somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক: কারণ অনুসন্ধান

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে প্রায়ই গণধোলাইয়ের ঘটনা শোনা যেত। ইদানিং রাজনৈতিক অস্থিরতার বদৌলতে মিডিয়াতে এই শব্দের প্রচলন কিছুটা কমতির দিকে। যদিও 'গণধোলাই' শব্দটির রাজনৈতিক ব্যবহার বেশ বেড়েছে। যেমন; হরতালকারীদের কেউ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভাড়াটে পান্ডার আক্রমণের শিকার হলে, দলকানা কিছু গণমাধ্যম নিউজ করছে, "গণধোলাইয়ের শিকার হরতাল সমর্থক"।
সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রপন্থীদের হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ব্যাপকতা চোখে পড়ছে। সাংবাদিকরা সন্ত্রাসী হামরার শিকার হয়, এতদিন এই ব্যাপারটি কমন ছিল। এখন এর সাথে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের উপর রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর আক্রমণের প্রবণতা বাড়তির দিকে। এজন্য আমরা আক্রমণকারীদের সমালোচনা করে মুখে ফেনা তুলতে পারি, তাদের উপর পাল্টা আক্রমণের হুমকি দিতে পারি ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু করতে পারি।
বিজ্ঞানের cause-effect বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সূত্র অনুসারে প্রতিটি ঘটনার পিছনে আরো কিছু ঘটনা কাজ করে। তার অর্থ দাঁড়ায়, পিছনের ঘটনাকে যদি আমরা ঠেকাতে পারি তাহলে effect বা প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয় না। সিরিয়াল কিলার এরশাদ সিকদার, রসু খাঁদের দেখে আমরা ঘৃণায় নাক শিটকাই, রাস্তাঘাটের পতিতাদের দেখে তাদের আমরা অচ্ছুত জ্ঞান করি, মাদকাসক্তদের আমরা কুলাঙ্গার গালি দেই, শিবির-হিজবুত তাহরীরদের আমরা জঙ্গি উপাধিতে ভূষিত করি। কিন্তু একটিবারের জন্যও আমরা ভাবি না, কেন এরা বিপথগামী হলো? এর পিছনে আমি, আমরা তথা আমাদের সমাজব্যবস্থা কি মোটেই দায়ী নয়? সমাজের সমস্ত বিপথগামীদের কেস স্টাডি করলে আমরা দেখতে পাব, এদের অধিকাংশ যে ধরণের পরিবেশ পেয়েছে, সেখান থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সময় হলে লেখা দুটো পড়ে দেখবেন, একজন সিরিয়াল কিলারের শৈশবকোথায় আমার দায়মুক্তি? । কি চমৎকার আমাদের আচরণ! যেই সমাজ তার কতিপয় সদস্যকে জীবনের মৌলিক অধিকার দিতে অহর্নিশ ব্যর্থ হয়, বিপথগামিতার পথে ঠেলে দেয়, সেই আবার তাদেরকে ধরে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর পাঁয়তারা করে!
আমাদের গণমাধ্যমকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এজন্য হামলাকারীদের প্রতি ঘৃণা বা নিন্দা জানানো অবশ্যই কর্তব্যভুক্ত। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? একটি কারণ, সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করছে, সত্যকে উন্মোচিত করছে। আর তাই কর্তব্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। পাশাপাশি আরেকটি কারণের দিকে আমাদের খুব বেশি নজর নেই। মনে রাখা প্রয়োজন, এক হাতে তালি বাজে না। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে পরিবেশিত অধিকাংশ নিউজ দেখলে মনে হয়, তারা সাংবাদিকতার নৈতিক জায়গার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকা objectivity বা বস্তুনিষ্ঠতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোমড় বেঁধে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে এবং বিপক্ষকে নির্মূল করার ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছে। অথচ মিডিয়ার কার্যক্রম দেখভালের জন্য নেই কোন কার্যকর মনিটরিং সেল বা মিডিয়াওয়াচ। আইনের অকার্যকারিতা ও এর প্রতি গণমানুষের অনাস্থার কারণে যেমন মানুষ 'গণধোলাই' এর আশ্রয় নেয়, তেমনি মিডিয়ার যথেচ্ছ আচরণের তদ্রুপ প্রতিদান অদূর ভবিষ্যতে মিডিয়াকর্মীদের কপালে জুটবে না, এমন নিশ্চয়তা বোধ করি দেয়া যায় না। এখন এই রোষ হয়ত ভুক্তভোগী গোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ আছে, ভবিষ্যতে এর ম্যাসিফিকেশন ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বলা হয়, 'মারের বদলা মার, খুনের বদলা খুন', এই কথার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলদের উচিত আইনের মাধ্যমে এর প্রতিফলন প্রত্যাশা করা। কিন্তু ক্রমাগত আইনের নিস্ক্রিয়তার কারণে এক সময় মানুষ ডেসপারেট হয়ে যায়। প্রচলিত আইনের প্রতি সে আর আস্থা রাখতে পারে না। ফলে গণবিস্ফোরণ বা গণজোয়ার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তাই এ ধরণের গণজোয়ার যেন মিডিয়ার বিরুদ্ধে না হয়, তার জন্য যেমন মিডিয়াকর্মীদের মগজে সাংবাদিকতার নীতিসমূহ জাগ্রত রাখা জরুরি, পাশাপাশি স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে একটি কার্যকর মিডিয়া মনিটরিং সেল গঠন করা প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটার প্যান সিনড্রোম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪২


প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি কি ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে না?

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২২

ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির আচরণ কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা কারো আচরণ কেমন হতে পারে সেটা তার অতীত থেকে খানিকটা আন্দান করতে পারি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী

লিখেছেন এসো চিন্তা করি, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪৭


"নারী "
এ. কে . এম. রেদওয়ানূল হক নাসিফ

মন খারাপ কেন বসে আছো কেন হতাশ
ওহে আজ নারী তুমি ,
কি হয়েছে তোমার এতো , সবসময় ভাবছো কি এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×