কয়েকদিন আগেই পত্রিকায় পড়লাম এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ যে ফুটবলে খেলা হবে তাতে সংযুক্ত থাকবে ক্যামেরা। আর এই খবর পড়ে হঠাৎ আগ্রহ জাগলো বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ব্যাবহার করা বলগুলো সম্পর্কে জানার। আর সেই আগ্রহ থেকে আজকের এই লেখা। আদিতে ফুটবল তৈরি হতো প্রাণীর ব্লাডার এবং পাকস্থলী দিয়ে। পরবর্তীতে রাবার টিউব আবিস্কার হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে ফুটবলের তৈরি প্রক্রিয়াও। বর্তমানের বলগুলো ১২ থেকে ৩০টি পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির চামড়া খণ্ডাংশ যোগ করে তৈরি করা হয়। ফুটবলের এই প্রসঙ্গ এখন থাক, আমরা আসি বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্যাবহার হওয়া বলসমূহের দিকে।
উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৯৩০ এর বিশ্বকাপের বল নিয়ে বলার মত যা আছে তা হল এই বিশ্বকাপে দুই দল তাদের নিজেদের বল নিয়ে আসতো এবং দুই অর্ধে দুই দলের বল দিয়ে খেলা হত। ফাইনালে প্রথমে আর্জেন্টিনা তাদের বল দিয়ে খেলে এক গোলে এগিয়ে যায় এবং দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ে তাদের বল দিয়ে খেলে দুই গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে নেয়। ছবিতে দেখে নেন বল দুইটি।
প্রথমটি্ আর্জেন্টিনা'র দ্বিতীয়টি উরুগুয়ের
১৯৩৪ বিশ্বকাপ যে বল দিয়ে খেলা হয় তার নাম ছিল “Federale 102”। নির্মাতা কোম্পানি ছিল ইতালিয়ান প্রস্তুতকারক “ECAS (Ente Centrale Approvvigionamento Sportivi), Rome”। ছবিতে দেখুন সেই বলটি।
১৯৩৮ এর বিশ্বকাপে ব্যাবহার করা হয় ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “Allen, Paris” এর বল ‘Allen Officiel’। দেখুন ছবিতে
১৯৫০ এর বিশ্বকাপে ব্যাবহার করা হয়েছিল ব্রাজিলিয়ান কোম্পানি “DUPLO T” প্রস্তুতকৃত বল “Superball”। সাদার উপর ডিজাইন করা এই বল ছিল আগের বিশ্বকাপগুলোতে ব্যাবহার করা ফুটবলগুলো থেকে কিছুটা ভিন্ন। দেখুন ছবিতে
সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৫৪ এর বিশ্বকাপে ব্যাবহার করা হয় “Kost Sport, Basel” প্রস্তুতকৃত বল যার নাম ছিল “Swiss World Champion”। এই ফুটবলটি ছিল প্রথম ১৮ প্যানেল জোড়া দিয়ে তৈরি করা প্রথম বল। দেখুন ছবিতে
১৯৫৮ তে আসলো “Top Star”। Sydsvenska Läder och Remfabriken, Ängelholm প্রস্তুতকৃত এই বল দিয়েই খেলা হয় সুইডেনে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ। এই বলটি মোট ১০২টি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চার সদস্যের জুরিবোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত হয়। নীচের ছবিতে সেই বলটি
১৯৬২তে বল নিয়ে ঝামেলা বাঁধে। উদ্বোধনি ম্যাচেই রেফারী Ken Aston চিলি কর্তৃক সরবরাহকৃত বল নিয়ে অসন্তুষ্ট হন যেটা ছিল সেই “Top Star”। তিনি নতুন একটা ইউরোপিয়ান বল চেয়ে পাঠান যা দ্বিতীয়ার্ধে এসে পৌঁছে। এই বিশ্বকাপে ম্যাচগুলো বিভিন্ন বল দিয়ে খেলা হয়। কারণ স্থানীয় নির্মাণকারীদের বলের উপর দলগুলো আস্থা রাখতে পারছিল না। তবে অফিসিয়ালি এই বিশ্বকাপের বলের নাম ছিল “Crack Top Star” যার নির্মাতা ছিল চিলিয়ান কোম্পানি Senor Custodio Zamora H., San Miguel, Chile। ছবিতে সেই বলটি
