সমস্যা ও সমাধান
ড. মতিউর রহমান
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি ওয়াকিবহাল। আমাদের দেশে এমনও বহু মানুষ আছে যারা রাজনীতি থেকে দূরে সহজ-সরল সাধারন জীবনযাপন করছে। কিন্তু গত একটি মাস তাদের সহজসরল জীবন ব্যাহত করছে সর্বনাসা রাজনীতি। একদল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া, আরেকদল যেকোন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। মাঝখানে পুড়ে মরছে সেইসব সহজ-সরল মানুষ যারা কোনভাবেই রাজনৈতিক সুবিধাভুগী নয়, কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার। প্রতি পাঁচ বছর পর পরই এমন একটি সময় আসে যখন আমাদের মতো সাধারন মানুষরা কারো না কারো ক্ষমতা আরোহনের সিঁড়ি হিসেবে জীবন দিতে হয়।
আমরা ৯০ এর গনআন্দোলনে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার পেয়েছি। নিরংকুশ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিল রাস্ট্রপতির আজ্ঞাবহ আর এখন রাস্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ। সময়ের পরিক্রমায় প্রধানমন্ত্রীই যে নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে যাবে, তা কেউ বুঝতে পারেনি তখন। যখন বোঝা গেল, তখন সবকিছু শেষ। কে সংসদে এমন বিল আনবে যেন রাস্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-বিরোধিদল-সংসদের ক্ষমতায় ভারসাম্য থাকে ? সবাই দলীয় আনুগত্যের কাছে বন্দী।
প্রবাসী-লেখক মতিউর রহমান দেশের এই সর্বনাসা রাজনীতির কিছু মৌলিক সমস্যা ও তার সমাধান একজন সহজসরল সাধারন মানুষের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। বইটি ছয় অধ্যায়ে বিবক্ত। প্রথম চার অধ্যায় সমস্যা, পঞ্চম অধ্যায়ে সমাধান, ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে এখন করনীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন।
রসায়নে যেমন আদর্শ গ্যাস বাস্তবে পাওয়া যায় না, তেমনি এই আদর্শ সমাধান বাস্তবে এই দেশে সম্ভব নয়। লেখক নিজেই এই পরিবর্তনের জন্য আইন প্রনয়নের কথা বলেছেন। এখন প্রশ্ন হল, এই আইন প্রনয়নের জন্য সংসদে বিল আনবে কে? আনলেও কি পাশ হবে? কন্ঠভোটেই তো নাকচ হয়ে যাবে। আমাদের সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ কতজন? কেউ কি দলীয় সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে পারবে? আমাদের জনগন ভোট দিয়ে সেইরকম যোগ্যতাসম্পন্ন সাংসদ কি নির্বাচিত করছে? আমাদের নেতারা যোগ্যতাসম্পন্ন হলে তার টাকা থাকে না, টাকা থাকলে আবার যোগ্যতা নেই।
আমাদের সাংসদদের বেশিরভাগই টাকাওয়ালা অযোগ্য। এর কারন একজন শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটের একভোট, আবার আশিক্ষিত যিনি ৫০০ টাকা নিয়ে ভোট দিবেন তারও একভোট। শিক্ষিত ব্যক্তির বহু চিন্তাভাবনা করে দেয়া ভোটটার আদৌ কি কোন মুল্য থাকে? যে কারনে আমরা দেখি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যতোই ওয়াজ নসিহত করুক না কেন, ভোটে দাড়াতে সংবিধান রচয়িতা ড কামাল হোসেনও ভয় পান। আর সাহস করে দাড়িয়ে গেলেও জামানত থাকে না, যা আমরা ’৯৬ সালের নির্বাচনে দেখেছি।
তাই আপাততঃ আসমান থেকে কেউ একজন আমাদের এই সমস্যা গুলোর সমাধান করে না দেয়া পর্যন্ত এই চক্র থেকে আমাদের বেরোনোর উপায় নেই।
রাজনীতি সচেতন সাধারন মানুষ হিসেবে বইয়ে প্রদত্ত সমস্যা সমাধানগুলো পড়ে দেখতে পারেন। ভবিষ্যতে কোনএকদিন, কেউএকজন আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে এগিয়ে আসবে আপাতত সেই আশা করা ছাড়া কিছু করার নেই।
লেখক আদর্শ আইন, আদর্শ আইনপ্রনেতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।দেশে আদর্শ আইন থাকলেও আদর্শ আইন প্রনেতা নেই, কারন দেশের মানুষই আদর্শ নয়।তবে বইয়ে বর্নিত আদর্শ সমাজ ও রাস্ট্র ভবিষ্যতে আমরা আশা করতেই পারি। না হলে প্রতি পাঁচ বছর পর পর এমই পরিনতির জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ মতিউর রহমানের জম্ম সিলেটের বিয়ানীবাজারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স-মাস্টার্স শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন ।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও গনতন্ত্র
সমস্যা ও সমাধান
ড মতিউর রহমান
প্রকাশক ঃ বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড
মুল্যঃ ১৫০ টাকা
প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২