বাঙালী মুসলিম সমাজের দাবীর মুখে ১৯২১ সালের ১লা জুলাই যাত্রা শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশের বুকে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র সচেতন মধ্যবিত্ত সমাজের জন্মদাত্রী এই পীঠস্থান শতবর্ষ থেকে মাত্র নয়টি কদম দূরে। নার্ভাস নাইন্টিজের ঘরে দাঁড়িয়ে হিসাবের খাতা মিলাতে গিয়ে দৃশ্যমান হয় প্রত্যাশার পারদ তলানি ছুঁই ছুঁই করছে। তার জন্য নিকট অতীতকে দায়ী করাই শ্রেয়।
বহু অযত্ন, অনিয়ম আর অবহেলার ফল বর্তমান পরিস্থিতি বিধায় ইতিহাসকে একেবারে নিষ্কলুষ বলা চলে না। হ্যাঁ, এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকের জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী চেতনার প্রাপ্তি- নিজের ভাষা, নিজের দেশ ইতিহাসের ঝুঁলিকে সমৃদ্ধ করেছে বটে। তবে পরিকল্পিত গণতান্ত্রিক চর্চার রূপরেখা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু ঢাবি নয়, দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই একই চিত্র উপস্থিত। যার চাক্ষুষ সিদ্ধি প্রতীয়মান হয় আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশের মূলমন্ত্র “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দেশের ক্ষুদ্র সংস্করণ কল্পনা করলে বলা যায় “শিক্ষার্থীই সকল ক্ষমতার উৎস। বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি স্থান, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের আগামীর জন্য শিক্ষিত করে গড়ে তোলে। আর শিক্ষক ও আনুষাঙ্গিক কর্মচারীদের কাজ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। অর্থাৎ কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার কথা ছাত্র সমাজের। বাস্তবচিত্র ঠিক এর উল্টো। এখানে শিক্ষক ও কর্মচারী নির্বাচন থাকলেও অকার্যকর ছাত্র সংসদ। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ (১৯৭৩) অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও তা অবর্তমান। ফলে বিশ্ববিদ্যায়ের গুরুত্ব্পূর্ণ সিদ্ধান্তে ছাত্রদের অংশীদারিত্ব থাকে না। সেই অর্থে কার্যত ছাত্র রাজনীতিও অনুপস্থিত। ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলে তা মূলত কোন নির্দিষ্ট মতাদর্শের অন্ধ অনুসরণ, বিশেষ নেতৃবৃন্দের পদলেহন, নিজের বা নিজেদের শক্তির মহড়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কোন যোগ নেই।
জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যুতে ছাত্রদের অনুপ্রবেশ দেখে প্রশ্ন জাগে, তবে কি আমাদের জাতীয় নেতারা ব্যর্থ? কারণ জাতীয় নেতাদের কাজ জাতীয় ইস্যুতে তৎপর থাকা, আর ছাত্র নেতাদের দায়িত্ব নিজেকে সুশিক্ষিত করে ভবিষ্যতের জন্য তৈরী করা। অর্থাৎ শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের সচেতনতাই সমীচীন। মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রবেশ করা যেমন অসঙ্গত, তেমনি প্রকৃত ছাত্র রাজনীতির চর্চা বিনে জাতীয় রাজনীতির মাঠে বিচরণ সমাজের জন্য বিষময়। সেই সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাত্র সংসদ।
পরাধীন বাংলাদেশ আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রাক-বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনই ছিল মূখ্য। এই স্বাধীন দেশেও যদি স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখতে ছাত্র সমাজকেই প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মীত্বের ওজনদার পরিচয় বয়ে বেড়াতে হয়, তবে দেশকে এগিয়ে নিতে আগামীর জন্য নিজেদের যথোপযুক্ত করবে কখন? আর এই ধারা চলতে থাকলে উপহার হিসেবে জাতি পাবে মেধাশূন্য মেরুদণ্ডহীন একদল পাতি নেতা। সেই সুযোগে জাতীয় রাজনীতির কলকাঠি চলে যাবে সুযোসন্ধানী কালো টাকার মালিকদের হাতে। যেই চল এখনো সচল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১১