ইদানিং প্রায়ই ঘুমের ঘোরে বাবাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখি।একরাশ কালো মেঘ আমার আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে অনুধাবন করার চেষ্টা করি; বাবা না থাকলে আমার জীবনে কতোটা শূন্যতার সৃষ্টি হবে।বাবা নেই কল্পনা করলেই আমার নিজের অজান্তে চোখের কোনে জল এসে যায় এবং চাপা কান্না শুরু হয়।আমি জানি সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর বাবা হয়তো তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কিন্তু না;বাবার সাথে কথা না বলে কিছুতেই থাকা যায়না, রাত যত গভীর হোক না কেন।অন্ধকার হাতড়ে সেলফোন দিয়ে বাবাকে ফোন করি।ফোন ধরেই বাবা অদ্ভুত রকমের বিচলিত কণ্ঠে জানতে চান''আমার কোনো সমস্যা হয়েছি কিনা''।''আমি ভালো আছি বললেই কেবলমাত্র বাবা শান্ত হন।গভীর রাতে আমার ফোন করার কারন জেনেই হয়তো তিনি বলেন ''তিনি ভালো আছেন।
ছেলেমেয়েদের আদর্শ মানুষ করার জন্যই বাবার যতসব নিরলস চেষ্টা।জীবনের উষালগ্ন থেকেই বাবাকে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়েছে।এ সংগ্রাম হলো নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম।বাবা ছিলেন পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান।তিনি যখন বুঝতে শিখলেন তখন দেখলেন ওনার বাবা(আমার দাদা) শয্যাশায়ী।পরিবারের চরম অভাব অনটনের কারনে তাকে বাল্যকাল থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু একটা করার তাগিদ প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেছিল।ম্যাট্রিক পাশ করার পরপরেই বাবা চাকরি শুরু করেন। তারপর ক্রমান্বয়ে আই এ, অনার্স সম্পন্ন করেন।
বাবা কখনো জীবন যুদ্ধে হারতে শিখেননি বলেই হয়তো জীবন যদ্ধে এখনো টিকে আছেন।জীবনের গোধূলি লগ্নে এসে বাবা কিছুটা ক্লান্ত।তবে এই প্রতিবন্ধকতা,জীবনের চরম অনিশ্চয়তা ও সময়ের দুষ্টচক্রের পরও তিনি সদা হাস্যোজ্জল।
বাবা, মানুষের চোখে তুমি হয়তো খুব সাধারন একজন,বাবা; আমার চোখে তুমি অসাধারন।তোমার্ আদর্শ,সরলতা,ত্যাগ,ধৈর্য্য আমার জীবনে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা।স্নেহ-মায়া মমতায় বাবা তুমি অতুলনীয়।আমার প্রতি তোমার প্রত্যাশার প্রতিফলনস্বরূপ তোমাকে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দিতে পারিনি।মাঝে মাঝে যা দিয়েছি তা প্রত্যাশার তুলনাই খুব নগন্য।
বাবা,তোমার যে আদর্শের কারনে আজ আমি প্রস্ফুটিত,সে আদর্শ প্রত্যাশার পাল্লাকে আরো ভারী করে তুলেছে।চিন্তা করোনা বাবা,আমি প্রত্যাশার চাপে কখনো নুইয়ে পরবোনা বরং কথা দিচ্ছি আমি
তোমার আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবোই এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ আর হিমেল হাওয়ার মাধ্যমে তোমাকে জানান দিতে চাই" তোমাকে ভালবাসি বাবা, অনেক ভালবাসি'' যা কখনো বলা হয়নি।মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে থেকেও মনে হচ্ছে,কত দূরে।বাবা তোমাকে ভীষণ রকম মিস করছি।তোমার মত বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। ভালো থেকো বাবা, অনেক ভালো।