somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক ও উত্তরাধুনিক : সলিমুল্লাহ খান

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Il est vrai que la grande tradition s’est perdue, et que nouvelle n’est pas faite.
সনাতন জীবনধারা শেষ হইয়া গিয়াছে কিন্তু নতুন জীবনধারার আজও তৈরি হয় নাই—কথাটা সত্য বটে।
—শার্ল বোদলেয়ার (১৯৬৪/খ: ১৬৪Ñ৬৫)

এমন এক যুগ ছিল যখন দেশবাসী জনসাধারণের মাথাপিছু আয় দেখে জাতীয় উন্নতি বা অনুন্নতি মাপা হত। সেই যুগ, খবরে প্রকাশ, আর নাই। তবে পুরানা যুগের জায়গায় নতুন কোন যুগ এল বলা মুশকিল।

জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি আয় দেখে উন্নতি মাপার জায়গায় ‘নতুন’ এক মাপকাঠি ব্যবহার শুরু করেছে। এই কাঠির নাম ‘মানব উন্নয়ন’ বা মূল ইংরেজি বয়ানে যেমন বলে হিয়ুম্যান ডেভেলপমেন্ট (human development)। ১৯৯৫ সনে প্রকাশিত এক প্রচারপত্র মোতাবেক মানব উন্নয়ন ‘সাধারণ মানুষের পছন্দের আওতাবৃদ্ধির পথ’। পছন্দের আওতা—জাতিসংঘ বলছে—কেতাবি হিসাব অনুসারে অনন্ত এবং কালে কালে পরিবর্তনের বিষয়ও বটে।

তবে উন্নয়নের যেই তলায়ই হোক, তিনটি জিনিস না হলে সাধারণের চলবে না। এদের মধ্যে এক নম্বরে পূর্ণ ও সুস্থ পরমায়ুর কথা আসে। দুই নম্বরে আসে বিদ্যাবুদ্ধির কথা। শেষ তথ্য, তিন নম্বরে আসে ভদ্র জীবনযাপনের উপযুক্ত আয়-উপার্জন বা ধনসম্পত্তির কথা। এসব কথায় কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।

দুঃখের মধ্যে আপত্তির বিষয় একটি আছে। যখন বলা হয় এই তিন জিনিসের মধ্যেই আপনাকে পছন্দ করতে হবে তখন আপনি কী করবেন? যদি বলা হয় আপনি আয় ভালো পাবেন কিন্তু আয়ু পাবেন অল্প, নেবেন কি? অথবা যদি বলা হয় বিদ্যাবুদ্ধি অনেক হবে আপনার কিন্তু চিরদিন আপনাকে ফকির থাকতে হবে। নেবেন কি এই পছন্দের ভার? ঘটনা যদি এমন হত যে আপনি ইচ্ছা হয় বেছে নিন, ইচ্ছা না হয় ছেড়ে দিন তবে একটা কথা ছিল। আসল ঘটনা কিন্তু সেই রকম নয়। অন্য রকম।
বাছাই করা বা না করার স্বাধীনতা আপনার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় নাই। বাছতে আপনি বাধ্য। অথবা বেছে না নেওয়ার কিংবা ছেড়ে দেওয়ার স্বাধীনতা আপনার নাই। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিও একপ্রস্ত বিজ্ঞাপন বৈ নয়। এর পিছনে যেই দাতার (মানে বলছিলাম কিনা বিজ্ঞাপনদাতার) দল কাজ করছেন তাঁরা ঘোষণা করেছেন ‘মানব উন্নয়ন মানে সাধারণের বাছাই করার সীমা বাড়ানো’। বাছাই করার—মানে কোনটাই না চাওয়ার বা সবটাই চাওয়ার—স্বাধীনতা এই সীমার ভিতর পড়ে না। সেই কথা না বললেও, শুনেছি, অনেকের কাছে পরিষ্কার। (ইউএনডিপি ১৯৯৫)

