somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি পাসোলিনী ও ইদিপাস রেক্স : পূর্ণেন্দু পত্রী, কিস্তি ১

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কবি পাসোলিনীর সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা অথবা আলাপ ঘটেনি কোন দিন। বাংলা সাহিত্যে ছায়া পড়েনি তাঁর প্রতিভার। আমরা প্রবন্ধ পড়ে জেনেছি তিনি কবি। কবিতা পড়ে নয়। এ পর্যন্ত তাঁর মাত্র একটি কবিতা অনুবাদ হয়েছে বাংলায়। অনুবাদ করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর ‘অন্য দেশের কবিতা’ বইটির জন্যে। ঐ বইয়ে সুনীলের অনুবাদের শিরোভাগে আছে একটি সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি। সেটির অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করছি তাঁদের কথা ভেবে, যাঁরা ঐ বইটি পড়েননি।

“ভিড়ের রেস্তরাঁর মধ্যে হঠাৎ টেবিলে লাফ দিয়ে উঠে পাসোলিনী চিৎকার করে বলবেন, অনর্থক মানুষ, তোমরা অনর্থক সময় নষ্ট করছো। শোনো আমার কবিতা, এই কবিতাই তোমাদের বেঁচে থাকতে শেখাবে। এই রকম স্বভাবের কবি। ইতালির তরুণ কবিদের মধ্যে পাসোলিনীই সবচেয়ে প্রবল এবং দুর্দান্ত এবং সবচেয়ে বিতর্কমূলক। একদিকে তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তা, অপরদিকে একদল কবি বলেই মানতে চান না। পাসোলিনীর জন্ম ১৯২২-এ। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন। পরে বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেন। তাঁর ধারণা লেখকদের লেখা ছাড়া আর কোন জীবিকা থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু, বলাই বাহুল্য পৃথিবীর যে কোনো তরুণ লেখক, বিশেষত কবি, শুধুমাত্র সাহিত্য রচনা করেই গ্রাসাচ্ছাদন সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে পাসোলিনীকে ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখতে হয়, কখনো কখনো নিজে অভিনয়ও করেছেন। ইদানীং পাসোলিনী চলচ্চিত্র পরিচালনাতেই মুখ্যত আত্মনিয়োগ করেছেন। ইতালির আধুনিক চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য অন্যতম। তাঁর তোলা যীশুর জীবনী একটি বিতর্কমূলক ছায়াছবি। রবীন্দ্রজন্ম-শতবার্ষিকীতে তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন।”

এর পরে আরও পাঁচটি লাইন আছে সুনীলের ঐ লেখায়। পাসোলিনী সেখানে ‘নিওরিয়ালিষ্ট’ গোষ্ঠীর কবি। হয়তো ঠিকই। কিন্তু পরিচালক হিসেবে তিনি কখনো নিজেকে ঐ গোষ্টির লোক বলে স্বীকার করেননি। একবার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন--
“হ্যাঁ, আমি সবসময়েই ছোট ছোট শট্ নিয়ে থাকি। আমার সঙ্গে নিওরিয়ালিষ্টদের এখানেই পার্থক্য। নিওরিয়ালিজম-এর প্রধান লক্ষন, দীর্ঘস্থায়ী দৃশ্য। ক্যামেরা থাকবে একটা স্থির জায়গায় স্থির। চরিত্ররা আসবে, যাবে, কথা বলবে, হাসবে, তাকাবে, ঠিক বাস্তব জীবনে যেমনটা ঘটে। আমি ঐরকম দৃশ্য, কখনোই নিইনি। আমি ন্যাচুরালনেসকে ঘৃণা করি। আমি সব কিছু গড়ে নিই।”

