা টেনে নিল, পকেট থেকে কলম বের করে বলল,
-তোমাকে আমার কন্ট্র্যাক্ট নাম্বার দিয়ে যাই.......... mail me- লিখতে লিখতে বলল ও......and call me. ভালো থেকো।
- bon voyage!
তুমিও ভালো থেকো। আবার কোন সুন্দরী এয়ার হোস্টেসের প্রেমে পড়ো না, ওদিকে একজন পথ চেয়ে বসে আছে, হাসতে হাসতে চোখ টিপে বললাম আমি।
হেসে ফেলল ও।
যেতে যেতে ফিরে তাকাল কয়েকবার, আমি হাসিমুখে হাত নাড়তে লাগলাম, ও অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত.........
ঝাপসা চোখে এয়ারপোর্টের আলোগুলো হঠাৎ মাছধরা নৌকার ক্ষীণ আলোর মত টিমটিমে হয়ে এল............
আমার আনন্দ উচ্ছ্বাসগুলো সব সাথে করে নিয়ে গেল.......
.................................
ড্রাইভারকে বললাম উল্টাপাল্টা ঘুরতে। রাস্তার কোলাহলটা আজ বড় বেশি কানে লাগছে। আমি গ্লাস তুলে দিয়ে জানালার পাশ থেকে সরে বসলাম। গান শুনতে লাগলাম, সম্পূর্ণ অচেনা গান, কথাগুলো অপরিচিত, তমালের গিফট আজই খুললাম। গানের কথা অনেকটা এরকম-
"কেন যে তুমি ভালোবাসলে না? দুঃখ যদি বা দিয়েই গেলে, বলে যেতে কেন দুঃখ দিলে......"
জগতের সবচেয়ে অমিমাংসিত প্রশ্ন বোধহয় এটাই।
চোখ বুঁজে বসে আছি, মনের মধ্যেকার ঝড়টা থেমে গেছে আশ্চর্যভাবে। কোন এক অজানা কারণে আমি ভেবেছিলাম ও যাবে না, থাকবে.....
মানুষ কেন বোকার মত আশা করে?
পথের দিকে আজ আর কোন ঝোঁক হচ্ছে না, ঝিমিয়ে যাচ্ছি?
.....................................
বাসায় এসে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেললাম - স্পর্শটা থাক, কালিটা মুছে যাক। ফোনও করব না, মেইল ও করব না। তাতে কেবল মায়াটাকেই টেনে বড় করা হবে।
মোবাইলের সীমকার্ডটাও খুলে ভেঙে ফেললাম- এই নাম্বারটা ও জানত।
***************************
অমরাবতীতে একদিন বেহুলা গিয়েছিল। ছিন্ন খঞ্জনার মত নেচেওছিল। লখিন্দর তাতে প্রাণ পেয়েছিল।
গল্প কি এতটুকুই?
তারপর তাদের কি হয়েছিল?
তারা কি সুখী হয়েছিল?
নাকি লখিন্দর প্রাণ পাবার পর আর বেহুলাকে চেনেনি?
নাকি তাদর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল?
ইন্দ্রের সভায় আমিও গিয়েছিলাম, কি পেয়েছি জানি না , তবে যার জন্য গিয়েছিলাম তাকে পাইনি। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলি আমি -পাইনি, পাইনি, পাইনি..........
ডালিমকুমার আর আসবে না, স্লিপিং বিউটির ঘুমও ভাঙবে না আর... সোনার কাঠি রূপার কাঠির আর জায়গা বদল হবে না... প্রিন্স চার্মিং চলে গেছে... চলে গেছে, চলে গেছে...
কেন? কেন চলে গেল? কেন?...................
আমি ফিসফিস করে বারবার প্রশ্ন করি............
কেবল মৃদু প্রতিধ্বনি ফিরে ফিরে আসে- কেন? কেন? কেন?
..........উত্তর আসে না.........
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