‘পছেন্দর স্বাধীনতা’ বা ‘মানুষের অধিকার’ কোন এক যুগে সমার্থক পদজ্ঞানে চালু ছিল। সেই যুগকেই আমরা আধুনিক যুগের সূচনাকাল বলে জানি। আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর হতে চলল—বিশেষ এয়ুরোপ মহাদেশে—রটিত হয়েছে আধুনিক যুগ বা মানুষের অধিকারের যুগ শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্যের মধ্যে ফরাসি মনীষী মিশেল ফুকো ঘোষণা করেছিলেন: ‘মানুষ’ কথাটি তেমন প্রাচীন নয়, সমুদ্রতীরে বালিতে আঁকা মুখের মতন একদিন তা ধুয়েমুছে যাবে। (ফুকো ১৯৯৪: ৩৮৭)

এতদিনে মনে হচ্ছে ফুকোর অতীতবাণী সত্য হতে চলেছে। পছন্দের স্বাধীনতা এখন পছন্দের অধীনতায় উন্নীত হয়েছে। এখন আপনি পছন্দ করতে বাধ্য। পছন্দ না করে আপনার উপায় নাই। এই নতুন যুগের নাম ইংরেজি-ফরাসি জবানে দাঁড়িয়েছে পোস্ট মডার্ন (post-modern)। আমাদের দেশে সাংবাদিকরা বলেন ‘উত্তরাধুনিক’। পছন্দের স্বাধীনতা থেকে শেষ পর্যন্ত আধুনিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে। আর এখন পছন্দের অধীনতা অনুসারে আপনি হয় সেই সাম্রাজ্য গ্রহণ করবেন নয়তো তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার নামে ‘সন্ত্রাস’ করবেন। দুইয়ের এক আপনাকে বেছে নিতেই হবে। বেছে নেওয়া থেকে আপনার পরিত্রাণ নাই। এই পরিস্থিতির নামই দাঁড়িয়েছে ‘উত্তরাধুনিক’ যুগ।

আমাদের ধারণা আধুনিক ও উত্তরাধুনিক কিংবা সাম্রাজ্য ও সন্ত্রাসের মধ্যে একটা বা অন্যটা বেছে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হওয়ার স্বাধীনতা সম্ভব কিনা তা যাচাই করা হয় নাই। সেই কারণে আধুনিক ও উত্তরাধুনিক দুই নীতিরই পরীক্ষা প্রার্থনীয়। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা সেই পরীক্ষার মুখাগ্নি করছি মাত্র।



ফরাসি মনীষী জাক লাকাঁর বিশ্লেষণ করে স্লোভেনিয়াবাসী পণ্ডিত শ্রীমতী আলেনকা জুপানচিচ এই বিচারের সূচনা করেছেন আলান পাকুলা নির্মিত সুফিয়ার নির্বাচন (Sophie’s Choice) ছবি ভর করে। এই ছবির এক স্থলে সুফিয়াদেবী আপন জরায়ুজাত এক ছেলে ও এক মেয়েসহ আউসভিৎস বন্দিশিবিরে এসে হাজির হন। তখন এয়ুরোপে মহাসমর চলছে। জনৈক জার্মান সেনা কর্মকর্তা এগিয়ে এসে সুফিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জানতে চান তিনি কম্যুনিস্ট কিনা। জবাবে সুফিয়া জানান তিনি কম্যুনিস্টও নন, এয়াহুদিও নন। পরিচয়ে তিনি অন্য, একে তো পোলদেশি অন্যাধারে খ্রিস্টান ধর্মের ক্যাথলিক মজহাবের সদস্যা। জার্মান কর্মকর্তা তখন তাঁকে বলেন তোমাকে পছন্দের স্বাধীনতা দিচ্ছি। দুই সন্তানের একটি তুমি রাখতে পার। অপরটি আমাদের হাতে ছেড়ে দাও। গ্যাসের চুলায় যাবে ওটা।

