হনহন-রিক্সাটার ফাঁপা পেটে সেঁধিয়ে যেতে আমার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো মাত্র। রাস্তায় জটলা জটলা কুয়াশার সাথে নানান মোবাইল ক্লাশচার।
একদিকে এক ভিনগ্রহের প্রাণী - তার দিকে তাকিয়ে একটু দূরের হাত-আঁকড়ে-ধরা বয়সের ছেলেটা অস্ফুট বলে উঠলো, "বাবা! দ্যাখো দ্যাখো পাগল!" বাবা সতর্ক চোখে "তাঁকে" আড় দেখে ছেলেকে "ওভাবে বলতে হয় না!" - ধম্কে একদল মানুষের ভিড়ে ঢুকে যান। যাকে বলা হয়েছিল তার চামড়া-কোঁচকানো গাঢ় বাদামি কোমরে তেকোনা ধূলা রঙের রুমালটা শীতে কুঁকড়ে আছে। কিন্তু তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। সে নিজমনে একটা সুতোর মাথায় একটা ইট-টুকরো বেঁধে একটু পর পর "কই যাবি যাঃ!" বলে বিকট চিৎকারের পর ওটাকে আকাশে ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমি ওটার গন্তব্য নিয়ে ভাবতে না ভাবতেই পাশ কেটে "বন্ধু তুমি কই কইরে" বাতাস বইয়ে চটা জিনস সাইকেল-ঝড় তোলে - যেন লাল-ক্ষেপা ষাঁড়ের শিং থেকে বাঁচতে হবে ওকে! ওর দুদ্দাড় হলকায় আইল্যান্ডে বসা একদল বিরক্ত কাক ডানা ঝাপটে পতপত গাছে গাছে ছড়িয়ে যায়।
চার-পাঁচজন সবুজ মেয়ে বেণী দুলিয়ে রাজ্যের গল্প জুড়েছে পায়রা-খোপ ভ্যানটায়। তাদের চোখের তারা সেই খোপ-রাজ্যের আকাশে ঝকমক করে জ্বলছে আর নিভছে। একজন বেশ জিরজিরে বুড়ো ভিখিরী ভ্যানে হেলান দিয়ে মনোযোগ দিয়ে ওদের শুনছে - যেন সবুজ থেকে খানিকটা জীবন নেবার চিন্তায় মশগুল তিনি! হঠাৎ আমার রিক্সা ফুঁসে এগোয় দু'কদম। জট কষে বসেছে মোড়টায়। অশ্রাব্য খিস্তি-খেঁউড়ের রিয়েলিটি শো শুরু হয়েছে বলে ভ্রম হয়। মিছিলের মতো লোহা-যানগুলো গুঞ্জন তুলতে শুরু করেছে - সবুজ বাতি জ্বললো বলে! এবারে মিছিল নড়ে ভাগ ভাগ হয়ে ডানে-বায়ে-সামনে-মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। মোড়ের ঐ ফোয়ারা-ছোটা জলের মতো জীবন ছড়ায় দশদিকে। আমি ধুকপুকে জীবন আগলে থুপথাপ এগোই চটচটে জীবিকার খোঁজে। এক দৃশ্য কেটে আরেক দৃশ্যে।
সন্ধ্যায় এই দিনটার শেষকৃত্যের পর দু'হাতে সারাদিনের দৃশ্যগুলো কুঁচি-কুঁচি জমাই। আর তারপর হালকা কালিগোলা আকাশে এলোমেলো উড়িয়ে দেই। দ্যাখো তো! জীবনের কী যাচ্ছেতাই অপচয়!
***********************************************************************************************
ডিসেম্বর ১৩, ২০১০
_______________________________________________________________
ছবিসূত্র : ফয়সাল মাসুম ভাই
_______________________________________________________________
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১:২৫