১.
মাত্র ২ সপ্তাহ হলো নতুন বাসায় উঠেছে অর্নব। নিচতলায় এক রুমের একটি ছোট্ট বাসা। পড়ালেখা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে। নতুন বাসার উত্তর দিকের জানালাটি খোলাই হয়না বলা চলে। গরমের দুপরে ঠান্ডা বাতাসের আশায় হঠাৎ করে আজ জানালাটা খুলে প্রথমে চমকিত হয়ে উঠলো। পাশে লাগোয়া বিল্ডিংটার নিচতলার ব্যালকনিতে ভেজাচুলে রুমাল দেয়া মাথায় ভেজা কাপড় নেড়ে দিচ্ছে ১৫/১৬ বছর বয়সী সুন্দরী তরুনী। প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিজেকে দ্রুত জানালা থেকে সড়িয়ে নিয়ে আসতে আসতেই মেয়েটির অসাধারন হাসিটা চোখে লাগলো তার।
এরপর মাসটি দ্রুতই যাচ্ছিল সেমিষ্টারের পরীক্ষার ব্যস্ততায়। জানালাটি একপ্রকার বন্ধ থাকায় মেয়েটির কথা ভুলতে বসেছিলো বলা চলে। একদিন রাত আনুমানিক ১১.৩০ টা। কারেন্ট চলে যাওয়ায় অন্ধকারের বসে নিরবতাকে অনুভবের চেষ্টা করছিলো অর্নব। কিন্তু নিরবতাকে আঘাত করলো ভেসে আসা হালকা আওয়াজে মিষ্টি মেয়েলী কন্ঠে গানের সুর............ বাহির বলে দূরে থাকুক , ভেতর বলে আসুক না..........
জানালাটি খুলে দিলো অর্নব। এবার একটু ভালো করে শুনা যাচ্ছে গানের আওয়াজ। বিদ্যুৎ আসার আগে পর্যন্ত ঝিরিঝিরি বাতাস আর মিষ্টি গানের সুর উপভোগ করছিলো সে।
২.
বদলে যেতে থাকলে প্রেক্ষাপট। বাবা মার ডাকে মেয়েটির নাম জানা গেলো, মেয়েটি রিমি। আজই প্রথম ওদের মাঝে কথা হলো। পাশাপাশি বাসা সত্ত্বেও কখনো রাস্তায়, কখনো ব্যালকনিতে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি ছাড়া কথা বলা হয়ে উঠেনি। পরিচয়ের সুবাদে জানতে পারলো রিমি ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। নিজেদের বাড়ী , দুই ভাইবোনের মাঝে সেই বড়। বাবা মার আদরের মেয়ে। বাবা সারাদিন অফিসের কাজে বাহিরে আর মা থাকেন ছোটভাইর স্কুল এবং পরিবারে কাজ সামলাতে ব্যস্ত।
ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে অর্নব আর রিমির মাঝে। দিনে রাতে তাদের অনেক সময় কাটে জানালা আর ব্যালকনিতে বসে কথা বলে। রিমি মাঝে মাঝেই বাসার রান্না করা নুডুলস, গরুর গোশত, চটপটি, পিঠা ইত্যাদি পাছ করে দেয় অর্নরের রুমে।অর্নবের নিষেধ সত্বেও রিমির এ এক কঠিন পাগলালি। অর্নব যতক্ষন রুমে থাকে ততক্ষন আর তার জানালা বন্ধ হয় না।
৩.
দেখতে দেখতে বিজয় দিবস চলে আসলো। আজ আজ রিমি আর অর্ণব ঘুরতে বের হবে। পরিচয়ের পর এটাই ওদের প্রথম একসাথে ঘুরতে বের হওয়া। স্কুলে অল্প কিছুটা সময় থেকে রিমি আসবে লেকের ব্রীজের কাছে। অর্ণব সময়ের আধাঘন্টা আগেই এসে দাড়িয়ে ছিলো। ঠিক ৯.০০ টায় এসে হাজির রিমি। সবুজ শাড়ী আর লাল ব্লাউজ, সবুজের মাঝে লালবৃত্তের টিপে অপরূপ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করছিলো অর্নব। কাছে এসে চিমটি কাটলে ধ্যান ভাঙ্গলো অর্ণবের। মন দেয়া নেয়ার মাঝে কেটে গেলো ওদের ২ ঘন্টা সময়।
ঘুরে গেলো সময় । আসলো নতুন বর্ষ। হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন বর্ষের প্রথম বিকেলটা আজ লেকের পাড়ে ঘুরে কাটানো প্লান করলো ওরা। রিমির কোচিং এর বাহিরেই অপেক্ষা করছিলো অর্ণব। কোচিং শেষ করে দুজনে মিলে পরন্ত বিকেলটা উপভোগ করতে চলে গেলো লেকের পাড়ে। আরো অনেক যুগল লেকপাড়ের নির্মল স্থানকে বেছে নিয়েছে নিরাপদ প্রেমলীলা কেন্দ্র হিসেবে। এটা যেন এক প্রেমকানন। হাটতে হাটতে নিরিবিলি একটি স্থানে গিয়ে বসলো ওরা। হাসি ঠাট্টা আর ভালবাসার মাঝে কেটে গেলো বিকেলটি। রিমির কোমল হাতটি নিয়ে খেলা করছে অর্ণব।
অর্ণবঃ তোমাকে হ্যাপি নিউ ইয়ারের একটি উপহার দেবো?
রিমিঃ জিনিসটা কি?