তিনি কম্যুনিস্ট বা এয়াহুদি, অর্থাৎ অসাধারণ নন। পোলদেশি ও ক্যাথলিক, মানে সাধারণ। এই কারণেই ওঁকে পছন্দের স্বাধীনতা বা মানুষের অধিকার (অথবা মানবাধিকারও বলা যায়) দেওয়া হল। সুফিয়া প্রথম প্রথম গাইগুই করেন। জার্মান কর্মকর্তা বার বার পছন্দের স্বাধীনতা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি এই স্বাধীনতার সদ্ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানাতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে কর্মকর্তা যখন দুই সন্তানকেই বধ্যভূমির দিকে নিয়ে যেতে আদেশ দিলেন তখন সুফিয়া দুজনের একজনকে বেছে নিলেন।

অন্তত একজন প্রাণে বাঁচুক। কিন্তু এই পছন্দের সময় সুফিয়ার মুখ বেদনায় বাঁকা হয়ে আসে, মনে হয় সে ভেংচি কাটছে। আবহে ভেসে আসে তাঁর কন্যার কণ্ঠ, কান্না ও চিৎকার। চলচ্চিত্রে দেখি শেষমেশ সুফিয়ার নির্বাচনে মেয়েটিই হেরে যায়। সুফিয়াও কাঁদতে পারেন নাই। গ্রাহকযন্ত্রের কল্যাণে আমরা দেখি তাঁর ব্যাদান করা মুখ স্থির। (জুপানচিচ ২০০০: ২১৩Ñ১৪)

যেখানে ভাষার শেষ সেখানেই—আমরা বাংলায় বলি—অনির্বচনীয়ের শুরু। এই অনির্বচনীয়েরই এয়ুরোপীয় নাম—লাকাঁ রেখেছেন—অখিল (real)। তাই অখিল শব্দে আমরা বুঝি নির্বাক বা অবাক। সুফিয়ার নির্বাচন শুদ্ধ সুফিয়াকে কেন আমাদেরও অবাক করে। মানে আমরা গেঁথে (suture) যাই। সুফিয়ার নির্বাচনেরই অপর নাম—আমরা সবিনয়ে সবাক করব—উত্তরাধুনিক যুগ বা মানব উন্নয়ন। মাশাল্লাহ!

সুফিয়া কী পেল, কী হারাল এই নির্বাচনে? দুই সন্তানের জীবনের বদলা হিসাবে যদি সুফিয়াকে নিজ জীবনই দান করতে হত, তো এই নির্বাচনে শরিক হতে হত না তাঁর। কিন্তু সেই সুযোগ তাঁর নাই। জীবন অতি তুচ্ছ জিনিস নয়। সেটাও সই। দেওয়া যায় সেই অমূল্য জীবনও। কিন্তু সুফিয়াকে যা দিতে হয়েছে তা জীবন নয়, জীবনের অধিক কিছু। আমাদের বঙ্গভাষায় এর নামই ভক্তি।

জীবন আমার আছে, প্রয়োজন হয় দিতে পারি। কিন্তু আমাকে এখানে দিতে হয়েছে এমন কিছু যা আমার নাই, যার মালিক আমি নই। জীবন আমার হাব (have)। মানে আমার জীবন আমার কাছে আছে। কিন্তু আমি যে আমার হাব নই, ভাব (being)। অর্থাৎ আমার ভাব আমার কাছে নাই। সুফিয়াকে এই খোদ ভাবই দিতে হয়েছে। হাব যদি মৃত্যুর এই পারে হয়, ভাব জীবন-মৃত্যুর ঐ পারে। কেবল হাবই নির্বাচনের আওতায় পড়ে, মানুষের স্বাধীনতার তালিকায় ওঠে। ভাব নয়। ভাব নির্বাচনের পরপারে। ভাব মনুষ্যের অধিকারের অংশ নয়।

মানুষকে যখন এমন জিনিসও দিতে বাধ্য হতে হয় যা তার নিজ বা ভাবসম্পদ নয় তখনই ভাষা বা বাক হয়ে ওঠে অবাক। তাকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমাদের যুগকে বলা হচ্ছে এই অবাক নির্বাচনের যুগ বা উত্তরাধুনিক।

