জালনোট ২০ ডলার দিয়ে একটি দোকান হতে সিগারেট কিনেছিলেন জর্জ ফ্লয়েড, দোকানদারের ভাষ্যমতে জর্জ ফ্লয়েড মদ্যপও ছিলেন সেই সময়ে। কিশোর বয়সের দোকানদার জর্জ ফ্লয়েডের কাছ থেকে জাল নোট পেয়ে তা ফেরত দিয়ে সিগারেটটি ফেরত নিতে চেয়েছিলো এ নিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের সাথে তর্কও হয় তার। কিন্তু জর্জ ফ্লয়েড সিগারেট ফেরত না দিয়ে কিংবা জাল নোট না বদলিয়ে দোকানের বাইরে যেয়ে একটি গাড়ির উপর বসে অনান্যদের সাথে আড্ডা দিতে থাকেন। নিরুপায় দোকান কর্মচারি ফোন করে ৯১১ পুলিশ ইমার্জেন্সিতে অভিযোগ জানায়।
৯১১ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ৪জন পুলিশ যান, জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলার আগে মিনিয়াপোলিস শহরের শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক শভিন গ্রেফতার করতে আসলে হাতকড়া পরাতে গিয়ে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা জর্জ ফ্লয়েডকে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে ঘাড়ের উপর চেপে ধরেন যার ব্যাপ্তি ৮মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মতো। এসময় পথচারীরা ঘটনার ভিডিও করেন, ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন কিন্তু সাথের পুলিশ অফিসাররা কিংবা পা দিয়ে চেপে ধরা ডেরেক শভিনের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। জর্জ ফ্লয়েড নিজেও অনেকবার বলেছিলেন সে নিশ্বাস নিতে পারছেনা, তারপরেও কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া ছিলোনা ডেরেক শভিনের। ঘটনাস্থলেই মারা যান জর্জ ফ্লয়েড, যা নিশ্চিত করা হয় পরবর্তিতে হাসপাতাল হতে।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু্তে উত্তাল সারা আমেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান। গতকাল (০৪জুন২০২০) অনুষ্ঠিত হলো ঘটনাস্থল মিনিয়াপোলিস শহরে জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণ সভা। তাকে নেওয়া হবে তার শহর হিউস্টন, টেক্সাসে তার ধর্মীয় রীতিতে দাফনের জন্য।
জর্জ ফ্লয়েড ছিলেন ৪৬ বছর বয়সি এবং এক কন্যা সন্তানের জনক (জর্জ ফ্লয়েড আগের সম্পর্কের ২৭ বছর বয়সি এক ছেলে এবং ২৬ বছর বয়সি এক মেয়ে আছে, তার সর্বমোট ৫ সন্তানের কথা জানা যায়), যিনি সম্প্রতি স্ত্রীর সাথে না থেকে এক মেয়ে বান্ধবীর সাথে থাকতেন এবং বর্তমান সময়ে বেকার ছিলেন।
তিনি তার শহর হিউস্টন হতে মিনিয়াপোলিস এসেছিলেন চাকরির খোজে এবং এই শহরে তিনি প্রথমে ট্রাক ড্রাইভার এবং পরে একটি বারে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে কাজ করছিলেন (এই বারে খুনি ডেরেক শভিন এক সময় জর্জ ফ্লয়েডের সহকর্মি ছিলেন) সাম্প্রতিক সময়ে করোনার কারনে চাকরি ছিলোনা জর্জ ফ্লয়েডের।
লম্বায় ৬ফুট ৬ইন্চি উচ্চতার জর্জ ফ্লয়েড বাস্কেটবল এবং ফুটবল খেলোয়ার ছিলেন এক সময়, সে তার শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। আদালতের নথিপত্র অনুযায়ি জানা যায়, ২০০৭ সালে অস্ত্র সহো ডাকাতির কারনে জর্জ ফ্লয়েড অভিযুক্ত হন এবং ২০০৯ সালে ৫বছরের কারাভোগের সাজা পান।
সর্নশেষ, হেনেপিন কাউন্টি মেডিক্যাল এগজামিনারের অফিসের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ি এপ্রিলের ০৩ তারিখে জানা যায় জর্জ ফ্লয়েড করোনা আক্রান্ত ছিলেন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু অমানবিক, আমরা এই পৃথিবী হতে সকল অমানবিকতার অবসান চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪২