
"দান" শব্দটা বেশ ভীতিকর সবার কাছে এখন। তবে আশ্বস্ত করে বলছি তেমন কিছুই দিতে হবে না "অবলা" কাউকে। তবে একটু সময় নিয়ে পোস্ট-টা পড়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটাতেও অর্থ-ক্ষয়জনিত কোন সম্ভাবনা নেই। আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য আগেভাগে ধন্যবাদ দিয়ে রাখছি! কৃতজ্ঞ থাকছি!
এক-দেড় বছর আগে এক মা-র সাথে দেখা হয়েছিল বইমেলায়। মা'র মেয়েটা অটিষ্টিক। মা'র সেটা নিয়ে কোন অনুযোগ-অভিযোগ দেখলাম না। মেয়েকে নিয়ে বই কিনতে এসেছেন। টিভি সাংবাদিক তাঁকে তাঁর মেয়েকে নিয়ে অনুভুতি ব্যক্ত করতে বললে সে বেশ শক্ত গলায় বলেছিল, "আমার মেয়ে আমার একমাত্র সন্তান। কোন বাচ্চাকে আমার এতোটা সুন্দর, এতোটা পবিত্র লাগে না। আপনারা অটিষ্টিক-প্রতিবন্ধি যে-ই নাম-ই দেন না কেন। আমার বাচ্চা আমার কাছে সুস্থ। সুন্দর।" সাংবাদিক ভ্যবা-চ্যকা খেয়ে বিদায় নিলো। বাচ্চার জন্যে চাকরি-বাকরি ছেড়েছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্য ৩-৪ ঘন্টা ঘুম ছাড়া বাকিটুক বাচ্চাকে দিয়ে দিয়েছেন। বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছেন বিশেষ একটা স্কুলে। যেকোনখানে গেলেই এমন ভিড় হবে। "সুস্থ" বাচ্চার মায়েদের ফিসফিসানিতে থাকেন এই "মা"। তারপর-ও জোড় গলায় বলে ফেলতে পারেন যে তাঁর মেয়ে - "সুস্থ"। একটু পর আশপাশের ভিড় কমলে মেয়ের ঘুম-মুখ কাঁধে সামলে আমাকে বললেন, "মেয়ের বাবার পয়সা-পাতি জমলে যদি পারতাম ওকে বাইরে নিয়ে যেতাম!" শক্ত খোলসের ভেতরটা বেশ অসহায় হয়। সেজন্যেই ওমন খোলস দরকার হয় এঁদের।
আমরা আসলে কিছুতেই তেমন তাড়িত হই না আজকাল যদি না ঝামেলা আমাদের নিজেদের ঘাড়ে এসে পড়ে। গা-শিউরানো খবর পেপারে আসে-যায়। আমাদের একটু শিহরিত লাগে। পরদিন ভুলে যাই। তবে আজব বিষয় হলো, কোন কোন সংস্থা আশির্বাদের মতো আসে আমাদের মাঝে যারা সমস্যা নিয়ে ভাবে। সমাধানের চেষ্টা করে। সমস্যার সামনে ঠুলি চোখে দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে না। আমরা এন.জি.ও.-দের গালি দেই "দালাল" বলে। ভলানটিয়ারদের মুখ বাঁকাই, "দেশসেবায় নেমেছে!" বলে। নিজেরা কিছুই করি না। ফাঁপা মন্তব্য করা ছাড়া।
এবার বেশ আশার বিষয় হলো "বাংলাদেশ নেভি"-র একটা মূখ্য অঙ্গসংস্থা Bangladesh Navy Family Welfare Association (BNFWA) এই বিপন্ন মা আর শিশুদের দিকে তাকিয়ে একটা আক্ষরিক অর্থেই "নন-প্রফিট" "BNS স্কুল এ্যন্ড রিহ্যাবিলিয়েশন সেন্টার" শুরু করে চট্টগ্রাম আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। যাদের উদ্দেশ্য এবং কাজ - "In this rehabilitation center special need children are provided with special education, physical treatment, vocational training for self-establishment and nursing for their well groom up as a normal independent person in the society." তারা সেন্টারটা শুরু করার পর থেকে উদ্দেশ্যের উপর পুরোপুরি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে গেছে। চট্টগ্রামে যাওয়া হয় নি। তবে ঢাকার সেন্টারে গিয়ে মন বদলে গেছে আমার। বাচ্চাগুলো একেবারে উৎফুল্ল হয়ে কাজ করছে। "সুস্থ" বাচ্চারাও এতোটা আনন্দ নিয়ে পড়া-শোনা করে না আজকাল! মা-বাবারাও সাধ্যের মধ্য সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষা দিতে পারছেন। আপনারা ওদের দেখার জন্যে যেতে পারেন স্কুলটায় তাহলে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি নিয়ে ঘরে ফিরবেন। ওখানের বাচ্চার আনন্দিত মা-বাবাই আপনাকে বুঝিয়ে দেবেন যা তারা কতোটা কৃতজ্ঞ!