এই পরিস্থিতির সামনে আমাদের করার কিছু নাই। এই কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে উত্তরাধুনিক মানে ‘নিজ জীবনের বাইরে আর কিছু নাই’—এই জ্ঞান। বহুধাবিভক্ত (plural), ছড়ানো ছিটানো (local) এবং মুখামুখি (immanent) উত্তরাধুনিক নীতির এই বৈশিষ্ট্য কি আধুনিক নীতির বিকল্প? মোটেও নয়। সুফিয়ার সামনে নিজের প্রাণ বিসর্জনের স্বাধীনতাও নাই কেন? কারণ স্বাধীনতা বা নির্বাচনের ছদ্মাবরণে উত্তরাধুনিক যুগ সন্ত্রাসবাদী।



আমাদের প্রস্তাব উত্তরাধুনিক সন্ত্রাসের সঙ্গে আধুনিক ত্রাসের বা সাম্রাজ্যের যোগ নিবিড়। তাই বিকল্প অনুসন্ধানের আগে পরীক্ষা করা দরকার আধুনিক নীতিই বা কী বস্তু? জাক লাকাঁ দেখাচ্ছেন আধুনিক নীতির উদ্ভবের সঙ্গে উত্তম পুরুষের (ego) ত্রাস কিংবা স্বৈরাচার জড়িত। উদাহরণটা তিনি দিয়েছেন প্রাচীন গ্রিসের আন্তিগোনে নাটক সম্বল করে। (লাকাঁ ১৯৯৭)

রাজা ক্রেয়ন আদেশ করেছেন যুদ্ধে নিহত আক্রমণকারী পলিনিকেসকে যথানিয়মে কবর দেওয়া যাবে না। দেওয়ার চেষ্টা করলে নিশ্চিত শাস্তি মৃত্যু। তা জেনেশুনেই আন্তিগোনে সিদ্ধান্ত নেন তিনি আইন অমান্য করবেন। এই আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিতে আন্তিগোনের অপর বোন ইসমেনে রাজি হন না। আন্তিগোনের নির্বাচনও এক প্রকার অসম্ভব নির্বাচনই। মৃতের প্রতি কর্তব্য পালনের বিনিময়ে নিজেকেও মৃত বানাতে হবে। আন্তিগোনের নির্বাচন এই দুই বিকল্পের মধ্যে। প্রথম বিকল্প কর্তব্য বা পারিবারিক দায়। জাক লাকাঁ বলেছেন এরই নাম শুদ্ধ বাসনা (desire)। দ্বিতীয় বিকল্প আত্মরক্ষা বা রাষ্ট্রের দায়। এর অপর নাম কাপুরুষতা বা কর্তব্যে বিচ্যুতি (bad faith) যা বাসনার বেচাকেনায় রাজি হয় নাই। অনন্ত বাসনার বিনিময়ে সে এক বাসনাকেই সঙ্গী করেছে।

জার্মান পণ্ডিত হেগেলসুদ্ধ অনেক মনীষী আন্তিগোনের সৌন্দর্যের ও সাহসের তারিফ করেছেন। কিন্তু তাঁরা বলেছেন ক্রেয়ন ও আন্তিগোনে দুজনই দুই দিক বিচারে সঠিক। একজন পরিবারের (তথা দিব্য) কর্তব্য পালন করেছেন: কারণ ভাইয়ের কবর দেওয়া বোনের দিব্য কর্তব্য। মানুষের সৎকার মানুষের কর্তব্য, ফরজ। আরজন রাষ্ট্রের (তথা সমাজের) কর্তব্য করছেন: বিদ্রোহীর শাস্তি দেওয়া, আইন অমান্যকারীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। দুই নীতির সংঘাতে সমানে সমান লড়াই হয়েছে। তাই এই সংঘাতের নাম—হেগেল বলেন—ট্রাজেডি। নীতির সঙ্গে নীতির বিয়োগ ঘটেছে এই নাট্যকর্মে। এই বিয়োগ অমোঘ।