অর্ণবঃ ধরা যায়না , ছোঁয়া যায়না কিন্তু অনুভব করা যায়।
রিমিঃ নির্দ্বিধায় গ্রহন করবো।
অর্ণব রিমির হাতটি তুলে মুখের কাছে নিয়ে হাতের পিঠে চুপু একে দিলো। কেঁপে উঠলো রিমি। মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দিতেই অর্ণব রিমিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখলো । লজ্জায় লাল হয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললোঃ এই তোমার উপহার?
ঃ হুম, ধরা, ছোয়া যায়না এমন উপহার।
ঃ আজ আর উপহার ফেরত দিলাম না । আরেকদিন সুদ সহ উপহার ফেরত দিবো। সেদিনের অপেক্ষায় থেকো।
৪.
ইতিমধ্যে রিমির মায়ের সাথে পরিচয়ে সুবাদে ওর পরিবারের সাথে অর্নবের ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছেন তিনি। প্রথমে রিমিকে নিষেধ করলেও পরে অর্ণবকে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন। ছেলে হিসেবে সে একেবারে খারাপ না। অর্নবের মা র কথা, তোমার পরিবারকে রাজী করাও রিমির বাবা চাচাকে রাজী করানো দায়িত্ব আমার।
অর্ণব রিমির সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেলো। রিমির মা অর্ণেবের জন্য পাঁচতলার সিঙ্গেল রুমটা খালি করে দেয়ার কথা বলেছিলেন কিন্তু অর্নব রাজী হয়নি। পরের মাসে রিমির পরিবার নিচতলা থেকে ৪ তলায় উঠলো। অর্ণবও বাসা চেঞ্জ করে এক বাসা পরে পাঁচতলার মেসে গিয়ে উঠলো।সামনের খোলা জায়গাটায় দাড়ালে রিমিদের ছাদ অল্প কিছুটা দূরে। কিছুটা ছেদ পড়লো তাদের মাঝে কিন্তু তা সাময়িকের জন্য। এখন ওদের কথা হয় ফোনে। যতক্ষন মোবাইলে টাকা থাকে ততক্ষন আর ছাদ থেকে ছাদে।
৫.
মার্চের এক পরন্ত বিকেলে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলো অর্ণব। মোবইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠলো রিমির নাম্বার। রিসিভ করতেই জানতে চাইলো , কোথায় আছে সে? উত্তর দিতেই বাসায় ফিরে দ্রুত ওর বাসায় যাওয়ার জন্য বললো। কারণ.............?ঃ সারপ্রাইজ আছে।
বাসায় ফিরেই কাপড় চেঞ্জ করে রিমির বাসায় যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। এরমাঝে আরো দুইবার ফোন দিয়ে ফেলেছে মেয়েটি। কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দাড়ালো সে। একদম সিম্পল বাসার ড্রেসে অন্যরকম লাগছে ওকে। অর্ণব দাড়িয়েই থাকলো। রিমির কথায় সম্ভিত ফিরে পেলো সে।
ঃ কি দেখছো হা করে? ভেতরে এসো।
ঃ না, তোমাকে আজ একটু অন্যরকম লাগছে । তাই দেখছিলাম।
বাসা পুরো ফাঁকা। অর্ণবকে গেষ্ট রুমে বসিয়ে রেখে কিচেনে গেলে রিমি। ঠিক ৩ মিনিট পর ফিরে আসলো নাস্তার ট্রলি নিয়ে। চা নাস্তা রেডিই ছিলো গুছিয়ে আনতে যতটুকু সময় লাগলো।
ঃ বাসায় কেউ নেই। আঙ্কেল, আন্টি, তোমার ভাই?
ঃ না, সবাই গিয়েছে ঢাকার বাহিরে একটি অনুষ্ঠানে শুধু আমি ছাড়া। কোচিং থাকায় আমার যাওয়া হয়নি।
ঃ আমাকে তলব করা হলো কেন?
ঃ উপহার ফিরিয়ে দিতে।
ঃ উপহার , কিসের উপহার?
ঃ বছরের প্রথম দিন যে উপহার দিয়েছিলে। ধরা যায় না, ছোয়া যায় না।
নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে রেখে রিমি এসে অর্ণবের গা ঘেসে বসলো। ওর শরীরের স্পর্শে অর্ণবের দেহে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। নাস্তার ফাঁকে কথা হচ্ছিল আর ভালবাসার অতল সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছিল দুজনে।
রিমি তখন অর্ণবের বাহুডোরে। মোমের মতো গলে যাচ্ছিল মেয়েটি। ফ্যানের বাতাসে ওর চুলগুলো এসে ভিন্ন অনুভুতি তৈরী করছিলো। দুটি ঠোঁট স্পর্শ করলো পরস্পরকে। আবিস্কার করলো একই অস্তিত্ব। উভয়েই ভেসে বেড়াচ্ছিল নতুন স্বর্গে । ধীরে ধীরে উভয়েই মেতে উঠলো তরুন তরুনীর আদিম খেলায়। আদিম এ খেলায় দুটি দেহের কুমারত্ব ও কুমারিত্বের বিসর্জন দিলো দুটি দেহ।
আদিম খেলা শেষে দুজনেই ওয়াশরুম থেকে গোসল সেড়ে আসলো। ভেজা চুলে প্রথম দেখা অসাধারণ মেয়েটিকে অনেকদিন পর আবারো ভেজা চুলে দেখে প্রথম দেখার অনুভুতিটাই ফিরে এলো অর্ণবের কাছে।
শেষকথাঃ
এরকমই বাস্তবতা। প্রতিদিন এভাবেই অসংখ্য দেহের কুমারত্ব ও কুমারীত্ব বিসর্জিত হচ্ছে অকাতরে, পারিবারিক উদাসীনতা, সহজলভ্য মিডিয়া প্রভাব আর নৈতিক সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে। আসলে কি তা রোধ করা যাচ্ছে ?????????????
(এক বন্ধুর বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৭