নানাভাবে ফান্ড রেইজিং হচ্ছে বাচ্চাগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো বা সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্যে। সেসব আয়োজনের একটা আয়োজনে স্পট-লাইট ফেলছি আমি। Bangladesh Navy-র তরুন ভলান্টিয়ারদের দিয়ে গড়া গ্রুপ ফটোস্প্ল্যাশ [www.fotosplash.net] একটা ফটোগ্রাফি Exhibition-এর আয়োজন করছে চট্টগ্রামে। যেটা থেকে ফান্ড রেইজিং হবে।
আমাদের শহরে এখন অনেক ফটোগ্রাফার আছেন। অনেকে বলেন কাক থেকে ফটোগ্রাফার বেশি। আমি তেমন ভাবি না। আমি খুব খুশি যে আমাদের নতুন জেনর এমন ক্রিয়েটিভ একটা অংশে ভীষণভাবে সক্রিয়। আমাদের দেশের অনেক সিনিয়র বা খ্যাতিবান ফটোগ্রাফারকে নিয়ে আমি গর্বিত। আমাদের ফটোগ্রাফাররা তাদের খ্যাতি-অর্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের ছবি International Exhibition-এ বিক্রি করে সে অর্থ বৃদ্ধাশ্রমে দেন, ক্যান্সার পেশেন্টদের চিকিৎসায় দেন। সে অর্থে পতিতালয়ে HIV প্রতিরোধে ব্যয় হয়। নাম বলছি না। কারন আপনারা খুঁজে নেবেন। সবাই ফটোগ্রাফারদের গালি দেন লেন্স-গিয়ার নিয়ে লাফানোর জন্যে। সংখ্যালঘিষ্ট সেসব ফটোগ্রাফার ছাড়াও যারা বিশাল কাজগুলো করেন তাদের কথা ছড়ায় না। এবার মহান-ফটোগ্রাফারদের নিয়ে খোঁজ করুন।
এবার প্রসঙ্গে ফিরছি। ফটোগ্রাফার ভাইয়ারা/আপুরা, আপনাদের তোলা ছবি Exhibition-এ দিন। জীবনে তোলা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছবিটা ডোনেট বা "দান" করুন এই Exhibition-এ। ছবিটা যেই মূল্যে বিক্রি হবে সেটা দিয়ে এই বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যতে আরো উন্নতি সাধন হবে। একটা বাচ্চাকে নতুন-নতুন নামে-ভাগে ভাগ না করে সবাই মিলে চলুন ওদের "সুস্থ" করে তুলি! আমরা পারবো। আমরা যেই ডেডিকেশন নিয়ে ভোট সংগ্রহ করি সেটা একটাবার এই Exhibition-এ দেই। পরদিন পেপারে বা টিভিতে বা একজন বিপন্ন মা বা বাবার কাছে নিজেদের এই কনট্রিবিউশনের কথা একবার শুনলে তার চেয়ে বড় এ্যওয়ার্ড আর কিছু হবে না! বরং নিজের উপর নিজের গর্ব বেড়ে যাবে শতশতগুণ!
সবার কাছে অনুরোধ থাকবে খবরটা নিজেদের সার্কেলে শেয়ার করার আর Exhibition-এর জন্যে ভাল গুণসম্পন্ন ছবি যোগাড় করতে সাহায্য করার! আন্তরিক ধন্যবাদ!
ফটোগ্রাফ কনট্রিবিউট করতে নিচের লিংকে যান:
http://www.fotosplash.net
"আশার আলো" (চট্টগ্রাম শাখার কিছু বাচ্চার ছবি দেখুন স্কুলটায়)
ফেইসবুক নোট লিংক:
Click This Link