এই নাটকের বিচারে জাক লাকাঁ অন্য কাঠি ব্যবহার করেছেন। তিনি দেখাচ্ছেন এখানে ক্রেয়নের যুক্তি আধুনিক মানুষের বা উত্তম পুরুষের যুক্তি। উত্তম পুরুষের যুক্তির সবচেয়ে সংহত প্রকাশ ঘটিয়েছেন সতের শতাব্দীর ফরাসি পণ্ডিত রনে দেকার্ত। দেকার্তের বিখ্যাত উক্তি: ‘আমি ভাবি, তাতেই প্রমাণ আমি সত্য’—উত্তম পুরুষের বা বক্তার অহঙ্কার (অহম মানে আমি) বা আমিত্ব প্রকাশ করে। যখন কোন উত্তম পুরুষ বলেন ‘আমি বলছি আমি মৃত’ তখন বোঝা যায় উদ্ধারচিহ্নের ভিতর ব্যবহৃত দুই ‘আমি’ এক ‘আমি’ নয়।

যে মানুষই ভাষায় কথা বলে বা সবাক হয় তাকেই ভাষার অধীনতা স্বীকার করতে হয়। তাই সে যখন ভাবে তখন প্রমাণ হয় ভাষাই সত্য—আমি তার উপসত্য মাত্র। ক্রেয়ন যে রাজা বা আইনের বিধাতা সেই সত্যও সেই রকমই উপসত্য বৈ নয়। যেই লোক বলে ‘আমি ভাবি তাই আমি রাজা’ অথবা ‘আমি আইন জারি করেছি তাই আমি রাজা’—সেও সেই লোকের মতন, যে বলে ‘আমি আইন জারি করেছি তাই আমি মৃত।’ জীবিত মানুষ রাজা হতে পারে না, যেমন পারে না ভাষা হতেও। রাজা, আইন ও ভাষা সবই নিশানা মাত্র। অর্থাৎ মৃত। যে লোক মনে করে আমি রাজা, তার চেয়ে বড় উন্মাদ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নাই।

এই অর্থে ক্রেয়ন লোকটাও ছিলেন উন্মাদ। অথচ হেগেলের মতন মনীষীও বিষয়টি ধরতে পারেন নাই। কারণ খোদ দেকার্তের মতন হেগেলও বুঝে উঠতে সমর্থ হন নাই মানুষ—ভাষার অধীন মানুষ—মাত্রই দ্বিধাবিভক্ত, বিভাজিত। একজন উত্তম পুরুষের ভিতর একই সঙ্গে একটি নামপুরুষও বাস করেন। প্রকৃত প্রস্তাবে উত্তম, মধ্যম ও নাম তিন পুরুষ তিন শাসনে বাস করেন। শাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ এখানে রেজিস্টার (register), আর তার ফারসি সেরেস্তা। ক্রেয়ন এই সত্যের সন্ধান পান নাই। দেকার্তও পান নাই। হেগেলও না।

তবে হেগেল যা পেয়েছিলেন তার মধ্যে উত্তম ও অধমের লড়াই বিষয়টা আছে। উত্তমের শাসন সেরেস্তা থেকে দেখলেও হেগেল অধমের শক্তিটা টের পেয়েছিলেন। হয়তো সেই জন্যই তিনি আন্তিগোনের তারিফ না করে পারেন নাই।

জাক লাকাঁর মতে, তারপরও হেগেল যথেষ্ট করেন নাই। ক্রেয়ন নিজেকে বিধাতা ভাবলেন। আন্তিগোনের স্পর্ধা অনুসারে মানুষ মাত্রেই অধম, কেউই বিধাতা নন। সুতরাং ক্রেয়নকেও নেমে আসতে হবে অধমের, অর্থাৎ নামের সারিতে। অথচ ক্রেয়ন ভেবেছেন, আন্তিগোনে আইন অমান্য করে নিজেকেই পাল্টা উত্তম পুরুষের আসনে বসিয়েছেন। প্রভু বা উত্তম পুরুষ যে আসলেই ফাঁকাবুলি এই সত্য ক্রেয়ন বুঝতে পেরেছেন অনেক দেরিতে, যখন আর সংশোধনের সময় নাই তখন।