১৯৬৬ সালে ফুটবল নিয়ন্ত্রা সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত যে বল দিয়ে খেলা হয় তার নাম ছিল “Challenge 4-star”। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “Slazenger”। কমলা রঙের এই বলটি কিন্তু দারুন জনপ্রিয় হয়েছিল। নীচে বলটির ছবি
১৯৭০ থেকে ফুটবল বিশ্বকাপের বল নির্মাণের দায়িত্ব নেয় এডিডাস। “Telstar” নামক বল দিয়ে খেলা হয় এই বিশ্বকাপ। পঞ্চভুজ আকৃতির ৩২টি প্যানেল দিয়ে তৈরি মাত্র ২০টি বল সরবরাহ করে তারা এই বিশ্বকাপে। তাই বেশ কয়েকটি ম্যাচ অন্য বল দিয়েও খেলা হয় সেবার। সেই বিখ্যাত বলটির ছবি দেখুন
১৯৭৪ সালে এডিডাস প্রায় আগেরবারের মত ডিজাইনেরই বল সরবরাহ করে যার নাম ছিল “Telstar Durlast”। পরপর দুই বিশ্বকাপে পঞ্চভুজ আকৃতির বল ব্যাবহার করায় সারা বিশ্বব্যাপী এই ডিজাইনই হয়ে দাঁড়ায় ফুটবলের স্বীকৃত ডিজাইন।
১৯৭৮ এবং ১৯৮২ বিশ্বকাপে এডিডাস নিয়ে এলো নতুন ডিজাইনের নতুন বল যথাক্রমে “Tango” এবং “Tango España”
১৯৮৬ তে এল প্রথম হাতে সেলাই করা বল নিয়ে এডিডাস। বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই বলের নাম ছিল “Azteca”
১৯৯০ আর ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের বল দুটি ছিল যথাক্রমে “Etrusco Unico” এবং “Questra”
১৯৯৮ সালের বর্ণিল ফ্রান্স বিশ্বকাপে এডিডাস নিয়ে এল মাল্টি কালার ফুটবল “Tricolore”। তেরঙ্গা পতাকার মত চিহ্ন যা ফ্রান্সে খুব জনপ্রিয় তাকে মাথায় রেখেই এই ডিজাইনটি করা হয়।
২০০২ সালের বল ছিল “Fevernova”। ত্রিভুজাকৃতির এই বল নিয়ে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। এশিয়ার সংস্কৃতি মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয় বলটি। কিন্তু বলটি যেমন আশা করা হয়েছিল তেমন হয় নাই। খুব হালকা বলে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই ত্রুটি নক আউট পর্বের কয়েকটি ম্যাচের রেজাল্ট পর্যন্ত গড়ে দিয়েছিল।
২০০৬ সালে “Fevernova” নামক ১৪ প্যানেলের বল দিয়ে খেলা হয়। ফাইনাল ম্যাচ হয় গোল্ডেন কালারযুক্ত অন্য আরকেটি বল দিয়ে যার নাম ছিল “Teamgeist Berlin”। আগের প্রতিটি বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল হত যে বলে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নাম, স্টেডিয়ামের নাম এবং তারিখ মুদ্রিত থাকতো। এইবার প্রথম একটি পৃথক ডিজাইনের বলই তৈরি করা হয় ফাইনাল খেলার জন্য।
২০১০ সালের সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপের বলের নামটি নেয়া হয় জোহানেসবার্গ থেকে, নাম ছিল “Jo'bulani”। এই বলটি ছিল ৮ প্যানেলের।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফুটবল হল প্রথম বল যার নামটি বেঁছে নেয়া হয়েছে সমর্থকদের কাছ থেকে এবং তা ভোটের মাধ্যমে। এই বলে থাকছে ক্যামেরা! মাল্টি কালারের বলটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। দেখা যাক পারফরমেন্স কেমন হয়। হ্যাঁ এবারো কিন্তু ফাইনালে বিশেষ বল থাকছে; তবে তার নাম বা দেখতে কেমন তা জানা যায়নি।
উফ... এতো ফুটবলের কথা বলে এখনতো ফুটবল খেলতে মন চাচ্ছে!