গত তেত্রিশ আলোকবর্ষ ধরে
আমি ছুটে চলেছি এই অনন্ত নক্ষত্রবীথি’র
পথ থেকে পথে, খুঁজে ফিরছি আমার আপন আঙিনা
আমার ভালোবাসার সেই ছোট্ট ঘর।
মনে পড়ে সেই দিনখানি
যেদিন সকালে আকাশের তৃতীয় চাঁদখানি
তার গোলাপি আভায় রাঙ্গিয়ে দিয়েছিল আমাদের কলোনির
ধাতব সব দেয়ালগুলো,
যে আভায় দিশেহারা হয়ে এলোমেলো পা ফেলছিল
অষ্টম প্রজন্মের সব রবোমানবগুলো।
সেই মাহেন্দ্রক্ষণে তুমি আমি স্বপ্নে ছিলাম বিভোর
কেননা আর মাত্র কয়েক প্রহর পরেই
আমরা জড়াতাম চির বাঁধনে,
সেই সুখে গুণ গুণ করে লাইকা গ্রহের প্রেমময় গান
কণ্ঠে তুলে, চেয়ে ছিলাম দুজনে দুজনার পানে।
এইমাত্র একটি কৃষ্ণগহবর পার হল আমার এই মহাকাশযান
যেথা করে আমি ছুটে চলেছি গত তেত্রিশ আলোকবর্ষ
শুধু তোমায় দেখবো বলে, তোমার কোলে রেখে মাথা
শুনবো লাইকা গ্রহের প্রেমময় গান সব
শুধু এই আশায় রয়েছি বেঁচে
চলেছি ছুটে তেত্রিশ আলোকবর্ষ ধরে।
মনে কি পড়ে তোমার সেদিনের সেই সন্ধ্যা
যখন আমার ভার্চুয়াল ডিসপ্লে মডিউলে,
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান সংস্থার প্রধানের ছবি ভেসে উঠলো,
তখনো আমরা মগ্ন ছিলাম গানের মায়াবী স্বপ্নলোকে
তুমি প্রথম টের পেলে।
আমি অবাক দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে গেলাম, তারপর.... ... ..
তারপর আমার চিরতরে অনন্ত নক্ষত্রবীথির পানে যাত্রা,
আর তোমার প্রতীক্ষায় তেত্রিশটি আলোকবর্ষ কাটিয়ে দেয়া।
আমি জানিনা আমার এই অনন্ত যাত্রা শেষে
তোমায় পাবো কিনা নীড়ে ফিরে,
জানিনা কেমন আছো তুমি? কি রূপে
দেখবো তোমায় আমার আপনভুবনে ফিরে।
চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে মহাকাশযানের
অবজারভেশন মনিটরে চেয়ে থেকে থেকে,
কেননা সেই নিকষ কালো আঁধারের বুক ভেদ করে
আমি যে প্রতিক্ষণে ফিরে যাই তোমার কাছে
আমার আপন আঁধারে।
আরতো বেশী নয় বাকি এই প্রতীক্ষার
আর মাত্র আলোকবর্ষখানিক পরেইতো সেই মাহেন্দ্রক্ষন,
আমার এই অনন্ত যাত্রার শেষ হাইপারড্রাইভটি দেয়ার
সাথে সাথে আমি ফিরে পাব আমার সেই পুরানো অঙ্গন।
এই যাত্রাপথের প্রতিটি ছায়াপথের প্রতিটি নক্ষত্র সাক্ষী
আমি তাদের বলেছি তোমার প্রতীক্ষার কথা,
ছড়িয়ে বেরিয়েছি এই মহাকাশে তেত্রিশ আলোকবর্ষ ধরে
আমাদের ভালোবাসার গোপন ব্যাথা।
তুমি জেগে থেকো আমার পথ চেয়ে
আমি আসবো ফিরে তোমার দরজায়
ভালোবাসার কড়া নেড়ে,
আমার শেষ হাইপারড্রাইভটির পথ ধরে।
[তেত্রিশ আলোকবর্ষ পর পৃথিবীর পানে
ফিরে এসে আমি কাউকে পাইনি, একটি ধ্বংসস্তূপ ছাড়া।
আমি আজও ঘুরে ফিরি মহাকাশের বিশাল কোল জুড়ে,
শুধু একটি আশায় তোমাকে দেখবো বলে, তোমাকে পাবো বলে।]