আন্তিগোনের নির্বাচন ইউএনডিপি ঘোষিত পছন্দের আওতা কিংবা সুফিয়ার নির্বাচন নয়। আন্তিগোনের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া নির্বাচন নিছক জবরদস্তির নির্বাচন ছিল, অন্তত তাঁর বোন ইসমেনের চোখে তেমনই ঠেকেছিল এই নির্বাচনের প্রকৃতি। নির্বাচন কর বেছে নাও: হয় আইন, নয় মৃত্যু। দেখা গেল আন্তিগোনে শুদ্ধ মৃত্যু বেছে নেয় নাই। সে দানও উল্টে দিয়েছে। সাধারণের চোখে মৃত্যু বেছে নেওয়া অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে পরিহার করাবার জন্যই কিন্তু এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। নির্বাচনের স্পর্ধা কবুল করে আন্তিগোনে অবাক করলেন সবাইকে। আন্তিগোনের নির্বাচন নেহায়েত বেহাত পছন্দ নয়। নির্বাচনের শিকার মাত্র নন তিনি। খেলার নিয়মই পাল্টে দিল তাঁর নির্বাচন।

প্রথমে তিনি মৃত্যু নির্বাচন করলেন। এর ফলে ইসমেনে বাধ্য হলেন নিজেকে কাপুরুষ প্রমাণ করতে। দুই নম্বরে আন্তিগোনের মৃত্যু ক্রেয়নকে বাধ্য করল নিজেদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে। ক্রেয়ন নিজ থেকেই যদি বুঝতে পারতেন তো তাকে বীর বলা যেত। কিন্তু অন্ধ তিরেসিয়স তিরস্কার না করা পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেন নাই তিনি শাঁখের করাতেই পড়েছেন। তাঁর দশা হয়েছে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের মতন। বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

আন্তিগোনের পথ সন্ত্রাসের পথ নয়। একই সঙ্গে তা আবার মহাত্মা গান্ধির দ্বিতীয় সংস্করণ মাত্রও নয়। আন্তিগোনের আহ্বান: ক্রেয়ন তুমি উত্তম পুরুষের অহঙ্কার ছেড়ে অধম বা নামপুরুষ হও, দশের একজন হও। অথচ ক্রেয়ন নিজের রাজ্যভার ছাড়তে রাজি হন নাই। নিজের ভিতরের ফাটলটি বুঝতে অস্বীকার করলেন তিনি এবং পরিণামে আমরা দেখলাম সাম্রাজ্যের ভগ্নদশা।



আধুনিক সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে। দেকার্ত এই যুক্তির বিশুদ্ধ প্রবর্তক। এই যুক্তি অনুসারে মানুষ মানে সেই প্রাণী যে ভাবে। তাই সে ‘আশরাফুল মখলুকাত’। এই যুক্তিতেই মানুষের মধ্যে বিরাজমান আশরাফ-আতরাফ বিভক্তি নতুন বৈধতা লাভ করে। তথাকথিত মানবধর্ম (humanism) আসলে এই আশরাফ ধর্মেরই নতুন নাম ছিল। এই মতবাদই ক্রমে ক্রমে পৃথিবীব্যাপী ধনতন্ত্রের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব করেছে। সাম্রাজ্য বলতে আমরা এই ঘটনারই নির্দেশ করছি। পণ্ডিত হেগেল এর মধ্যে উত্তম পুরুষের প্রতিষ্ঠা দেখেছিলেন। আন্তিগোনের মধ্যে তিনি নতুন আশরাফ শ্রেণীর ছায়া দেখেন। বলা বাহুল্য সেই বস্তু শুদ্ধ তাঁর বিভ্রম।