চলচ্চিত্রের আলোচনা থেকে আমরা ফিরে যেতে চাই কবিতায়। না, আসলে কবিতায় নয়। চলচ্চিত্রের সঙ্গে তার কবিসত্তা যতটুকু জড়িয়ে আছে, নিজের চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি যেভাবে বারে-বারে কবিতার কাছে ফিরে এসেছেন, সেইটুকুই আমাদের আলোচনার পুঁিজ। সেইসব হাতড়েই একজন কবিকে খোঁজা।

যুদ্ধের সময়ে, যখন থাকতেন ফ্রিউলিতে, তখন থেকেই কৃষক জীবনের সঙ্গে তার আঁতের যোগ। সেই সময়েই ধনী জমিদারদের সঙ্গে কৃষকদের লড়াই। পাসোলিনী জড়িয়ে পড়লেন লড়াইয়ে। মার্কসিজমও সেই প্রথম স্পর্শ করল তাঁর ফুটন্ত আবেগকে। প্রথম কবিতা লিখতে বসে সেই সময়ে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বেছে নিলেন ‘ফ্রিউলান’। তাঁর নিজের ভাষা নয়। ভাষাটা আঞ্চলিক, স্থানীয় চাষীদের।

“ফ্রিউলান ভাষায় যখন প্রথম কবিতা লিখি, তখন আমার বয়স সতেরো। তার কারণটা ছিল অদ্ভুত। তখন ইতালীতে ‘হারমেটিসিজমের’ আধিপত্য। এর মূল লক্ষ্য ছিল সিম্বলিজম। এই আন্দোলনের মূলে প্রবল প্রভাব ছিল মালার্মের। কিছুটা রিলকেরও। প্রথম প্রভাবিত হয়েছিলেন উনগারেত্তি। সারা ইতালীতে ছড়িয়ে পড়েছিল এই আন্দোলনের প্রভাব। মনতেল-ই একমাত্র কবি যিনি একে ছাড়িয়ে ইউরোপের অন্যান্য কবি, যেমন এলিয়ট এবং পাউন্ডকে অনুসরণ করে, হারমেটিসিজমকে চেহারা দিয়েছিলেন খানিকটা সহজ সরল। হারমেটিক কবিতার মূল লক্ষ্য ছিল কবিতার ভাষা হবে শুধুমাত্র কবিতারই ভাষা। এবং এটাকে নিয়ে তাঁরা যাত্রা করেছিলেন দুর্বোধ্যতার একেবারে প্রান্তসীমায়। যেখানে সবকিছুই অনুভবের বাইরে। সবটাই যেখানে সাড়াহীন। "an absence of Communication". সেই সময়ে ফ্রিউলানকে আমি মাথায় তুলে নিলাম কবিতার একটা বিশেষ ভাষা হিসেবে। বাস্তবতার প্রতি যতরকম ঝোঁক বা প্রবণতাতার একেবারে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী হিসেবে, ‘It was the maximum of hermetic obscurity.‌‌' এই আঞ্চলিক ভাষার সান্নিধ্যে পৌছেই, যদিও প্রথমদিকে শুধুমাত্র সাহিত্যের জন্যেই হাত পেতেছিলাম এর কাছে, ক্রমশ বুঝতে পারলাম, আমি ছুঁয়ে ফেলেছি এমন একটা জিনিস যা অত্যন্ত জ্যান্ত এবং ভীষন বাস্তব। আমি ক্রমশ চিনতে এবং বুঝতে পারলাম, কৃষক জীবনের বাস্তবতাকে। তারপর আমার লেখায় এই ভাষা আর শুধুমাত্র হারমেটিক এসথেটিক্সের কলা-কৌশল হিসেবে ব্যবহার হওয়ার বদলে হয়ে উঠল বাস্তবকে প্রকাশ করার বস্তুনিষ্ঠ অবলম্বন বা উপকরণ। আমার উপন্যাসে সেটা পেল পরিপূর্ণ রূপ। যেখানে আমি রোমান ডায়ালেক্টকে ব্যবহার করেছি এমন ভাবে, যা প্রথম দিকের সম্পূর্ণ বিপরীত।”

(চলবে)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×