আগের পর্বঃ মাউন্টেনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট এবং অন্যান্য (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৯)
আগের দিন সারাদিন সাইটসিয়িং করে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথে ঘুমে তলিয়ে গিয়ে আরামে ভালমত একটা ঘুম দিয়ে সকাল সাতটার আগে আগে সবাই চাঙ্গা হয়ে ঘুম থেকে উঠে তৈরী হয়ে গেলাম। যদিও আটটার পর সকালের নাস্তা করে দার্জিলিং এর হোটেল হতে আমরা চেক আউট করে বের হয়ে যাবো সিকিম বর্ডার গেট এলাকা, নাম রাংগপো, সেটার উদ্দেশ্যে। আজকের প্ল্যান সেখান হতে “লাভা” ঘুরে “লোলেগাঁও” গিয়ে রাত্রিযাপন। সেবারের এই “মুনসুন এট দার্জিলিং এন্ড সারাউন্ডিংস” এর প্ল্যান ছিল মিক্সড ডেস্টিনেশন এর একটা কম্বিনেশন। মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং এর মত বহুল জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন এর সাথে কিছু অফবিট ডেস্টিনেশনঃ রাংগপো, লাভা, লোলেগাঁও। সময় স্বল্পতার কারণে ছেটে ফেলতে হয়েছিলো রিশপ আর কুর্সেক। তো যাত্রা শুরু করেছিলাম ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে মিরিক ঘুরে দার্জিলিং এ দু’রাত কাটিয়ে এবার যাত্রা লোলেগাঁও।
বেলা সাড়ে আটটার কিছুটা পরে আমরা রওনা হয়ে গেলাম রাংগপো এর উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে আমাদের আজকের প্রথম গন্তব্য “লাভার’স মিট পয়েন্ট” নামক একটা স্পট, যেখান থেকে তিস্তা এবং রঙ্গীত নদীর সংযোগ হয়ে তিস্তা নামে নীচের দিকে প্রবাহ শুরু হয়েছে। এই জায়গাটার নাম “লামাহাট্টা”, দার্জিলিং মল এলাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া কালো পিচঢালা পথের দুই পাশের সারি সারি ঝাউবন এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে একসময় পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫,৭০০ ফুট উচ্চতার এই এলাকাটির একপাশে দার্জিলিং আর অন্যপাশে কালিম্পং, বলা যায় এই দুই অঞ্চলের সংযোগ ঘটিয়েছে এই লামাহাট্টা। লামাহাট্টা থেকে লাভারস মিট ভিউ পয়েন্ট এর দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার, এটি মূলত কালিম্পং এর সীমানায় পড়েছে।
চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা সবুজে চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছিলো। বর্ষায় পাহাড়ের যে সবুজ রূপ তার কোন তুলনা হয় না। আর আকাশ ছিলো মেঘলা, চারিদিকে মেঘ-কুয়াশার দলের ছুটাছুটি, তার মাঝ দিয়ে অনেক নীচে পলি বয়ে নিয়ে আসা ঘোলা জলের দুই নদীর সঙ্গমস্থল, আমাদের দল ছাড়া কোন টুরিস্ট ছিলো না সেখানে। আমরা সেখানে বেশ খানিকটা সময় কাটালাম, নিজেদের মত করে ঘুরে দেখলাম, আমাদের বছর পঞ্চাশোর্ধ গোর্খা ড্রাইভার ভদ্রলোক ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক এবং মিশুক মানুষ। তার সাথেও গ্রুপ ছবি তোলা হল। এরপর সেখান থেকে রওনা দিলাম আমাদের আজকের মূল গন্তব্য রাংগপো’র উদ্দেশ্যে।
লামাহাট্টা হতে আলোচিত NH10 হাইওয়ে ধরে উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূর রাংগপোর অবস্থান। আমাদের ভ্রমণটি ছিলো ২০১৬ সালে, তখনও বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য সিকিমের দুয়ার খুলে নাই, তাই আমরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পৌঁছে গিয়েছিলাম “গেট অফ সিকিম” খ্যাত রাংগপো’তে। ২০১৮ এর শেষের দিকে সিকিম বাংলাদেশীদের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে এই রাংগপো থেকেই সিকিম ভ্রমণের পারমিট নিতে হয়, অবশ্য শিলিগুড়ি থেকেও পারমিট নেয়া যায়। যাই হোক, আমরা অভাগা, অসময়ে গেলাম সিকিমের একেবারে সদর দরজা পর্যন্ত। পাথুরে “রাংগপু চু” নদীর উপর রাংগপো ব্রীজ সংযুক্ত করেছে সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গকে।
এখানে ব্রিজের উপরে কিছু ছবি তুলে ব্রিজের ডান পাশ দিয়ে একটা সরু পথ নীচে নদীর দিকে নেমে গেছে, সেই পথ দিয়ে আমরা একে একে সবাই নেমে এলাম পাথুরে নদীতে। বড় বড় পাথরের উপর বসে থাকতে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিলো। বেশ অনেকটা সময় আমরা এখানে কাটিয়ে রওনা দিলাম “লাভা”র উদ্দেশ্যে, আর তখনই সম্মুখীন হলাম ল্যান্ডস্লাইডের ঝামেলায়। সেই গল্প আগামী পর্বে হবে না হয়…
ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬
এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)
কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)
ঘুম মনেস্ট্রি হয়ে রক গার্ডেন (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৬)
দার্জিলিং পিস প্যাগোডা ভ্রমণ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৭)
দার্জিলিং জু (পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক) ভ্রমণ - (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৮)
মাউন্টেনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট এবং অন্যান্য (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৯)
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৩৩