এখন এয়ুরোপ ও আমেরিকায় যেই পণ্ডিতরা আধুনিক যুগের অবসান ঘোষণা করেছেন তাঁরা আন্তিগোনের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীর ছায়া দেখলে আমরা বিস্মিত হব না। আদর্শের জন্য যারা অকাতরে প্রাণ দেন তাদের আমরা বীর বলে থাকি। ফরাসি বিপ্লবের সময় দাগি অপরাধীরাও সাহস প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতা করে গিয়োতিনের সামনে মাথা পেতে দিত। কবি বোদলেয়ার তাতে সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন এবং তার নাম দিয়েছেন ‘আধুনিক সুন্দর’। (বোদলেয়ার ১৯৬৪/খ) আন্তিগোনের মধ্যেও অনেকে এই সুন্দরকে দেখেছেন।

আমরা দাবি করব, আন্তিগোনের সুন্দর সুন্দরেরও অধিক। তার মধ্যে ন্যায়ের আভাস আছে। এই আভাসেই প্রমাণ আধুনিকের বিকল্প উত্তরাধুনিক নয়, সাম্রাজ্যের বিকল্প সন্ত্রাস নয়। এই উভয়েরই বিকল্প ন্যায় আছে। আন্তিগোনের পথে সেই ন্যায়ের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। অথচ উত্তরাধুনিক মতবাদের বেনামি—যেমন ফুকো—বা স্বনামি প্রবক্তারা—যেমন লিয়োতার—এই সত্য স্বীকার করতে রাজি হবেন না।

আন্তিগোনের মৃত্যুদণ্ড স্থির হয়ে গেছে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণে গাওয়া তাঁর বিলাপগীতিটি বহু বোদ্ধা পড়–য়ার পর্যন্ত মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এমনকি মহাত্মা গ্যেটে পর্যন্ত রায় দিয়েছেন এই গীতিটি জালিয়াতি না হয়ে পারে না। এমন লেখা সোফাক্লেসের হতে পারে না। কেন? এই গীতিকায় অসম সাহসী আন্তিগোনে অনুযোগ করে বলছেন: আহা, আমার তো বাসর রাত হবে না, প্রিয়ের বাহু আমাকে কোনদিন জড়াবে না, কোলজুড়ে কোনদিন শিশুও আসবে না, বধূবরণের ডালা থেকে কেউ পুষ্পবৃষ্টি করবে না...।

কী কী তার হবে না সেই তালিকা অফুরন্ত। তারই অপর নাম বাসনা। সেই বাসনা কখনো পূরণ হবে না। সেই বাসনা পরিমাপের অযোগ্য। আন্তিগোনে এখন এই জীবনের ভাষায় গান গাইলেও তার এক পা পড়েছে জীবন ও মৃত্যুর পরপারে, যেই জগৎ তার সীমানায়। সেখান থেকে দেখলে পার্থিব অপার বাসনা, অসীম বাসনাও পরিমাপের যোগ্য হয়ে ওঠে। পরম বাসনা তাকেই বলে যার বলে অসীম হয়ে ওঠে সসীম।

ইমানুয়েল কান্ট বলেছেন মৃত্যুর পরে জীবন অনন্ত হবে এই বিশ্বাস অর্থহীন হত যদি না মানুষ এমন এক পরমেশ্বর কল্পনা করতেন যিনি এই অনন্তকেও অন্ত দিতে পারেন, পরিমাপ করতে পারেন। জাক লাকাঁও বলেছেন, আন্তিগোনের বাসনা আর মহাত্মা কান্ট-কল্পিত পরমেশ্বর বা সর্বোচ্চ মঙ্গলও একই বস্তু। আন্তিগোনের বাসনা বা শেষ বিচার ছাড়া এই পৃথিবীর অন্তহীন বাসনার কোন উপশম নাই। সেই অন্ত থেকেই—যাকে শেষ বিচারের মালিক বা ইচ্ছাপ্রভু বলা হয় সেই পরমেশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকেই—কেবল অনন্তের পরিমাপ করা সম্ভব।

