আগের পর্বঃ Click This Link
ডিসেম্বর মাসটা হচ্ছে বাইরে পড়তে আসা গ্র্যাড স্টুডেন্টদের জন্য খুব আনন্দের একটা মাস।এই সময় প্রায় এক মাস ভার্সিটি বন্ধ থাকে, ক্রিস্টমাস উপলক্ষে প্রফরা সব ছুটিতে চলে যায়। কোন অ্যাসাইনমেন্ট নেই, কোন প্রোজেক্ট নেই, প্রফ এর সাথে কোন মিটিং নেই, কোন রিসার্চ এর চাপ নেই।এই সময়টা হচ্ছে নীড়ে ফেরার সময়।এই জন্য প্রায় সবাই দেশে যাওয়ার জন্য এই সময়টাকেই বেছে নেয়। সামারেও ৩-৪ মাস বন্ধ থাকে, কিন্তু সেসময় প্রায় সব প্রফ্ররাই চায় তার স্টুডেন্টরা রিসার্চ করুক। অনেকে আবার ইন্টার্ন করে। অনেকে আবার সামারের দেশের গরমের সময়ের কথা চিন্তা করে যায় না।
কিন্তু সবাই দেশে গিয়ে আরও বেশি করে আমাকে দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। সবার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে, ছবিতে, কমেন্টে যখন দেশকে দেখি, আমার তখন আরও বেশি করে দেশীয় হতে ইচ্ছা করে। আরও বেশি করে ইচ্ছা করে ধানমন্ডি কিংবা টিএসসি কিংবা পলাশীর মোড়ে 'তোমার' সাথে দাঁড়িয়ে চা খেতে। রবীন্দ্র সরোবরে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে বসে বাদাম কিংবা চটপটি খেতে কিংবা উদ্দেশ্যহীনভাবে বসুন্ধরা সিটিতে ঘুরাঘুরি করতে। খুব ইচ্ছা করে দুটো কোন কিংবা চকবার নিয়ে বাসায় ফেরার সময় দরজায় দাঁড়ানো তোমার হাস্যজ্জল মুখটা দেখতে।
ছুটির দিনগুলা আমাদের প্রায়সময়ই কাটত ঘুরাঘুরি করে। দুপুরের খাবারের পর বাসায় বসে থাকতে আমার খুব বিরক্ত লাগত। নতুন প্রেমিক প্রেমিকাদের মত বাইরে ঘুরেফিরে বেড়াতেই ভাল লাগত বেশি। সারাদিন বাসায় গল্প করার পরও আমাদের গল্প শেষ হয় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যান, টিএসসি,মধুর ক্যান্টিন কিংবা ক্যাফেটরিয়ায় মুখোমুখি বসে কিছুক্ষণ গল্প না করলে কেমন যেন অস্থির লাগত।
দেশে গিয়ে অনেকেই দেখি এইবার কক্স বাজার গেছে। তাদের ছবি দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। শেষবার যখন কক্স বাজার গেলাম কি অদ্ভুত আনন্দেই না কেটেছিল কয়টা দিন। সন্ধ্যার পর একসাথে সাগরের পারে খোলা আকাশের নিচে বসে সাগরের গর্জন শুনতে কি অদ্ভুতই না লাগে। সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক ঠিক আগে আগে সাগর পারে হাত ধরে হাটাহাটি করতে করতে মনে হয় আমরা বোধহয় পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে স্বর্গের কাছাকাছি কোন জায়গায় চলে এসেছি। এর চেয়ে সুন্দর কিছু কি আর আছে কোথাও? আবার কবে যাওয়া হবে সেখানে? সমুদ্র তো এখানেও আছে, কিন্তু কেন জানি এখানকার কিছুই তেমন ভাল লাগে না আমার। দেশের সব কিছুতেই মনে হয় আমার কিছুটা অধিকার আছে, মনে হয় সব কিছুই কিছুটা হলেও আমার জন্য তৈরী করা হয়েছে, সব কিছুকেই খুব বেশি করে আমার মনে হয়। কিন্তু এখানকার কিছুই তো আমার জন্য না, কোন কিছুকেই আমার আপন মনে হয় না।
একটা একটা করে দিন যায় আর আমি ভাবি দেশে ফেরার আরও কিছুটা কাছে চলে এসেছি আমি। মাঝে মাঝে খুব হতাশ হয়ে যাই, মাঝে মাঝে সময়গুলোকে খুব লম্বা মনে হয়, মনে হয় এটা আমার জীবন না, আমি বোধ হয় অন্য কারও জীবন কাটাচ্ছি।কিন্তু আমি জানি সময় আসবে, আবার আমি ফিরে যাব 'আমার' জীবনে। জীবনের এত কিছু মিস করে এইভাবে পড়ে থাকার কোন মানে হয় না।