বলছিলাম ইন্দ্রের সভার কথা.....
সভায় গিয়ে বেহুলা নেচেছিল, দেবতাদের মুগ্ধ করে প্রিয়তমের প্রাণ ভিক্ষা পেয়েছিল সে। বলতে চাচ্ছিলাম সেদিন ইন্দ্রের সভায় কি হল সেকথা......
ইন্দ্রের সভায় প্রেমে পড়া পাবলিকদের মাঝে মাঝেই যেতে হয়, প্রাণ ভিক্ষা করাই হোক বা সহানুভূতি ভিক্ষাই হোক- করতে হয় সেখানে গিয়ে। বলছিলাম শাস্তি আসলে কার হল? লখিন্দর না বেহুলার? নাকি দু'জনার?
কখনো মনে হয় দেবতারা বড় নিষ্ঠুর, যে মেয়েটি সদ্য তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছে, তাকে কিনা বলে নেচে দেখাও! আজব!
আবার এটাও ঠিক যে দেবতা বেচারীদেরও তো নাচ দেখবার শখ থাকতে পারে!
আলোচনাগুলি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় এবং জটিল... কিন্তু এগুলোই আমার ছাত্রটি অত্যন্ত উৎসাহের সাথে শোনে। ছাত্রটি আর কেউ নয়, সে আমার "ও"।
ধ্যাৎ, যেভাবে শুরু হল কঠিন ইন্টেলেকচুয়াল ভাবে, লেখার বিষয় ততটা ইন্টেলেকচুয়াল না। অতীব সরল। আমার 'ও', লেখার সুবধার্থে তার একটা নাম দেয়া যাক- তমাল। সত্য কথা হল, নামটা আমি বানাইনি, ওর নামটা আসলেও তমাল, খুব একটা সুন্দর নাম না। সে যাই হোক, ওর সাথে আমি বসে বসে এসব বিষয়ে ক্যাচাল পাড়ি। ও বোঝে কিনা জানি না, তবে চুপ করে থাকে, শোনে। যে ছেলেটা দশ বছর বয়সে দেশ ছেড়েছিল চোখ মুছতে মুছতে, একমাত্র বন্ধু আমাকে ফেলে যেতে যার কষ্টের সীমা ছিল না- সেই ছেলেটা। সেই ছেলেটাই আরো তের বছর পর দেশে ফিরে এসেছে নাকি শেকড়ের সন্ধানে। আমার শেকড় বাকড়ে বড় একটা আস্থা নেই, আমি ওর এই 'শেকড়-সন্ধান' কথাটা শুনে পিচিক করে থুতু ফেলে বলেছিলাম,'রাখ তো এইসব শেকড় ফেকড়, যত্তসব ভুয়া প্যাঁচাল!' শেকড়ের ব্যাপারটা আসলে অনেকটাই সত্য ছিল, আবার মিথ্যাও ছিল। শেকড়ের টানটা যে আসলে কেন জেগেছে সেটা চাঁদজাগা একরাতে আমাদের বাসার ছাদে পরিষ্কার হয়েছিল। বাতাসে চুল উড়ছিল ওর আর জোছনার আলোয় মুখটা অপূর্ব দেখাচ্ছিল, ও বলল কেন ও দেশে এসেছ।এসেছে মায়ের সাথে রাগ করে। বাবা মারা যাবার পর মা আরেকটা বিয়ে করতে চায়। জোছনা রাত, আমার তর্কাতর্কির খুব একটা ইচ্ছা ছিল না, তবু থাকতে না পেরে বললাম,'বিয়েটা পুরোপুরিই স্বাধীন ইচ্ছার ব্যাপার, তুমি তোমার মাকে ডিকটেট করতে পার না।' ও বলল,'আমি ইউরোপে বড় হওয়া ছেলে, তুমি কিন্তু আমার চেয়েও ওয়েস্টার্নাইজড কথা বলছ।'
-উঁহু ওয়েস্টার্নাইজড না লজিক্যাল.... অবশ্যই আমি তোমার মত সেনসেটিভ না, আমার তো শিকড়ের টান জাগে না... খোঁচাটা দিয়ে আমি আড়চোখে তাকাই...
ও ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,'হুমম... কোন আপত্তিই থাকত না যদি না লোকটা আমার বাবার বন্ধু হত আর..... '
-কি?
...আর যদি লোকটা বউ মারা যাওয়ার দুই বছরেও বিয়ে না করে অ্যাট লাস্ট এসে বলত সে মাকে বিয়ে করতে চায়...
-তো?
-তুমি বুঝবে না। আই ফিল লাইক, বাবাকে ওরা চিট করেছে, মা হয়ত আগে থেকেই ওই লোকটাকে পছন্দ করত, বাবা মারা যাওয়ায় বোধহয় ওদের খুব ভালো হয়েছে....
আমি পাশ থেকে ওর মুখের দিকে তাকালাম, মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে আছে। আমি ওর হাতটায় মৃদু করে একটা চাপ দিলাম, যার অর্থ 'সব ঠিক হয়ে যাবে...'
হঠাৎ ও আমাকে বলল,'আচ্ছা তুমি আমাকে যে গল্পটা বলেছিলে না... ওই যে কি যেন নাম একটা মেয়ের.. যেটা আমি খুব লাইক করলাম...'
আমি বললাম,'মহুয়া?'
-নো নো
-কাজলরেখা?
-নোহ...
তাহলে? বেহুলা?
-রাইট। আমার মনে হয় ওয়াইফ হলে ঐরকম হওয়া উচিৎ।
আমার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেল.... হাসতে গিয়েও হাসলাম না.... একে তো পূর্ণিমা রাত তারপর আবার কথাটা বলেছেও ও সিরিয়াসলি, হাসলে তর্ক বেঁধে যাবে, রাতটাই মাটি হবে শেষে।
-জানো?
-কি?
-আমার মনে হয়, আমি একটা মেয়ে পাব জাস্ট লাইক দ্যাট........
বলে উৎসুক মুখে ও আমার দিকে তাকাল।
আমার আবার সেই কাঠখোট্টা হাসিটা পেয়ে গেল, এবার আর চুপ করে থাকলাম না
তুমি দেশে এসেছ কি শিকড় না বেহুলার সন্ধানে? হুম?
তাছাড়া তোমরা আশা কর কি, মেয়েরা তাদের সর্বস্ব তোমাদের জন্য উজাড় করে দেবে?
নারী পুরুষ বিষয়ক পুরনো তর্ক... ভাবছিলাম রাতটাই মাটি হল...
কিন্তু হল না.... ও হেসে দিল, এত নিষ্পাপ একটা হাসি যে আমি আর তেমন কিছু বললাম না....
-রেগে গেলে তোমাকে সুন্দর দেখায়.......
-এটা কি কম্প্লিমেন্ট হল নাকি খোঁচা?
-উঁহু কোনটাই না, এটা ট্রুথ....
আমি কিছু বললাম না...
হঠাৎ ছাদ ফাটানো হাসি শুরু করলাম....
ও বোকা বোকা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,'কি?'
- লখিন্দর, লখিন্দর তমাল, বেহুলার স্বামী মিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ লখিন্দর ওরফে তমাল.........
আমি পিচিক করে থুতু ফেললাম হাসি শেষ করে...
-হ্যালো লখিন্দর, বলে চোখ টিপলাম আমি...
ও লজ্জা পেয়ে গেল।
আজব ছেলে.............. বেহুলা খোঁজে........ হাস্যকর....... কিন্তু কিভাবে লজ্জা পেল!! দেখতে মজাই লাগে....
(টু বি কনটিনিউড...)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৮