মনে রাখা চাই অনন্ত মানে অন্তের অ (বা অভাব) নয়। অনন্তের নতুন অর্থ অ-এর অন্ত বা অভাবের অন্ত বা বাসনার অন্ত। এতদিন আমরা জানতাম—অবশ্যই জাক লাকাঁর কারণে—বাসনার নাম অনন্ত। এখন আমরা জাহির করব অনন্তের (অ-এর অন্তের) অপর নামই পরম বাসনা। আন্তিগোনে সেই বাসনার চরিত-কথা বৈ নয়।

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নীতি বটে, কদাচ সন্ত্রাস নয়। কারণ সন্ত্রাস মানে সাম্রাজ্যের ছুঁড়ে দেওয়া নির্বাচন, ইউএনডিপির পছন্দের বাধ্যবাধকতা। পছন্দের শিকার হওয়া আর সন্ত্রাসের পথ ধরা সমার্থক। আন্তিগোনের পথ বিকল্প সত্যের সম্ভাবনার ইশারাও দেয়।

এই পথ মানে খোদ সাম্রাজ্যের আঙ্গিনায় বল ছুঁড়ে মারা। সাম্রাজ্যকেই বাধ্য করা, ‘পছন্দের স্বাধীনতা’ তার হাতে তুলে দেওয়া। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মোরশেদ শফিউল হাসানের একটি বই আছে, নাম: অবাক নাম ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম অবাক নামই বটে। আন্তিগোনের মতনই সেও বল ছুঁড়ে দিয়েছিল সাম্রাজ্যের হাতে।

পছন্দের স্বাধীনতা আমরা হারিয়েছি। কিন্তু সাম্রাজ্য এখনো সেই স্বাধীনতা অর্জন করে নাই। আধুনিক যুগের অবসান হয়েছে কিন্তু নতুন যুগের সূত্রপাত এখনো হয় নাই। মাঝখানের বিকার বা সঙ্কট আপাতত ‘উত্তরাধুনিক’ নামে চলছে। তো চলতে থাকুক।

ঘরে বসে যেই বেটা নিজেকে রাজা ডাকে তাকে যেমন রাজা মানা যায় না, তেমনি যুগের শাসনশক্তি নিজের যেই নাম দেয় সেই নামে তাকে ডাকতে হবে এমন কোন কথা নাই। এখনো আধুনিক যুগই চলছে ছদ্মনামে, যেমন সাম্রাজ্যও চলছে সন্ত্রাসের ছাতার আড়ালে।

পছন্দের স্বাধীনতা যেই দিন সাম্রাজ্যের হবে—আমরা আশা করি—সেই দিন উত্তরাধুনিক ছদ্মযুগেরও কবর হবে।

...............
সমকাল, ৬ এপ্রিল ২০০৭

দোহাই
1. Charles Baudelaire, ‘On the Heroism of Modern life’, in Flowers of Evil and other works/ Les fleurs du mal et oeuvres choisies, trans. and ed. Wallace Fowlie (New York, 1964/kha).
2. Michel Foucault, The Order of things: An Archeology of the Human Sciences, trans. anonymous, reprint (New York, 1994).
3. Jacques Lacan, Ethics of Psychoanalysis: The Seminar of Jacques Lacan, Book VII, ed. Jacques-Alain Miller, trans. Denis Porter (New York, 1997).
4. United Nations Development Programme (UNDP), Gender and Human Development: Human Development Report 1995 (New York, 1995).
5. Alenka Zupancic, ‘Lacan’s Heroines: Antigone and Synge de Coufontaine,’ in ed. Slavoj Zizek, Jacques Lacan: Critical Evaluations in Cultural Theory (London, 2003), pp. 276–90.
6. Alenka Zupancic, Ethics of Real: Kant. Lacan (London, 2000).
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×